বাঁকুড়া মেডিক্যাল

বারণ, তবু অবাধেই চলে ধূমপান

হাসপাতাল চত্বরে ধূমপান করা ও মাদক দ্রব্য বিক্রি বন্ধ করাই কেবল নয়, রোগীর আত্মীয়েরা তো বটেই, যাতে ডাক্তারাও ধূমপান থেকে বিরত থাকেন, তার জন্য হাসপাতালের ভিতরে অ্যাশট্রে, লাইটার রাখাও নিষিদ্ধ করেছে স্বাস্থ্য দফতর।

Advertisement

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০১৭ ০৮:১০
Share:

হাসপাতাল চত্বরে। নিজস্ব চিত্র

বাঁকুড়া মেডিক্যালের জরুরি বিভাগের সামনে বসে বিড়িতে সুখটান দিচ্ছিলেন এক রোগীর আত্মীয়। হঠাৎ সেখানে পুলিশ ও স্বাস্থ্য দফতরের কর্মীদের নিয়ে হাজির মহকুমাশাসক (বাঁকুড়া সদর) অসীমকুমার বালা। হাতেনাতে ধরা পড়ে গিয়ে ওই ব্যক্তি তাঁদের কাছে কড়া ধমক খেলেন। শুধু তাই নয়, গুনে গুনে ২০০ টাকা জরিমানাও দিতে হল তাঁকে।

Advertisement

চলতি বছরের ২০ জানুয়ারির পড়ন্ত দুপুরে এমনই ঘটনার সাক্ষী ছিলেন মেডিক্যাল চত্বরে উপস্থিত বহু রোগীর আত্মীয় ও হাসপাতাল কর্মীরা। সে বার শহরে প্রকশ্যে ধূমপান ও নেশাসামগ্রী বিক্রির বিরুদ্ধে অভিযানে নেমেছিল প্রশাসন। মহকুমাশাসকের অভিযানের জেরে হাসপাতাল সংলগ্ন গুমটিগুলিতেও বিড়ি, সিগারেট, পানমশলা-সহ বিভিন্ন নেশার সামগ্রী বিক্রি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু অভিযানের ধারাবাহিকতা না থাকায় সেই পুরনো ছবিই ফিরে এসেছে।

বাঁকুড়া মেডিক্যালের বহির্বিভাগ, স্ত্রী ও প্রসূতি বিভাগ, ব্লাডব্যাঙ্ক, জরুরি বিভাগের সামনে ফের লোকজনকে প্রকাশ্যে বিড়ি, সিগারেট টানতে দেখা যাচ্ছে। সেই ধোঁয়ার মধ্যেই রোগীদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। অনেক জায়গায় শিশু ও মহিলাদের পাশেও ধূমপান করতে বাধছে না তাঁদের। তাই প্রশাসনের সেই নজরদারি কোথায় গেল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই। যদিও মহকুমাশাসকের দাবি, ‘‘আমরা মাঝে মধ্যেই নজরদারি চালাচ্ছি।’’

Advertisement

এরই মাঝে হাসপাতাল ভবন ও চত্বরকে ধূমপানমুক্ত বা ‘নো স্মোকিং জোন’ গড়তে আরও কড়া নির্দেশিকা জারি করেছে স্বাস্থ্য ভবন। হাসপাতাল চত্বরে ধূমপান করা ও মাদক দ্রব্য বিক্রি বন্ধ করাই কেবল নয়, রোগীর আত্মীয়েরা তো বটেই, যাতে ডাক্তারাও ধূমপান থেকে বিরত থাকেন, তার জন্য হাসপাতালের ভিতরে অ্যাশট্রে, লাইটার রাখাও নিষিদ্ধ করেছে স্বাস্থ্য দফতর।

ঘটনা হল, ২০০৩ সাল থেকেই স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে ধূমপান নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে সেই আইন যে মানা হচ্ছে না, তা এক কথায় মেনে নিচ্ছেন স্বাস্থ্য কর্তাদের একটা বড় অংশই। তাই প্রশ্ন উঠছে, নতুন করে স্বাস্থ্য ভবন হাসপাতালে ধূমপান রুখতে কড়া নির্দেশ জারি করলেও তা আদৌ বাস্তবায়িত হবে কি না, তা নিয়েই। এই পরিস্থিতিতে হাসপাতালের ডাক্তার ও কর্মীরা অন্তত যাতে সচেতন হন, তা নিয়ে সচেষ্ট হয়েছেন বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ।

মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ পার্থপ্রতিম প্রধানের কথায়, “দৈনিক অন্তত রোগীদের হাজার পাঁচেক আত্মীয় হাসপাতাল চত্বরে আসেন। তাঁদের সবাইকে নজরে রাখা মুশকিল। তবে হাসপাতালের ডাক্তার ও কর্মীরা যদি সচেতন হন, তাহলে সমস্যা অনেকটাই মিটবে।” তিনি জানাচ্ছেন, ধূমপানমুক্ত হাসপাতাল ও হাসপাতাল চত্বর গড়তে বাঁকুড়া মেডিক্যালের ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীদের হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপে বারবার সচেতন করা হচ্ছে। এ ছাড়াও ব্লাড ব্যাঙ্ক, আইসিসিইউ-এর মতো হাসপাতালের কিছু বিশেষ ইউনিটে ‘স্মোক ডিটেকটর মেশিন’ বসানো হচ্ছে। হাসপাতাল চত্বরে যাতে প্রকাশ্যে কেউ ধূমপান না করেন, হাসপাতালের নিরাপত্তারক্ষীদেরও সেই দিকটিতে নজর রাখতে বলা হয়েছে।

বাঁকুড়া জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রসূনকুমার দাস বলেন, “স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির উপর নজর রাখতে প্রতি ব্লকে আমাদের বিশেষ দল রয়েছে। তাঁরা নিয়মিত আমাদের রিপোর্ট দেন। স্বাস্থ্য ভবনের নির্দেশিকা আসার পরে সব ব্লকের নজরদারি দলকেই বিষয়টি নিয়ে সচেতন করেছি।” প্রসূনকুমারবাবুর মতে, চিকিৎসক, রোগীর আত্মীয় ও সাধারণ মানুষের সচেতনতাই হাসপাতালকে ধূমপানমুক্ত করতে পারে।

নির্দেশিকা

সব স্বাস্থ্যকেন্দ্রই ‘নো স্মোকিং জোন’।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র চত্বরে ধূমপান ও তামাক ব্যবহার নিষিদ্ধ বলে সাইনবোর্ড লাগানো।

নিয়ম ভাঙলে ২০০ টাকা জরিমানা।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র চত্বর ও লাগোয়া জায়গায় তামাক বিক্রি বন্ধ।

স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভিতরে অ্যাশট্রে, লাইটার নিষিদ্ধ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement