পাতপেড়ে: মল্লারপুরে ফোঁটা। শেষ হলে একসঙ্গে খাওয়া। নিজস্ব চিত্র
সারা বছর অন্য দিন ট্রেনে সাহায্য চেয়ে দিন কাটে। কেউ বা হোমের নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে দিন কাটায়। কেউ বা সরকারি কাজে পরিষেবা দিতে ব্যস্ত থাকেন। ওদের কেউ বৃহন্নলা, কেউ বা হোমের আবাসিক। কেউ বা মহিলা পুলিশের কাজে ব্যস্ত। এমনই ভিন্ন পেশার সঙ্গে যুক্ত মহিলাদের একত্রিত করে চারটি হোমের আবাসিকদের নিয়ে ভাইফোঁটার অনুষ্ঠান করল মল্লারপুর শ্রীরামকৃষ্ণ সত্যানন্দ আশ্রম। ছিলেন রামপুরহাট মহকুমাশাসক থেকে রামপুরহাট মহকুমা পুলিশ আধিকারিক, বিভিন্ন রামকৃষ্ণ আশ্রমের মহারাজ-সহ অন্যান্য সংস্থার আধিকারিক এবং কর্মকর্তারা।
এ দিন সকাল থেকেই আশ্রম প্রাঙ্গন ছিল উৎসবের মেজাজে। ময়ূরেশ্বর থানার কুণ্ডলা সত্যানন্দ বয়েজ হোমের ২৯জন আবাসিক, মল্লারপুর কলাণ আশ্রমের ৩৮জন আবাসিক, রামপুরহাট পুষ্পরাগ নিকেতনের ১৩জন আবাসিক, রামপুরহাট স্প্যাসটিক অ্যান্ড হ্যান্ডিক্যাপ্ট সোসাইটির ১০ জন আবাসিক আশ্রমের দোতলার হল ঘরে ভাইফোঁটা ঘিরে অনুষ্ঠানে ছিলেন। মল্লারপুর টুরকু হাঁসদা লপসা হেমব্রম কলেজের অধ্যক্ষ অমিত চক্রবর্তী-সহ আরও আমন্ত্রিত বিশিষ্ট জনেরা সেই অনুষ্ঠানের সাক্ষী থাকলেন।
রামপুরহাট সুকান্ত পল্লির বাসিন্দা বৃহন্নলাদের মধ্যে রানি, অঙ্গুরী দেবীরা জানালেন, এই প্রথম ভাইফোঁটা ঘিরে এমন অনুষ্ঠানে থাকতে পারে আমরা খুব খুশি। তাঁদের কথায়, বছরের অন্যান্য দিন মানুষের কাছ থেকে সাহায্য চেয়ে আমাদের দিন কাটে। কিন্তু এমন অনুষ্ঠানে এসে অনাথ, দুঃস্থ, মানসিক দিক থেকে প্রতিবন্ধীদের ফোঁটা দিতে পেরে মধুর একটা সম্পর্কে আবদ্ধ হলাম।
আবার আসফিনা খাতুন ও পারভিন খাতুন দুজনেই পেশায় মহিলা পুলিশ কর্মী। তাঁরাও তাদের কাজের মধ্যে থেকেও হোমে থাকা দুঃস্থ, শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধীদের এই প্রথম ফোঁটা দিতে পেরে খুশি। তাঁরা জানালেন, ‘‘এখানে না আসলে একটা অভিজ্ঞতা থেকে বঞ্চিত হতাম।’’ মল্লারপুর শ্রীরামকৃষ্ণ সত্যানন্দ আশ্রমের সভাপতি স্বামী সারদাত্মানন্দ মহারাজ বলেন, ‘‘ভাইফোঁটা তো বাঙালির চিরাচরিত একটি উৎসব। কিন্তু এই উৎসবকে ঘিরে আশ্রমের পক্ষ থেকে প্রতিবছর একটি অন্য ভাবনা নিয়ে ভাইফোঁটা উৎসব পালিত হয়। এবং উৎসব ঘিরে সকলকে একত্রিত করে সামাজিক মেলবন্ধন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।’’
আশ্রমের সম্পাদক সুকান্ত মণ্ডল বলেন, ‘‘এবছর ভাইঁফোঁটার উৎসবে চারটি হোমের ৮৬ জন আবাসিকের ফোঁটার ব্যবস্থা করা হয়। প্রত্যেক ভাইবোনকে নতুন জামাকাপড় আশ্রমের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে।’’
এমন অনুষ্ঠানে থাকতে পারে রামপুরহাট পুষ্পরাগ নিকেতনের আবাসিক অর্পিতা ভকত, মেরি হেমব্রম, আসরিনা খাতুনরা যেমন আপ্লুত তেমনি রামপুরহাট স্প্যাসটিক সোসাইটির আবাসিক কৃষ্ণেন্দু সাহা, কুণ্ডলা সত্যানন্দ বয়েজ হোমের সুমন মজুমদার, গোপাল মুর্মুরাও আনন্দিত।