বৃষ্টিতে ৮ নম্বর ওয়ার্ডে ভেঙে পড়া বাড়ি।
টানা বৃষ্টিতে বেশ কয়েকটি মাটির বাড়ি পড়ে গিয়েছে সাঁইথিয়া এবং মহম্মদবাজার এলাকায়। সাঁইথিয়ায় মাটির বাড়ি চাপা পড়ে গুরুতর জখম হয়েছেন এক প্রৌঢ়া। তাঁকে উদ্ধার করে সাঁইথিয়া গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শহর ও গ্রামগঞ্জের সমস্ত নীচু এলাকা জলমগ্ন। পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে প্রশাসনের দাবি।
স্থানীয় সূত্রের খবর, গত দু’দিনের টানা ভারী বৃষ্টিতে জনজীবন অনেকটাই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সাঁইথিয়া শহরের ৮টি ওয়ার্ড –সহ (১, ২, ৬, ৭, ১০, ১৪, ১৫, ১৬) প্রায় সমস্ত ওয়ার্ডের নীচু এলাকাগুলিতে জল জমে গিয়েছে। ওয়ার্ডে সে ভাবে কোথাও জল না জমলেও ৮ নম্বর ওয়ার্ডে ৫টি মাটির বাড়ি পড়ে গিয়েছে। এই ওয়ার্ডেরই নেতাজি পল্লির (পূর্ব) বাসিন্দা সন্ধ্যা দাস (৫৬) বাড়ির মাটির দেওয়াল চাপা পড়ে গুরুতর আহত হয়েছেন। তাঁর ছেলে, পেশায় রাজমিস্ত্রি বুবুল দাস বলেন, ‘‘মা ও আমি ঘরে ঘুমিয়ে ছিলাম। ভোর সাড়ে ৪টে নাগাদ ঘরটা হুড়মুড়িয়ে আমাদের উপর ভেঙে পড়ে। আমি কোনও রকমে বেরিয়ে গেলেও মা চাপা পড়ে যান।’’ পরে স্থানীয় লোক ওই মহিলাকে উদ্ধার করেন। ঘটনাস্থলে যান স্থানীয় কাউন্সিলর গুপী চক্রবর্তীও। গুপীবাবু বলেন, ‘‘আমাদের ওয়ার্ডে মোট ৫টি মাটির বাড়ি পড়েছে। সন্ধ্যা দাস নামে একজন বিধবা মহিলা দেওয়াল চাপা পড়েন। তাঁকে উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’’
সাঁইথিয়ার ৬ নম্বর ওয়ার্ডে আংড়া সাংড়া পুকুর সংলগ্ন পাড়ায় জলমগ্ন রাস্তা।
এ দিকে, শহরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডে চারটি মাটির বাড়ি ভেঙে পড়েছে। বিলগাবা পাড়া-সহ বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন। এই পাড়ার ৫০টি মতো পরিবার কার্যত গত বৃহস্পতিবার থেকে জলবন্দি হয়ে আছেন। ওই পাড়ার বাসিন্দা শ্যামল রুজ, গোপাল দেবনাথ, সাবিত্র পাত্ররা বলেন, ‘‘আমরা কার্যত গত দু’রাত থেকে জলবন্দি ভাবে দিন কাটাচ্ছি। জানি না কখন আকাশ ঠিক হবে।’’ ওয়ার্ড কাউন্সিলর শান্তনু রায় জানান, শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডের জল ৭ নম্বর ওয়ার্ড দিয়েই নিকাশি হয়। তাই এই ওয়ার্ডের সমস্যা অন্যান্য ওয়ার্ড অপেক্ষা বেশি। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়েছে বলে তাঁর দাবি। অন্য দিকে, ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে গৌতম দত্ত নামে এক বাসিন্দার একটি মাটির বাড়ি ভেঙে পড়েছে।
জল জমে একই রকম ভোগান্তির শিকার হয়েছেন ১, ২, ৫, ৬, ১০, ১৪, ১৫-সহ শহরে সমস্ত নীচু এলাকার মানুষও। পুরপ্রধান বিপ্লব দত্ত বলেন, ‘‘গত দু’দিন ধরে বিরামহীন অতিরিক্ত ভারী বৃষ্টির ফলে শহরের নীচু এলাকাগুলিতে জল জমেছে। বেশ কয়েকটি মাটির বাড়ি পড়ে গেছে। মাটির দেওয়াল চাপা পড়ে এক মাঝবয়সি মহিলা আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে সমস্ত রকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’’ ঠিক কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা অবশ্য জানা যায়নি।
সাঁইথিয়ার বিডিও অতনুকুমার ঝুড়ি এবং মহম্মদবাজারের বিডিও সুমন বিশ্বাস দাবি করেন, ‘‘বৃষ্টির অনুপাতে এখনও তেমন ক্ষয়ক্ষতির খবর নেই। এখনও পর্যন্ত দু’চারটি করে মাটির চালা বাড়ি পড়েছে বলে খবর পেয়েছি। তবে, কোথাও হতাহতের কোনও খবর নেই। পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া এবং পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হচ্ছে।’’
—নিজস্ব চিত্র।