পুজোর মুখেও ফাঁকা দোকান। —নিজস্ব চিত্র।
অনলাইনে হাল ফ্যাশনের জিনস দেখে দোকানে খোঁজ করতে এসেছিলেন। তা নেই জেনে, ‘সব মলেই তো রয়েছে, আপনারা রাখেন না কেন’, শুনিয়ে গেলেন যুবক। অভিজ্ঞতার কথা শোনাচ্ছিলেন রঘুনাথপুরের এক পোশাক বিপণির মালিক অজিত মাজি। তাঁর কথায়, ”অনলাইন আর শপিং মল, এদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পেরে ওঠা যাচ্ছে না। ব্যবসাই না লাটে ওঠে।”
অনলাইনে লোভনীয় ছাড়ে কেনাকাটার সুযোগ আর অন্য দিকে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত শপিং মলে যাওয়ার প্রবণতা, সাঁড়াশি আক্রমণে কার্যত ধুঁকছে ছোট থেকে মাঝারি পোশাকের দোকানগুলি। এর সঙ্গে জুড়েছে লাগোয়া জেলা বা রাজ্যের বড় শহরে গিয়ে পুজোর বাজার করার ঝোঁকও। সব মিলিয়ে পুরুলিয়া হোক বা বাঁকুড়া, মফস্সল হোক বা শহরের ছোট-মাঝারি দোকান, সর্বত্র পুজোর মুখেও ব্যবসা তেমন না জমার আক্ষেপ।
রঘুনাথপুর মহকুমা লাগোয়া আসানসোল শিল্পাঞ্চল। সহজে যাতায়াতের সুযোগ থাকায়
ক্রেতাদের বড় অংশ ছুটছেন আসানসোলে। তাঁদের মতে, নামী সংস্থার অসংখ্য জামাকাপড়ের দোকান থেকে শপিং মলের ছড়াছড়ি সেখানে। এক ছাদের তলায় মিলছে মহিলা, পুরুষ থেকে ছোটদের জামাকাপড়ের প্রচুর সম্ভার। একই ছবি ঝালদা মহকুমাতেও। লাগোয়া রাঁচীতে গিয়ে পুজোর কেনাকাটা সারছেন অনেকে। ঝালদা শহরের বাসিন্দা অঙ্কিত সাহুর কথায়, ‘‘নামী ব্র্যান্ডের জামাকাপড় কেনার জন্য রাঁচী আদর্শ। দামও নাগালের মধ্যে। কয়েক বছর ধরে সপরিবার রাঁচী থেকে কেনাকাটা করছি।” একই কারণে লাগোয়া দুর্গাপুরে বাঁকুড়ার বড়জোড়া ও বর্ধমান শহরের শপিং মলগুলিতে ছুটছেন পাত্রসায়রের অনেকে।
সংশ্লিষ্ট জেলাবাসীর অনেকের গন্তব্য পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া শহরও। গত কয়েক বছরে দুই সদর শহরে শপিং মলের সংখ্যা বেড়েছে। পুরুলিয়া শহরের এক বাসিন্দার কথায়, ”গরমে ভিড়ে ঠাসাঠাসি বাজারে অনেক দোকানে না ঘুরে এসির সুবিধা থাকা শপিং মলে কেনাকাটি অনেক সুবিধার।” শহরের দেশবন্ধু রোডের একটি শপিং মলের কর্ণধার কুশল কাটারুকা বলেন, ”এখন গ্রামাঞ্চলের লোকজনও মলে আসছেন। সকলের আর্থিক অবস্থা বুঝে মাঝারি দামের জামাকাপড়ই বেশি রাখা হচ্ছে।” বাঁকুড়া শহরের এক শপিং মলের কর্মকর্তাও জানান, পুজোর মাসখানেক আগে থেকে ভিড় বেড়েছে। সন্ধ্যার পরে ভিড় সামলানো মুশকিল হচ্ছে। কেনাকাটাকে আকর্ষক করতে নানা ‘অফার’-ও দেওয়া হচ্ছে।
অনলাইনে আবার কেনাকাটার ঝোঁক বেশি কমবয়সিদের। রঘুনাথপুরের নপাড়া গ্রামের বাসিন্দা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী অগ্নিশিখা সুপকারের কথায়, ”পুজোর আগে থেকেই অনলাইনে নামী ব্র্যান্ডের হাল ফ্যাশনের জামাকাপড়ে ভাল ছাড় মিলছে। ঘুরে ঘুরে তাই কেনাকাটা করা হয় না। এমন ছাড় অফলাইনে পাওয়া যাবে না।” বাঁকুড়ার বড়জোড়ার কলেজ পড়ুয়া সৌরভ বাগদীরও দাবি, অনলাইনে নানা ব্র্যান্ডের পোশাক অনেক কম দামে মেলে। দোকানে তা দেওয়া সম্ভব নয়। পাত্রসায়র বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক তথা পোশাক বিক্রেতা বলরাম ভট্টাচার্যের তবে দাবি, “অনলাইনে সব সময়ে যে দাম হিসাবে ভাল জিনিস মেলে, এমন নয়। তবে মানুষ তা বুঝলে তো!”
পুজোর মুখেও দোকানে ক্রেতাদের কম আনাগোনায় হতাশ ঝালদা, পুরুলিয়া শহরের কাপড়ের দোকানের মালিক দীনেশ সিংঘি বা অশোক সারাওগিরা বলেন, ”পুজোর জন্য যত জিনিস তুলেছিলাম, তার অনেকটা এখনও পড়ে। এমন চললে কত দিন ব্যবসা টিকবে, সন্দেহ আছে।” বড়জোড়ার এক পোশাক বিক্রেতা নিতাই মিতও জানান, গত তিন বছর আগেও যা বিক্রি হত, তার ষাট শতাংশ কমেছে। মফস্সল ও গ্রামের মানুষও আজকাল অনলাইনে কেনাকাটা করছেন, মলে যাচ্ছেন। শপিং মলকে দুষে বিষ্ণুপুর শহরের চকবাজারের পোশাক শিবশঙ্কর চন্দ্রের আক্ষেপ, “ছোট দোকানগুলিকে শপিং মল গিলে খাচ্ছে। মহাজনদের ধার মেটানো মুশকিল হচ্ছে। মানুষ ছোট দোকানের দিকে না তাকালে সেগুলি
বাঁচবে কী ভাবে!”