রাস্তা জুড়ে মিছিল। মপুরহাটে।
রোজভ্যালি-কাণ্ডে সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাপস পালের গ্রেফতারি এবং নোট বাতিলের প্রতিবাদে প্রধানমন্ত্রীকে নিশানা করে বুধবার রামপুরহাট থেকে বোলপুর, সিউড়ি থেকে সাঁইথিয়া— সর্বত্রই তেড়েফুঁড়ে নামতে দেখা গেল শাসকদলের কর্মী-সমর্থকদের। পথে নামা কর্মীদের শরীরি ভাষা ছিল আক্রমণাত্মক। তবে দিনের শেষে জেলার পুলিশ, প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, কোথাও কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
‘মোদী হটাও, দেশ বাঁচাও’ শ্লোগানে বোলপুরে বিক্ষোভ মিছিল বের করে শাসকদলের কর্মী, সমর্থকেরা। পা মেলান হাজার খানেক মানুষ। তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের নির্দেশে বুধবার দুপুরে শহরের ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে এবং বাজারে চলে বিক্ষোভ মিছিল। নেতৃত্বে ছিলেন দলের জেলা কমিটির সদস্য সত্যজিৎ চট্টোপাধ্যায়, সুদীপ্ত ঘোষ, দেবব্রত সরকাররা। শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডের পাশাপাশি শান্তিনিকেতন এবং শ্রীনিকেতন রাস্তায় ঘণ্টা দু’য়েক চলে বিক্ষোভ। নেতৃত্বের অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রাজনৈতিক উদ্দেশে তৃণমূলকে হেনস্থা করছে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নে জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল বলেন, “নোট বাতিল ৫০ দিন পরেও স্বাভাবিক অবস্থা ফেরাতে প্রধানমন্ত্রী ব্যর্থ হয়েছেন। কৃষক, খেটে খাওয়া মানুষ, ভিন্ রাজ্যে কর্মরত জেলার বাসিন্দাদের অবস্থা দিন কে দিন অসহ্য হচ্ছে।”
রামপুরহাট, নলহাটি, পাইকরেও মিছিল করে তৃণমূল। রামপুরহাট শহরের তৃণমূল কর্মীরা গাঁধী স্টেডিয়াম সংলগ্ন দলীয় কার্যালয় থেকে মিছিল করে রামপুরহাট ব্যাঙ্ক রোড হয়ে দেশবন্ধু রোড, শেষে দলীয় কার্যালয়ে যায়। ওই মিছিল থেকেও শ্লোগান ওঠে ‘মোদী হঠাও, দেশ বাঁচাও’। সাঁইথিয়া ব্লকের নানা জায়গা, সাঁইথিয়া পুর-এলাকাতেও তৃণমূলের তরফে বিক্ষোভ মিছিল হয়। সাঁইথিয়া ব্লক তৃণমূলের সভাপতি মহম্মদ সাবের আলি খান জানান, সাঁইথিয়া ছাড়াও আমোদপুর শহর, পাড়ুই, মসোড্ডায় বিক্ষোভ মিছিল হয়।
সকাল ১১টা নাগাদ সাঁইথিয়া ব্লক তৃণমূল সভাপতি ও যুব সভাপতি অরবিন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে হাজারেরও বেশি কর্মী সমর্থকের প্রতিবাদ মিছিল বের হয় সাঁইথিয়ার হাতোড়া অঞ্চলের মসোড্ডায়। একই দাবিতে আমোদপুর শহরে সাঁইথিয়া ব্লক সভাপতি সোমনাথ সাধু, সাঁইথিয়া ব্লকের অন্তর্গত লাভপুর বিধানসভার ছ’টি অঞ্চলের ব্লক সভাপতি প্রশান্ত সাধু ও যুব কার্যকরী সভাপতি সঞ্জীব মজুমদারের নেতৃত্বে হাজার দু’য়েকেরও বেশি কর্মী-সমর্থকের প্রতিবাদ মিছিল হয়। সাঁইথিয়া শহরের প্রতিবাদ মিছিলে ছিলেন তৃণমূল বিধায়ক নীলাবতী সাহা, ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর-সহ পৌরপ্রধান বিপ্লব দত্ত, তৃণমূলের অন্যতম জেলা সম্পাদক দেবাশিস সাহারা। শহর সভাপতি পিনাকীলাল দত্তের দাবি, প্রতিবাদ মিছিলে প্রায় চার হাজার কর্মী ছিলেন।
বোলপুর ও সাঁইথিয়া শহরে। বুধবারের নিজস্ব চিত্র।
এ দিন অবশ্য মহম্মদবাজার থানা এলাকায় তৃণমূলের পক্ষ থেকে বিক্ষোভ কর্মসূচি নেওয়া হয়নি। ব্লক তৃণমূলের সভাপতি তাপস সিংহ জানান, ব্লকে এ দিন থেকে যুব উৎসব শুরু হয়েছে। সে কথা মাথায় রেখেই বিক্ষোভ কর্মসূচি স্থগিত রাখা হয়েছে। আজ, বৃহস্পতিবার এই এলাকায় বিক্ষোভ কর্মসূচি নিয়েছে শাসকদল।
কালো টানা উদ্ধার নিয়ে মানুষের ভোগান্তির প্রতিবাদে সিপিএমের পক্ষ থেকেও রামপুরহাট শহরে হয়। রামপুরহাট পাঁচমাথা থেকে শুরু করে ব্যাঙ্ক রোড, ডাকবাংলা মোড় হয়ে দলীয় কার্যালয়ে মিছিল শেষ হয়। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সঞ্জীব বর্মনের কথায়, ‘‘এখন আর কান ধরে টানাটানি নয়। আমরা চাই মাথা ধরে টান মারুক সিবিআই। তা ছাড়া কালো টাকা উদ্ধারের নামে মোদী সরকার যা করেছে, তাতে মানুষের হয়রানি হয়েছে। এর প্রতিবাদেই মিছিল।’’