সরকারের অনুমোদিত সংস্থার তৈরি করা শৌচালয় ব্যবহারের অনুপযুক্ত বলেও অনেকের অভিযোগ। বিষ্ণুপুর ব্লকের হাতি উপদ্রুত তিরবঙ্ক গ্রামের অনেকে তাই মাঠেঘাটেই যান। নিজস্ব চিত্র
আবেদন করেও গাঁটের কড়ি খরচ করে শৌচালয় গড়তে এগিয়ে আসছেন না অনেকেই। তাতে ধাক্কা খাচ্ছে মিশন নির্মল বাংলা প্রকল্পের কাজ। প্রকল্পের কাজের গতিও কমেছে বলে মানছেন বাঁকুড়ার বহু পঞ্চায়েত প্রধান।
জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, চলতি বছরের জানুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত বাড়ি বাড়ি শৌচালয় গড়ার জন্য ৩০৭৭টি পরিবারকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। যার মধ্যে ১৭৯২টি শৌচালয় গড়া হয়েছে। সব চেয়ে বেশি ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে পাত্রসায়র ব্লকে (৭৫৮টি), তারপরেই রয়েছে সিমলাপাল (৪৬৪টি) ও তালড্যাংরা ব্লক (২৮১টি)। তবে প্রশাসন সূত্রের দাবি, শৌচালয় গড়ার জন্য ছাড়পত্র দেওয়া হলেও অনেক আবেদনকারীই কাজ শুরু করছেন না। যা নিয়ে চিন্তা শুরু হয়েছে।
কেন এমন পরিস্থিতি? জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “আগে নিয়ম ছিল উপভোক্তা ৯০০ টাকা জমা দেবেন, বাকি ১২ হাজার টাকা খরচ করে প্রশাসনই শৌচালয় তৈরি করেো দেবে। এখন সে নিয়ম পাল্টেছে। বর্তমানে উপভোক্তা নিজেই বাড়িতে শৌচালয় গড়ার কাজ শুরু করবেন। কাজ চলার মাঝে সরকার থেকে ছয় হাজার টাকা ও শেষ হওয়ার পরে বাকি ছয় হাজার টাকা উপভোক্তাকে দেওয়া হবে।”
এখানেই সমস্যা তৈরি হয়েছে বলে জানাচ্ছেন পঞ্চায়েত প্রধানেরা। তাঁদের কথায়, ‘‘যাঁরা বাড়িতে শৌচালয় গড়ার জন্য আবেদন করছেন, তাঁরা সবাই অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল। ফলে পকেট থেকে আগাম অত টাকা বের করতে চাইছেন না অনেকে।’’
ছাতনার ধবন পঞ্চায়েতের প্রধান মহাশ্বেতা মণ্ডলের করথায়, ‘‘শৌচালয় গড়তে চেয়ে আবেদন করেছিলেন অনেকে। পরে সেই আবেদনে ছাড়পত্র দেওয়া হলেও কাজ শুরু করছেন না উপভোক্তারা। আমরা কারণ জানতে চাইলে হাতে কাজ শুরু করার মতো টাকা নেই বলে জানাচ্ছেন তাঁরা।” ছাতনা ২ পঞ্চায়েতের উপপ্রধান সোমনাথ মুর্মুর কথায়, গরিব মানুষের পক্ষে আগাম টাকা খরচ করে বাড়িতে শৌচালয় গড়া সমস্যার। সামর্থ থাকলে সরকারি সাহায্য কেন চাইবেন, এমন মন্তব্যও করছেন অনেকে।
বড়জোড়ার ঘুটগোড়িয়া পঞ্চায়েতের প্রধান গণেশ মণ্ডলের অবশ্য অন্য অভিজ্ঞতা। তাঁর মতে, আগে সরকারি ভাবে শৌচালয় গড়ে দেওয়া হলেও অনেকেই তা ব্যবহার করছেন না। এখন যাঁদের প্রয়োজন তাঁরা আবেদন করে আগাম শৌচালয় বানিয়ে সরকারি টাকা পাচ্ছেন। তার ফলে শৌচালয়ের ব্যবহারও হচ্ছে। তিনি বলেন, “সম্প্রতি এলাকার প্রায় ১০ জনের শৌচালয় গড়ার আবেদন মঞ্জুর হয়েছে। প্রায় সবাই কাজ শুরু করেছেন। পকেটের টাকা খরচ করে গড়া শৌচালয় ব্যবহারেও মানুষের উৎসাহ বেশি।”
বাঁকুড়ার জেলা শাসক সিয়াদ এন বলেন, “জেলায় আবেদনের ভিত্তিতে শৌচালয় গড়া হচ্ছে। শৌচালয়হীন সমস্ত পরিবারে শৌচালয় গড়াই আমাদের লক্ষ্য।’’