ভাল দৌড়নোর কথা শুনে ছাত্রের পাশে দাঁড়াল স্কুল

ছেলেটি খেলাধুলো করে স্কুলের অনেকেই তা জানতেন। কিন্তু সে যে ভাল দৌড়বাজ জানা ছিল না কারোরই। সম্প্রতি বিভিন্ন সূত্রে সে কথা জানতে পেরে দৌড়বাজ পড়ুয়ার পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিল স্কুল। বোরো থানার বড়গড়িয়া হাইস্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির ওই পড়ুয়ার নাম সিমন্ত মুদি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মানবাজার শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৬ ০০:০০
Share:

সিমন্ত মুদি।— নিজস্ব চিত্র

ছেলেটি খেলাধুলো করে স্কুলের অনেকেই তা জানতেন। কিন্তু সে যে ভাল দৌড়বাজ জানা ছিল না কারোরই। সম্প্রতি বিভিন্ন সূত্রে সে কথা জানতে পেরে দৌড়বাজ পড়ুয়ার পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিল স্কুল। বোরো থানার বড়গড়িয়া হাইস্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির ওই পড়ুয়ার নাম সিমন্ত মুদি। বাড়ি ওই থানা এলাকারই কেন্দাজোড় গ্রামে।

Advertisement

পুরুলিয়া-বাঁকুড়া জেলার সীমানায় বড়গড়িয়া হাইস্কুল। স্কুলের প্রধান শিক্ষক ভাস্কর মাহাতো বলেন, ‘‘২০১৫ সালে সিমন্ত আমাদের স্কুলে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে। এখন ও দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ে। ২০১৭ এর মার্চে পরীক্ষা দেবে। খেলাধুলোর মাঠে ওকে কয়েকবার দেখেছি। সম্প্রতি জানতে পেরেছি ব্লক ও জেলার বিভিন্ন থানা এলাকায় ও ম্যারাথন রেসে দৌড়য়। সে কথা জেনেই পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’

স্কুলেরই শিক্ষক তথা মানবাজার টিচার্স কলোনির বাসিন্দা বিধানচন্দ্র মণ্ডল বলেন, ‘‘সিমন্তের বাড়ি থেকে আমাদের স্কুলের দূরত্ব প্রায় তিন কিলোমিটার। শুনেছি এতটা রাস্তা ও দৌড়েই যাতায়াত করে।’’ পরিবার সূত্রের খবর, মানবাজার ২ ব্লকের উদ্যোগে খেলো ইন্ডিয়াতে ১০ কিলোমিটার ম্যারাথন দৌড় প্রতিযোগিতায় ২৫ মিনিট সময় নিয়ে প্রথম হয়েছিল সিমন্ত। বছরখানেক আগে একটি সংস্থার উদ্যোগে ৪২ কিলোমিটার দৌড় প্রতিযোগিতায় তৃতীয় হয়েছিল। এ ছাড়া আরও কয়েক’টি ম্যারাথন দৌড়ে ওর দক্ষতা সবাইকে মুগ্ধ করেছে।

Advertisement

তফশিলি পরিবারের এই পড়ুয়া তার অসুস্থ মায়ের সঙ্গে থাকে। পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভাল নয়। তিন দাদা রয়েছেন। তবে তাঁরা আলাদা থাকেন। সিমন্তের কথায়, ‘‘মা এবং আমার খাবার দাদারাই জোগান।’’ চার মাস পরে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা। অথচ টাকার অভাবে সিমন্ত এখনও সব বই জোগাড় করতে পারেনি। তার দৌড়বার পোশাক এবং জুতো নেই। সিমন্ত জানিয়েছে, বন্ধুদের থেকে জুতো, পোশাক ধার করে দৌড়য়।

দৌড়ে সুখ্যাতির কথা জেনে স্কুল কর্তৃপক্ষ সিমন্তকে স্কুল ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় পাঠাতে চান। প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘‘পরিবারের টানাটানির কথা ও স্কুলকে আগে জানায়নি। পড়ার পাশাপাশি যাতে দৌড়ের অনুশীলন নিয়মিত চালিয়ে যেতে পারে সে দিকে লক্ষ্য রাখা হবে।’’ স্কুলের পক্ষ থেকে যাবতীয় সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

স্কুল ক্রীড়া সংস্থার জেলা সম্পাদক তথা পুরুলিয়া জেলা স্কুলের শিক্ষক নুরুদ্দিন হালদার বলেন, ‘‘আগামী ১৮-১৯ নভেম্বর মহকুমাস্তরের স্কুল ক্রীড়া প্রতিযোগিতা রয়েছে। ১৪ তারিখ নাম জমা দেওয়ার শেষ দিন। আমরা জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের অফিসের মাধ্যমে জেলার সব স্কুলকে ক্রীড়া প্রতিযোগিতার মেল পাঠিয়েছি।’’ সিমন্ত তাতে যোগ দিক, চান অনেকেই।

সিমন্তকে নিয়ে বড়গড়িয়া হাইস্কুল কর্তৃপক্ষ স্বপ্ন দেখতে শুরু করে দিয়েছেন। অতীতের দৌড়ের রেকর্ড দেখে তাঁদের আশা সিমন্ত স্কুলের মুখ উজ্বল করবেই। সবটুকু উজার করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে দ্বাদশ শ্রেণির এই ছাত্রও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement