রমনিতা শবরকে ল্যাপটপ উপহার দিল প্রশাসন। নিজস্ব চিত্র।
‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচিতে শিবির করে এলাকা থেকেই মানুষজনকে সরকারি পরিষেবা দেওয়া শুরু হয়েছে। শনিবার বরাবাজার ব্লকের শবর বাসিন্দাদের জন্য একটি বর্ধিত ‘বিশেষ শিবিরের’ আয়োজন করল পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন। ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বরাবাজারের ৪০টি গ্রামে ৭২৮টি পরিবারে ২,৬৬৭জন শবর মানুষজন রয়েছেন। এ দিন গাড়ি ভাড়া করে বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় আড়াই হাজার জনকে বরাবাজারের জিলিং হাইস্কুল চত্বরের শিবিরটিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ছিলেন পুরুলিয়ার জেলাশাসক অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘সরকারি প্রকল্পের সুবিধা থেকে কেউ যাতে বঞ্চিত না হন, সেটা নিশ্চিত করাই জেলা প্রশাসনের মূল লক্ষ্য।’’ তিনি জানান, জেলার অন্য ব্লকেও এ ধরনের শিবির করা হবে।
‘পশ্চিমবঙ্গ খেড়িয়া শবর কল্যাণ সমিতি’র সভাপতি প্রশান্ত রক্ষিত বলেন, ‘‘শবরেরা ভিড় এড়িয়ে চলেন। পুরুলিয়ার বেশ কয়েকটি ব্লকে দেখা গিয়েছে, ‘দুয়ারে সরকার’ শিবির হলেও তাঁরা যাচ্ছিলেন না। ফলে, প্রাপ্য পরিষেবাও মিলছিল না। সমস্যার কথা ব্লক ও জেলা প্রশাসনকে জানিয়েছিলাম।’’ বরাবাজার ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিনের শিবির থেকে ২১০ জন পেয়েছেন জাতিগত শংসাপত্র। জন্মের শংসাপত্র না থাকায় স্কুলে ভর্তি হতে সমস্যা হচ্ছিল ২৫ জনের। তাঁদের সেই শংসাপত্র দেওয়া হয়েছে। ১৭০ জনের ‘স্বাস্থ্যসাথী’ কার্ডের আবেদন অনুমোদন করে দেওয়া হয়েছে ‘টোকেন’। নতুন আবেদন নেওয়া হয়েছে ১৩৬টি।
বরাবাজারের লটপদার অলিন্দ শবর প্রশাসনের ব্যবস্থা করে দেওয়া ছোট গাড়িতে চড়ে এসেছিলেন শিবিরে। তিনি বলেন, ‘‘দোকানে গেলে রেশন পেতাম না। জানা ছিল না, কী করতে হবে।’’ প্রশাসন জানিয়েছে, এ দিন ‘ফুড কুপন’ পেয়ে সমস্যার সাময়িক সুরাহা হয়েছে তাঁর মতো মোট ১৪ জনের। রেশন কার্ড তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচিতে নির্দিষ্ট পরিষেবার পাশাপাশি, আরও কিছু কাজ হয়েছে এ দিনের শিবির থেকে। নেওয়া হয়েছে একশো দিনের কাজের আবেদন। বিডিও (বরাবাজার) মাসুদ রাইহান বলেন, ‘‘শবর জনজাতির সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে ব্লকে এমন শিবিরের প্রয়োজন ছিল।’’
শিবিরটিতে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ দফতরের প্রতিমন্ত্রী সন্ধ্যারানি টুডু, বান্দোয়ানের বিধায়ক রাজীবলোচন সোরেন, অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ বিভাগের জেলা প্রকল্প আধিকারিক সূর্যকুমার জানা, এসডিও (মানবাজার) শুভজিৎ বসু, বরাবাজার পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি রামজীবন মাহাতো প্রমুখ। বরাবাজারে জেলা পুলিশের উদ্যোগে ‘লক্ষ্য’ নামে একটি তিরন্দাজি প্রশিক্ষণকেন্দ্র চলে। সেটির প্রশিক্ষক মতিলাল শবরকে কেন্দ্রটির ভবন তৈরির জন্য ‘গীতাঞ্জলি’ প্রকল্প থেকে বরাদ্দের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সরঞ্জামের জন্য অনুদান দেওয়ার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।
শিবিরের মঞ্চ থেকে শবর খেড়িয়া জনজাতির প্রথম মহিলা স্নাতক রমনিতা শবরকে ল্যাপটপ উপহার দিয়েছে প্রশাসন। সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে আরও ছ’জন কৃতী শবর ছাত্রছাত্রীকে।
রমনিতা বলেন, ‘‘আগামী দিনে শবর সমাজের প্রত্যেকেই যাতে নিজের প্রাপ্য বুঝে নিতে পারেন, তা নিশ্চিত করা দরকার। সে দিন আর শবরদের জন্য বিশেষ শিবির করার প্রয়োজন হবে না।’’