নজরদার: ভিডিয়ো রেকর্ডিং করে রাখা হচ্ছে রাস্তা তৈরির কাজ। নিজস্ব চিত্র
ঢালাই হচ্ছে গ্রামের রাস্তা। সামনে দাঁড়িয়ে সেই দৃশ্য ভিডিয়ো-বন্দি করছেন ভাড়া করা ক্যামেরাম্যান। গাফিলতি, দুর্নীতি রুখতে একশো দিনের কাজে এ ভাবেই রাস্তা তৈরি হচ্ছে জেলার মুরারই পঞ্চায়েতে। বীরভূমে আগে এ ভাবে রাস্তায় কাজ আদৌ হয়েছে বলে মনে করতে পারেননি প্রশাসনের কর্তারা।
স্থানীয় সূত্রের খবর, মুরারই পঞ্চায়েতের পোস্টঅফিস মোড় থেকে হাইস্কুল পর্যন্ত তিনশো মিটার রাস্তা বছর দুই আগে সংস্কার করা হয়েছিল। কিন্তু, কাজ শেষ হওয়ার কয়েক দিন পর থেকেই সেটি ভাঙতে শুরু করে। বিভিন্ন অংশে গর্ত ও পাথর বেরিয়ে যায়। এলাকাবাসীর অভিযোগ, নিম্নমানের কাজ হয়েছে বলেই এই পরিস্থিতি। আর্জি ছিল, রাস্তা নতুন ভাবে তৈরি করা হোক। দাবি মেনে ফের ওই অংশের কাজ শুরু হয়েছে।
কিন্তু, এ বারের কাজে পার্থক্য গড়ে দিয়েছে ক্যামেরার উপস্থিতি। সকাল ৬টা থেকে বিকেল ৬টা, ১২ ঘণ্টা ঢালাইয়ের কাজ চলছে। দুটি ক্যামেরায় দু’জন ছয় ঘণ্টা করে সেই কাজ ধরে রাখছেন ক্যামেরায়। ব্লক প্রশাসনই ক্যামেরা ও ক্যামেরাম্যান ভাড়া করেছে। ছ’দিন কাজ চলবে। প্রত্যেক দিনের ভাড়া ৬০০ টাকা। শুধু ক্যামেরায় নজর রাখা নয়, সরেজমিনে গিয়ে সেই কাজ দেখে আসছেন যুগ্ম বিডিও সন্দীপন প্রামাণিক, পঞ্চায়েতের ইঞ্জিনিয়ার ও নির্মাণ সহায়কও। আর কাজের ফাঁকে, কখনও রাতে সেই ভিডিও দেখছেন ব্লক প্রশাসনের অন্য কর্তারাও।
নিয়ম হল, ঢালাই রাস্তা করার সময় সিমেন্ট ২ বস্তা, বালি তিন বস্তা ও পাথর ছয় বস্তা— এই অনুপাতে মেশাতে হয়। সেখানেই কারচুপির অভিযোগ ওঠে। বহু ক্ষেত্রেই সিমেন্ট, পাথর কম দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। কিন্তু, এ ভাবে ভিডিয়ো-বন্দি করে রাখলে তা রোখা সম্ভব। সেই ভাবনা থেকেই এই উদ্যোগ বলে জানিয়েছেন বিডিও (মুরারই ১) নিশীথভাস্কর পাল। তিনি বলেন, ‘‘ব্লকের আধিকারিক ছাড়াও এলাকার রাজনৈতিক দলের নেতা ও স্থানীয়দের রাস্তা তৈরির কাজ দেখার অনুরোধ করা হয়েছে। ক্যামেরা-বন্দি করে আগামী দিনেও রাস্তা তৈরির কাজ করা হবে।’’ পঞ্চায়েতের প্রধান সন্তোষ পিপাড়ার কথায়, ‘‘ওই রাস্তা তৈরিতে মোট বরাদ্দ ১১ লক্ষ টাকা। ভিডিয়ো করা ছাড়াও কোন কোম্পানির সিমেন্ট, বালি ও পাথরের গুণগত মানও দেখে নেওয়া হচ্ছে। আগামী দিনে পঞ্চায়েতে ঢালাই রাস্তার কাজ এ ভাবেই হবে।’’
এতে খুশি স্থানীয় বাসিন্দারাও। অনির্বাণজ্যোতি সিংহের কথায়, ‘‘গোটাটাই হচ্ছে ক্যামেরার সামনে। ফলে কারচুপির কোনও বিষয় নেই। আমরাও রাস্তার কাজ দেখে নিচ্ছি।’’ এই পদ্ধতিতে এলাকার সমস্ত রাস্তার কাজ হলে আর কোনও রাস্তা দু’বছরেই ভেঙে যাবে না বলেও তাঁদের মত। জেলার অন্যত্র ভিডিয়োগ্রাফি করে এমন কাজ হচ্ছে কিনা, তেমন তথ্য জেলা প্রশাসনের কাছে নেই। বছরে ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পের জেলার নোডাল অফিসার শুভঙ্কর ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘স্বচ্ছতা বজায় রাখতে বিডিও যদি এ কাজ করে থাকেন, তা সাধুবাদের যোগ্য। তবে আমার ধারণা, স্থানীয় কোনও সমস্যার কারণে তাঁকে ওই পদক্ষেপ করতে হয়েছে।’’