আদ্রায় এসপি। নিজস্ব চিত্র।
রেলের সঙ্গে জড়িত আইনশৃঙ্খলার সমস্যা। তা সামলানোর পাশাপাশি রেলের নানা অপরাধেরও কিনারা করতে হয় রেলপুলিশকে। আর সে সবের মধ্যে থেকে সময় বের করেই সমাজের পিছিয়ে পড়া অংশের শিশুদের পড়ানোর দায়িত্ব নিলেন রেলপুলিশের আধিকারিক ও কর্মীরা। শুধু পড়ানো নয়, তাদের ছবি আঁকা, গান গাওয়ার তালিমও দেবে রেলপুলিশই।
এ রকমই একটি পাইলট প্রকল্প শুরু হল আদ্রায়। সোমবার ‘কিশলয়’ নামের ওই প্রকল্পের সূচনা করেছেন পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘এই শিশুদের পথ চেনার বয়সটাই হয়নি। কোনটা ভাল পথ,কোনটাই বা মন্দ, এরা চিনতে পারবে না। আমাদের নৈতিক দায়িত্ব যাতে ওরা জীবনের সঠিক পথটা চিনে নিতে পারে সেই পরিবেশটা দেওয়া। কিশলয় সেই কাজটাই করবে।”
এই প্রকল্পের উদ্যোক্তা রেলপুলিশের খড়গপুর জেলার ভারপ্রাপ্ত এসআরপি দেবশ্রী সান্যাল। তাঁরই উদ্যোগে রেলপুলিশের আদ্রা থানা শুরু করেছে এই কাজ। এসআরপি বলেন, ‘‘আপাতত আদ্রায় এই প্রকল্প শুরু হয়েছে।ভবিষ্যতে খড়গপুর পুলিশ জেলার অন্যত্রও প্রকল্প শুরুর পরিকল্পনা আছে।” রেলপুলিশ সূত্রে খবর, আপাতত ৩০ জন শিশুকে নিয়ে শুরু হয়েছে কাজ। তাদের পড়ানো, গান, আঁকা শেখানো শুরু হয়েছে। স্থায়ী ভাবে এ সবের তালিম দিতে আদ্রায় রেলের আনাজ বাজারের পাশে রেলপুলিশের জরুরি ফোর্স লাইনের আর্বজনায় ভরা জায়গা ও একটি ঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। এ দিন সেই ঘরটির উদ্বোধনে গান পরিবেশন করেছে ওই শিশুরা। এসআরপি জানান, আগে শিশুদের নিয়ে আঁকা প্রতিযোগিতাও হয়েছিল। এ দিন সেরা তিনজনকে পুরস্কৃত করা হয়।
সূত্রের খবর, এই ৩০জন শিশু সকলেই আদ্রার বিভিন্ন বস্তি ও আশপাশের এলাকার বাসিন্দা। অনেকেই হতদরিদ্র পরিবারের। আর্থিক কারণে স্কুলছুট হয়েছে। অনেকে আবার ট্রেনে, স্টেশনে আর্বজনা পরিষ্কার করে রোজগার করে সংসারে সাহায্যের জন্য। স্কুলের মুখই দেখেনি তারা। কেউ আবার মারণ নেশায় আশক্ত। এসআরপি বলেন, ‘‘এই শিশুদের সমাজের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যেই কিশলয় শুরু করা হয়েছে। আমাদের কর্মীরাই প্রতিদিন কয়েকঘন্টা করে তাদের পড়ানো-সহ আঁকা, গান শেখাবে।” পরবর্তী সময়ে ওই শিশুদের স্কুলমুখীও করা হবে। পুলিশ সুপার বলেন, ‘‘শিশুমন চায় ছবি আঁকতে, গান শিখতে,খেলতে।সেই চাওয়ার উপযুক্ত পরিবেশ শিশুদের দেওয়ার চেষ্টা করেছেন রেলপুলিশের এসআরপি। পুরুলিয়া জেলা পুলিশ সর্বতোভাবে এই উদ্যোগের সঙ্গে থাকবে।”