তারাপীঠ মন্দিরে ভিড়। রবিবার। নিজস্ব চিত্র
দু’বছর করোনা অতিমারির কারণে উৎসব আনন্দ সব কিছুতেই ছেদ পড়েছিল। কিন্তু এ বছর পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হতেই আবারও উৎসব আনন্দে আগের মতো শামিল হয়েছেন সাধারণ মানুষ। ইংরেজি নতুন বছরের প্রথম দিন কোথাও পুজো দিতে লম্বা ভিড় লক্ষ্য করে গেল, কোথাও আবার নাচ, গান, আনন্দ হৈ-হুল্লোড়ে মেতে উঠতে দেখা গেল পর্যটকদের। এলাকার হোটেল, লজ, হোমস্টেগুলিতে জায়গা মেলা ভার। বর্ষ শেষ ও নতুন বছরের সন্ধিক্ষণে জেলার দুই পর্যটনকেন্দ্র জনজোয়ারে ভাসল। দু’বছর পরে আবার পর্যটকের এই ভিড়ে চওড়া হাসি হোটেল সহ অন্য ব্যবসায়ীদের মুখেও।
বছর শেষেই করোনার ভ্রূকুটিতে অশনি সঙ্কেত দেখলেও সরকারি বিধি-নিষেধ না থাকায় নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে জেলার পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে ভিড় জমিয়েছিলেন দূর দূরান্ত থেকে আসা পর্যটকেরা। ইংরেজি হোক বা বাংলা, বছরের প্রথম দিন অনেকেই মন্দিরে পুজো দেন। এদিন সকাল থেকেই তারাপীঠ মন্দিরে ভিড় জমিয়েছিলেন দূর দূরান্ত থেকে আসা পুণ্যার্থীরা। বাংলা নববর্ষের দিন অনেকে হালখাতা পুজো করেন। এদিনও কয়েক জন ব্যবসায়ীকে হালখাতা পুজো করাতে দেখা যায়। তারাপীঠ মন্দির কমিটির সভাপতি তারাময় মুখোপাধ্যায় বলেন, “নতুন বছর উপলক্ষে ৬০-৭০ হাজার মানুষের সমাগম হয়েছিল রবিবার। পুলিশ প্রশাসনের পাশাপাশি মন্দির কমিটির তরফেও ভক্তরা যাতে বিনা বাধায় পুজো দিতে ও মায়ের দর্শন করতে পারেন তার ব্যবস্থা করা হয়েছিল।”
পৌষ মাসে পৌষকালী দর্শনেরও প্রথা রয়েছে, সেই উপলক্ষেও এদিন বহু মানুষ ভিড় করেছিলেন তারাপীঠে। একই ভাবে বছরের প্রথম দিন উপলক্ষে সকাল থেকে পুজো দিতে ভক্তদের লম্বা লাইন দেখা যায় কঙ্কালীতলাতেও। সোনাঝুরি, খোয়াই, কোপাই থেকে শুরু করে বিশ্বভারতীর রবীন্দ্রভবন এবং শান্তিনিকেতনের অন্য দর্শনীয় স্থানে ভিড় হয়। বছরভর কোনও না কোনও উৎসব অনুষ্ঠান থাকায় বোলপুর শান্তিনিকেতনে এমনিতেই ভিড় থাকে। কিন্তু বর্ষ বিদায় এবং বছরের প্রথম দিন শনি ও রবিবার হওয়ায় ভিড় বেড়েছিল অনেকটা। পর্যটকদের ভিড়ে শ্যামবাটি থেকে সোনাঝুরি যাওয়ার রাস্তায় দীর্ঘক্ষণ যানজট ছিল। যানজট মুক্ত করতে পুলিশকে হিমশিম খেতে হয়। শ্রীরামপুর থেকে আসা পর্যটক মৌসুমি মজুমদার বলেন, “করোনা সংক্রমণের কারণে গত বছর আসা হয়নি কিন্তু এ বছর পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকায় সপরিবারে শান্তিনিকেতন ঘুরতে এসেছি।” হুগলি থেকে আসা পর্যটক সুপর্ণা দত্ত, কলকাতা থেকে আসা নন্দিনী মুখোপাধ্যায়রা বলেন, “নতুন বছরে আমরা বেড়াতে যাই, এ বার শান্তিনিকেতনে এসেছি। তবে ভাবতে পারিনি এ বার এত সংখ্যক মানুষের ভিড় হবে।”
যদিও আবারও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে শুরু হয়েছে কোভিডের বাড়বাড়ন্ত। কিন্তু তা সত্ত্বেও বহু মানুষ এদিন মাস্ক ছাড়াই হই-হুল্লোড়ে মেতে উঠলেন। যা থেকে অনেকে আবারও কোভিড বেড়ে ওঠার আশঙ্কা করতে শুরু করেছেন।