আকাশ থেকে যেন আগুন ঝরছে ! তীব্র তাপপ্রবাহে যেন শ্বাস নেওয়াটাই দায় হয়ে গিয়েছে! চৈত্রতেই এই হাল হলে, জৈষ্ঠ্যে কী হবে? বাঁকুড়া জেলাময় এখন এই একটা প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে।
শুক্রবার দুপুর পৌনে ১টা নাগাদ বোতলের জল মাথায় জল ঢালতে ঢালতে সতীঘাট বাসস্টপে মাকুড়গ্রামের যুবক শিবম রক্ষিত বলেন, “মনে হচ্ছে যেন গ্রীষ্মের মাঝামাঝি সময় চলছে। রোদের তাপে দাঁড়িয়ে থাকা যাচ্ছে না। লু-র দাপটে চোখ, মুখ ঝলসে যাচ্ছে।”
বস্তুত সকাল আটটা থেকেই ঝাঁ ঝাঁ রোদের দাপট শুরু হচ্ছে। বেলা একটু গড়ালেই রাস্তাঘাটে বের হওয়া দায় হয়ে পড়ছে।
পুরুলিয়াতেও ব্যস্ত সময়েও রাস্তাঘাট ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। যাঁরা দায়ে পড়ে বেরিয়েছেন, ছাতা মাথায় মুখে কাপড় জড়িয়ে ঘুরছেন। শহরের প্রাণকেন্দ্র ট্যাক্সি স্ট্যান্ড মোড় থেকে বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশন— এক ছবি।
‘‘কাজের দিনে দুপুর আড়াইটার সময় রাস্তায় কেমন থিকথিকে ভিড় থাকে। আর এখন কেমন সুনসান!’’— বলছিলেন পুরুলিয়ায় হাসপাতাল মোড়ের সংবাদপত্র বিক্রেতা শেখ জাবির। নাকমুখ কাপড়ে ঢেকে মাথায় ছাতা নিয়ে রাস্তার ধারের দোকান ঘেঁষে সকাল থেকে দাঁড়িয়ে কাগজ বেচাই পেশা এই যুবকের। তাঁর কথায়, ‘‘এই সময় অন্য বছর এতটা গরম পড়ে না। এবার তো দেখছি মার্চ শেষ হতে না হতেই বাইরে টেকা যাচ্ছে না।’’ দুপুরে থলে হাতে বেরিয়ে একটি দোকানে বসে জিরোচ্ছিলেন মাণিক মণ্ডল নামে এক যুবক। তিনি একটি দোকানের কর্মী। তিনি বলছিলেন, ‘‘রোদে ঘুরে কাজ করা যাচ্ছে না।’’
পারদের নড়াচড়া
বাঁকুড়া
• বুধবার ৩৯.৫
• বৃহস্পতিবার ৪৩.৫
• শুক্রবার ৪২.৬
পুরুলিয়া
• বুধবার ৩৯.৭
• বৃহস্পতিবার ৪০.৭
• শুক্রবার ৪০.৯
* সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ডিগ্রি সেলসিয়াসে
বাঁকুড়াতেও বিশেষ কাজ ছাড়া বাইরে বেরোতে চাইছেন না কেউ। বাইরে বের হলেও চোখ মুখে তোয়ালে বা রুমাল দিয়ে ঢেকে বের হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এ দিন বাঁকুড়ায় জেলাশাসকের অফিস ও লাগোয়া আদালত ঘুরে দেখা গিয়েছে, অন্যদিনের তুলনায় লোকজনের আসা-যাওয়া কম। চৈত্রসেলের বাজারও তেমন জমেনি।
বাঁকুড়ায় এ বার চৈত্রের গরম গত ১০ বছরের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে বলে জানাচ্ছে আবহাওয়া দফতর। কালবৈশাখীর মুখ ফিরিয়ে নেওয়াকেই এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করছেন আবহবিদেরা।
জেলা আবহাওয়া দফতর জানাচ্ছে, স্বাভাবিক নিয়মে মার্চ মাসে অন্তত তিনটি কালবৈশাখী হওয়ার কথা। এ বার একটিও হয়নি। সঠিক নিয়মে কালবৈশাখী হলে পারদ এতটা চড়ত না। গত সাত দিন ধরে লাগাতার তাপমাত্রার পারদ বাড়ছে।