Life Sentenced

দলীয় কর্মীকে পিটিয়ে খুনে তৃণমূল নেতাদের যাবজ্জীবন

সরকার পক্ষের আইনজীবী গুরুপদ ভট্টাচার্য জানান, ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ইউসুফ আলি শেখ অভিযোগ করেছিলেন, ২০১২ সালের ১ জানুয়ারি বিকেলে হরিণাশোলি গ্রামে ইন্দিরা আবাস প্রকল্পের কাজ নিয়ে ঝামেলা চলছিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

জয়পুর শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০২৪ ০৯:০৫
Share:

(বাঁ দিকে) গোলাম কুদ্দুস শেখ (৩০)। বিষনুপুর মহকুমা আদালত এ বুধবার যাবজ্জীবন সাজাপাওয়া আসামিরা (ডান দিকে)। ছবি: অভিজিৎ অধিকারী এবং শুভ্র মিত্র।

১২ বছর আগে দলেরই এক কর্মীকে পিটিয়ে খুনের ঘটনায় বাঁকুড়ার জয়পুর ব্লকের তৃণমূলের দুই পঞ্চায়েত সদস্য, অঞ্চল সভাপতি-সহ সাত তৃণমূল নেতা-কর্মীর যাবজ্জীবন সাজা হল। সেই সঙ্গে প্রত্যেকের ২৫ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও তিন মাস কারাদণ্ডের সাজা দেওয়া হয়েছে। জয়পুরের হরিণাশোলির তৃণমূল কর্মী গোলাম কুদ্দুস শেখ (৩২) খুনের ঘটনায় বুধবার বিষ্ণুপুর আদালত এই রায় দেয়।মঙ্গলবার অভিযুক্তদের দোষী সাব্যস্ত করেছিলেন বিষ্ণুপুর আদালতের অতিরিক্ত দায়রা বিচারক অনুরুদ্ধ মাইতি। এই রায়ে খুশি নিহতের পরিবার। গোলামের ভাই গনি শেখ বলেন, “আমার দাদাকে যারা নির্মম ভাবে খুন করেছিল তাদের এই শাস্তিই চেয়েছিলাম। ১২ বছর পরে হলেও আমরা এই রায়ে খুশি।” তবে সাজাপ্রাপ্তদের তরফে উচ্চ আদালতে যাওয়া হবে বলে আগেই জানানো হয়েছে।

Advertisement

সরকার পক্ষের আইনজীবী গুরুপদ ভট্টাচার্য জানান, ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ইউসুফ আলি শেখ অভিযোগ করেছিলেন, ২০১২ সালের ১ জানুয়ারি বিকেলে হরিণাশোলি গ্রামে ইন্দিরা আবাস প্রকল্পের কাজ নিয়ে ঝামেলা চলছিল। সেই সময় গোলাম কুদ্দুস শেখ নামে ওই তৃণমূল কর্মী ওই পথ দিয়ে যাওয়ার সময় আক্রান্ত হন। ৪০-৫০ জন দুষ্কৃতী লাঠি, টাঙ্গি, কুড়ুল নিয়ে তাঁকে এলোপাথাড়ি মারতে থাকে। গোলাম মাটিতে পড়ে গেলে পাথর দিয়ে তাঁর মাথা থেঁতলে দেওয়া হয়। উদ্ধার করে প্রথমে বিষ্ণুপুর হাসপাতালে, পরে বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। খুনের ঘটনায় ৪১ জনের নামে অভিযোগ দায়ের হয় জয়পুর থানায়। পরে বিভিন্ন সময় গ্রেফতার হয় ১৩ জন। দীর্ঘদিন ধরে চলা এই মামলায় মঙ্গলবার বিষ্ণুপুর আদালত সাত জনকে দোষী সাব্যস্ত করে এবং ছ’জনকে বেকসুর খালাস করে।

সাজাপ্রাপ্তেরা হল তৃণমূলের উত্তরবাড় পঞ্চায়েতের দুই সদস্য রাজন মণ্ডল ও লালমহম্মদ ভুঁইয়া, তৃণমূলের উত্তরবাড় অঞ্চল সভাপতি বাবর আলি কোটাল, অঞ্চল সহ-সভাপতি নবিয়াল মণ্ডল এবং তৃণমূল কর্মী সুকুর ভুঁইয়া, ইয়াসিন ভুঁইয়া, হোসেন মণ্ডল।

Advertisement

তবে তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছে দল। তৃণমূলের জয়পুর ব্লক সভাপতি কৌশিক বটব্যাল বলেন, “বিচার ব্যবস্থার প্রতি পূর্ণ আস্থা রয়েছে। ঘটনার সময়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা ছিল। একটি খুনের মামলায় ৪১ জনের নামে অভিযোগ হলেও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে ১৩ জনের নামে চার্জশিট দেওয়া হয়। পরে সেখান থেকেও ছ’জন বেকসুর খালাস পায়। এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আবেদন জানাচ্ছি।”

খুনের সময় তৃণমূলের জয়পুরের ব্লক সভাপতি ছিলেন স্বপন কোলে। তিনি বলেন, ‘‘১৯৯৮ সালে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কামারপুকুর থেকে যে ক’জন দলীয় কর্মী পশ্চিম মেদিনীপুরের চমকাইতলায় মোটরবাইকে পৌঁছে দিয়েছিলেন, তাঁদের অন্যতম ছিলেন গোলাম কুদ্দুস শেখ। অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে দলের নেতাদের হাতেই তিনি খুন হন, এটা বড় লজ্জার।’’

গোলামের দাদা ইউসুফ আলি শেখ বলেন, “আদালতের উপরে আমাদের ভরসা ছিলই। দোষীরা সাজা পাওয়ায় আমরা খুশি। তবে এখনও আমাদের যন্ত্রণা দিতে ছাড়েনি তৃণমূলের কিছু লোকজন। চাষবাস বন্ধ করে রেখেছে। এখনও এলাকার পরিস্থিতি ভাল নয়।’’

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বিষ্ণুপুর আদালতে দোষীদের যাবজ্জীবন সাজা ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে হরিণাশোলি এ দিন থমথমে হয়ে যায়।

তবে এসডিপিও (বিষ্ণুপুর) সুপ্রকাশ দাস বলেন , ‘‘হরিণাশোলি গ্রামের পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement