বিজ্ঞান মডেল প্রদর্শনীতে রাজ্যে প্রথম হয়ে জাপান যাওয়ার জন্য মনোনীত হয়েছিল সে। ৪ জুন থেকে ১০ জুন জাপানের সাকুরাতে এশিয়ার খুদে বিজ্ঞানীদের নিয়ে দেশের সেরা মডেল নিয়ে মত বিনিময় করার কথা। কিন্ত স্বল্প সময়ে কাগজপত্র জমা দেওয়া, পাসপোর্ট জোগাড় করা, ভিসা তৈরি না হওয়ার জন্য মাড়গ্রাম হাইস্কুলের ছাত্র শ্যামল দাসের জাপান যাওয়া আপাতত স্থগিত হয়ে গিয়েছে! অন্য দিকে মাধ্যমিকে স্কুলের সেরা নম্বর পেয়েছে। কিন্তু উচ্চ শিক্ষার খরচের কথা ভেবে সে দিশাহারা। উদ্বিগ্ন তার পরিবার।
শ্যামল এ বছর স্কুল থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় স্কুলের সেরা হয়েছে। তার প্রাপ্ত নম্বর ৬৪৪। বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশুনা করে তার ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছা। কিন্তু পরিবারের একমাত্র ছেলে শ্যামলের সে ইচ্ছা পূরণ কী করে করবেন পেশায় হস্তচালিত তাঁত শিল্পী গোপীনাথ দাস সেই চিন্তায় দিনরাত এক করে ফেলেছেন তিনি। গোপীনাথবাবু বলেন, ‘‘তিন দিনে দুটো রেশম কাপড়ের থান বুনে ৪০০ টাকা হয়। তিনজনের সংসার। সংসার চালিয়ে ছেলেটার উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্য পড়াতে হবে। কি করে যে কি করব সেটা বুঝতে পারছি না।’’
মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলপ্রকাশে দেরির জন্য এই স্বল্প সময়ে কাগজপত্র জমা দেওয়া, পাসপোর্ট জোগাড় করা, ভিসা তৈরি না হওয়ার জন্য শ্যামল তার জাপান যাত্রা স্থগিত হয়েছে বলে দাবি করছে। আগামী বার ডাক পাওয়ার আশায় আছে। তবুও শ্যামলের পারিবারিক অবস্থা এবং সেই সঙ্গে মাধ্যমিকের পর কি ভাবে উচ্চ শিক্ষা লাভ করবে সেটাই এখন তাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে। শ্যামলের মা এক চিলতে রান্নাশালার রান্না করে ছেলের পড়ার ঘরেই রেশমের থান বোনার জন্য তাঁত চালিয়ে স্বামীকে সাহায্য করেন। ‘‘সাহায্য না করলে যে অন্য একটি কাপড় বুনতে দেরি হবে। আর দেরি করলেই সংসারে টান’’, বলছিলেন শ্যামলের মা প্রভাতী দেবী। আপাতত স্কুলের শিক্ষকদের সাহায্য নেওয়ার জন্য বিজ্ঞান নিয়ে শ্যামল মাড়গ্রাম হাইস্কুলেই পড়তে চায়। শ্যামলের পরিবারের অবশ্য দাবি, ‘‘যদি ছেলেটার উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্য সাহায্য পাওয়া যেত তাহলে ছেলেটা আরও বাড়তি উৎসাহে ডাক্তারী পরীক্ষার প্রবেশিকার জন্য প্রস্তুতি নিতে পারবে।’’