জীবিকা বিপন্ন করে খনি হলে আন্দোলনের হুমকি

প্রাকৃতিক জঙ্গল কেটে খয়রাশোলে খোলামুখ কয়লাখনি গড়া চলবে না, জুলাই থেকে স্থানীয় আদিবাসীদের এমন আন্দোলনের পাশে শুধু আদিবাসীদের দুটি সংগঠন নয়, পাশে দাঁড়িয়েছে সেভ ডেমোক্রেসি ফোরামও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

খয়রাশোল শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০০:০১
Share:

সেভ ডেমোক্রেসি ফোরামের সভায়। ছবি: দয়াল সেনগুপ্ত

জঙ্গল কেটে, পরিবেশ ধ্বংস করে এবং আদিবাসীদের জীবন-জীবিকা বিপন্ন করে কোনও ভাবেই কয়লাখনি নয়। রবিবার খয়রাশোলে এসে ফের এমনই বার্তা দিল সেভ ডেমোক্রেসি ফোরাম।

Advertisement

প্রাকৃতিক জঙ্গল কেটে খয়রাশোলে খোলামুখ কয়লাখনি গড়া চলবে না, জুলাই থেকে স্থানীয় আদিবাসীদের এমন আন্দোলনের পাশে শুধু আদিবাসীদের দুটি সংগঠন নয়, পাশে দাঁড়িয়েছে সেভ ডেমোক্রেসি ফোরামও। রবিবার বিকেলে খয়রাশোলের গোষ্ঠমাঠে এই নিয়ে সভা হয়। উপস্থিত ছিলেন সেভ ডেমোক্রেসি ফোরামের চার সদস্যের প্রতিনিধি দল। ছিলেন সম্পাদক চঞ্চল চক্রবর্তী, সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায়, সদস্য দীপালী ভট্টাচার্য, সোমনাথ মুখোপাধ্যায়রা। ছিলেন আদাবাসী নেতা সুনীল সরেনও।

সেই সভা থেকেই ফোরামের সদস্যরা আদিবাসীদের বোঝালেন, ‘‘কোনও পেশিশক্তি বা ছলের কাছে মাথা না ঝুঁকিয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সঙ্ঘবদ্ধ থাকুন। আমরা পাশে আছি, থাকব।’’ প্রাক্তন বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আদিবাসীদের জঙ্গলের অধিকার জমির অধিকারকে না মেনে আইনবিরুদ্ধ ভাবে হতদরিদ্র গরিব মানুষগুলোকে বাস্তুচ্যুত করা যায় না।’’

Advertisement

সম্প্রতি খয়রাশোল ব্লকের গঙ্গারামচক মৌজায় পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগম খোলামুখ কয়লাখনি তৈরির জন্য ১০১ হেক্টর বনভূমি সাফাইয়ের কাজে হাত দিয়েছিল। প্রায় ৮০ শতাংশ গাছ কাটা হয়েও গিয়েছিল। তখনই সমস্যার সূত্রপাত। ‘কয়লাখনির জন্য বিস্তীর্ণ বনভূমি ধ্বংস করা হচ্ছে। এতে আঁচ পড়বে তাঁদের জীবন জীবিকায়’— এই আশঙ্কা প্রকাশ করে জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহে গাছ কাটায় বাধা দেন প্রস্তাবিত কয়লাখনি লাগোয়া দুটি গ্রাম বাস্তবপুর ও দেবগঞ্জের বাসিন্দারা। বিডিও-র কাছে প্রতিবাদ পত্রও দেন। তার পরেই সেভ ডেমোক্রেসিকে ফোরাম এই আন্দোলনের পাশে দাঁড়ায়। কলকাতায়ও বিষয়টি নিয়ে সরব হন ফোরামের সদস্যারা। রবিবার তাঁরা ফের খয়রাশোলের এসে সভা করলেন।

প্রশাসন অবশ্য দাবি করেছিল, যে গ্রামের আদিবাসীরা আন্দোলন করছেন, সেই বাস্তবপুর দেবগঞ্জ গ্রামগুলি কয়লা খনি এলাকার মধ্যে পড়ছে না। কিন্তু, আদিবাসীদের দাবি ছিল, যে ভাবে জঙ্গল কেটে কয়লাখনি তৈরির কাজ চলছে, তাতে ঘুরিয়ে তাঁদের উচ্ছেদের পরিকল্পনাই করা হয়েছে। কারণ, জঙ্গল না থাকলে জীবিকা থাকবে না। দু’দিন বাদে খনির বিস্ফোরণে ঘর ফেটে যাবে। তখন ভিটেমাটি হারাতে হবে। ব্যক্তিগত জমি অধিগ্রহণ করতে হচ্ছে না বলে পিডিসিএল প্রস্তাবিত কয়লাখনি ঘেঁষে থাকা লোকজনের কথা ভুলে যাচ্ছে বলেও অভিযোগ ওঠে। ফোরাম ও আদিবাসী সংগঠনগুলির অভিযোগ, এই বিষয়ে প্রশাসন কোনও সদর্থক ভূমিকা নেয়নি। ফোরামের আরও অভিযোগ, পিডিসিএল দায়িত্ব পেলেও বেসরকারি সংস্থাকে দায়িত্ব দিয়ে কাজ করাচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমের তরফে এই নিয়ে কোনও বক্তব্য মেলেনি।

অশোক গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘জঙ্গলই ওঁদের জীবন, জীবিকা। জঙ্গলই ওঁদের মা। পানীয় জল, চিকিৎসা, কোনও সুযোগই তো ওঁরা পান না। কেন পরিবেশ ধ্বংস করে আদিবাসীদের জীবন জীবিকা বিপন্ন করে কয়লাখনি হবে? ওঁদের জমি-জীবিকা রক্ষার লড়াইয়ে পাশে থাকবে ফোরাম।’’ অশোকবাবু মনে করান, ‘‘পরিবেশ রক্ষার্থে জঙ্গলকাটার আগে গণশুনানি করতে হয়, সেটা হয়েছিল কী?’’ সেভ ডেমোক্রেসি ফোরাম এ ভাবে তাঁদের আন্দোলনের পাশে দাঁড়ানোয় খুশি বাস্তবপুরের বাবুলাল মারান্ডি, মঙ্গল মার্ডি, সুমিত্রা মারান্ডি, দেবগঞ্জগ্রামের সোমনাথ হাঁসদা, সরস্বতী টুডুরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement