সমাজ মাধ্যমে সরব দু’দলে বিভক্ত নেটিজেনরা। নিজস্ব চিত্র।
বাঁকুড়া ভেঙে বিষ্ণুপুর জেলা তৈরি ঘোষণার পরেই সমাজ-মাধ্যম তুমুল তর্কের মঞ্চ হয়ে উঠেছে। কেউ বাস্তবাদীর মতো প্রশাসনিক কাজের ক্ষেত্রে এর সুবিধা তুলে ধরছেন তো, অমনি কেউ জেলার ঐতিহ্য ভাগ হওয়ার কথা তুলে ধরে অভিমান জানাচ্ছেন। কেউ কেউ আবার পরিচয়পত্রের তথ্য পাল্টাতে ফের হয়রানির আশঙ্কার কথা প্রকাশ করেছেন। জেলা ভাগ নিয়ে কারও বাঁধা গান আবার সমাজ-মাধ্যমে ভাইরাল রয়েছে। এই শোরগোলের মধ্যে নতুন জেলার নাম কী হলে ভাল হয়, তা নিয়ে নানা জনের পরামর্শ ভাসছে সমাজ-মাধ্যমে। নেটিজেনদের নানা মতে তোলপাড় সমাজ-মাধ্যমের ঠেক।
সোমবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যে নতুন সাতটি জেলা গড়ার কথা ঘোষণা করেন। সেখানে বাঁকুড়াকে ভেঙে বিষ্ণুপুর মহকুমা নিয়ে নতুন জেলার কথাও বলা হয়েছে। তা শোনার পর থেকেই জেলাবাসীর মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
বিষ্ণুপুর মহকুমার দূরবর্তী এলাকার মানুষেরা এর ফলে বাঁকুড়ার বদলে বিষ্ণুপুর জেলা সদরে তাঁদের যাতায়াতে সুবিধা হবে বলে দাবি করছেন। বিষ্ণুপুর মহকুমা লাগোয়া কিছু ব্লকের বাসিন্দাদের একাংশও একই কারণে দাবি করেন, তাঁদের এলাকাকে যেন নতুন জেলায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। অনেকে দাবি করেছেন, জেলা সদর হলে বিষ্ণুপুর শহরের পরিকাঠামোর উন্নতি হবে। পর্যটনের আরও বিকাশ হবে। গতি বাড়বে প্রশাসনিক কাজকর্মের। অনেকে আবার ঐতিহাসিক তথ্য তুলে ধরে বহু আগে বিষ্ণুপুর জেলা ছিল বলে দাবিও করছেন। অন্য দিকে, জেলা ভাগের খবরে হতাশাও ঝরে পড়তে দেখা যাচ্ছে অনেকের মধ্যেই। কেউ কেউ বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুর শহরকে ‘দুই বোন’ হিসেবে উল্লেখ করে আক্ষেপ করেছেন। কেউ কেউ আবার জেলা ভাগের পক্ষে, বিপক্ষে ভোটাভুটির ব্যবস্থা করেছেন সমাজ-মাধ্যমে। দক্ষিণ বাঁকুড়ার রাইপুরের এক শিল্পীর জেলা ভাগের বিরুদ্ধে বাঁধা গানের ভিডিয়ো ফেসবুকে ‘ভাইরাল’ হয়েছে।
শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজাও। বিরোধীদের অভিযোগ, জেলা ভাগ করলে শাসকদলের লুটপাটের পরিমাণ বাড়বে। এ দিন বাঁকুড়ার মাচানতলায় জেলা ভাগের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করে আরএসএস-এর ছাত্র সংগঠন এবিভিপি। সংগঠনের জেলা প্রমুখ সনুপ পাত্র বলেন, ‘‘জেলা ভাগের সিদ্ধান্ত আমরা মানছি না।’’ অন্য দিকে, টিএমসিপির বাঁকুড়া জেলা সভাপতি তীর্থঙ্কর কুণ্ডু বিরোধীদের অভিযোগ উড়িয়ে দাবি করেন, ‘‘আরও নিবিড় উন্নয়নের স্বার্থেই মুখ্যমন্ত্রী এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’’
এই বিতর্কের মধ্যেই সমান্তরাল ভাবে নতুন জেলার নামের নানা প্রস্তাবও ভেসে বেড়াচ্ছে। কেউ জানাচ্ছেন, মল্লরাজাদের রাজধানী ছিল বিষ্ণুপুর। তাই নতুন জেলার নাম হোক, ‘মল্লভূম’। আবার অনেকে দাবি করছেন, ‘বিষ্ণুপুর’ নামই বেশি পরিচিত। তাই নতুন জেলার নাম হোক— বিষ্ণুপুর।
আধারকার্ড-সহ নানা পরিচয়পত্র করাতে গিয়ে ভোগান্তির শিকার হওয়া বিষ্ণুপুর মহকুমার অনেকে জেলা ভাগ হলে ফের সরকারি পরিচয়পত্রের তথ্য বদলানোর জন্য দুর্ভোগে পড়তে হবে বলে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন। যদিও জেলা প্রশাসনের এক কর্তার দাবি, “মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করলেও নতুন জেলা তৈরির কোনও নির্দেশিকা আসেনি।’’ তিনি জানান, নতুন জেলা হলে ধাপে ধাপে সেই জেলার বাসিন্দারা নিজেরাই পরিচয়পত্র নবীকরণ করিয়ে নেন। সেটা খুব দ্রুত করাতে হবে, এমনটা নয়। এক্ষেত্রে ২০১৭ সালে নতুন জেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করা ঝাড়গ্রাম জেলার কথা টেনে তিনি বলেন, “ঝাড়গ্রাম নতুন জেলা হলেও এখনও সেখানকার বহু স্কুলে পুরনো জেলা পশ্চিম মেদিনীপুর হিসেবেই ঠিকানা রয়েছে। রাস্তার পাশে ফলকে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলারই উল্লেখ রয়েছে। বহু মানুষের পরিচয়পত্রে এখনও পুরনো জেলার নামই রয়েছে।”