Farmers

আগে হল না এই বৃষ্টি, আক্ষেপ ধানচাষিদের

 কৃষি দফতর সূত্রে খবর, জেলায় এ বার আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩ লক্ষ ১০ হাজার হেক্টর। সেখানে চাষ হয়েছে মাত্র ১ লক্ষ ৭৮ হাজার হেক্টর জমিতে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

সিউড়ি শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৭:৪৮
Share:

ধানের জমিতে আগাছা সাফ করছেন চাষি। দুবরাজপুরে। নিজস্ব চিত্র

১৩ তারিখ থেকে লাগাতার বৃষ্টি হচ্ছে জেলায়। গত চার দিনে জেলায় গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১২৭.২ মিলিমিটার। কিন্তু, সেটাই কোথাও আফশোসের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এত দিন ধরে বৃষ্টির জন্য হাহুতাশ করে আসা জেলার এক বড় অংশের চাষিদের। তাঁদের আক্ষেপ, এই বৃষ্টিটাই ধান চাষের মরসুমে হল না কেন! টানা বৃষ্টিতে ঘাটতি কিছুটা কমলেও জেলার ধান চাষের যা ক্ষতি হওয়ার হয়েই গিয়েছে বলেই চাষিরা জানাচ্ছেন।

Advertisement

শুক্রবার সকালে দেখা খয়রাশোলের বড়ঘটা এলাকার চাষি হাবল দাসের সঙ্গে। গরু চরাচ্ছিলেন। পিছনে বিস্তীর্ণ আনাবাদি কৃষিজমি। হাবলের কথায়, ‘‘আমার ছয় বিঘা জমি। সারা বছরের খাওয়ার চাল থেকে অন্যান্য খরচ, সব ধান চাষ থেকেই পাই। এ বার বৃষ্টির অভাবে এক ছটাক জমিতেও চাষ করেতে পারিনি। এই বৃষ্টিটা যদি আগে হত!’’ একই আফশোস শোনা গেল খয়রাশোলের নিচিন্তা গ্রামের নীলু মণ্ডলের গলায়। জানালেন, বৃষ্টির অভাবে তাঁর ১০ বিঘা জমির মধ্যে মাত্র দু’বিঘায় এ বার ধান লাগাতে পেরেছেন। সেটাও জমি থেকে হাজার ফুট দূরের শাল নদীতে পাম্প লাগিয়ে। এখনকরা বৃষ্টি চাষে সেভাবে কাজে লাগবে না। একই কথা জানিয়েছেন সিউড়ি মহকুমার বিভিন্ন ব্লকের চাষিরা। কারণ, এই মহকুমায় অন্তত ৫০ শতাংশ জমি সময়ে বৃষ্টির অভাবে এ বছর অনাবাদি থেকে গিয়েছে।

কৃষি দফতর সূত্রে খবর, জেলায় এ বার আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩ লক্ষ ১০ হাজার হেক্টর। সেখানে চাষ হয়েছে মাত্র ১ লক্ষ ৭৮ হাজার হেক্টর জমিতে। অর্থাৎ, ৪০ শতাংশ জমিতে চাষই হয় নি। সিউড়ি মহকুমার পরে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রামপুরহাট মহকুমা। কিছুটা ভাল চাষ হয়েছে বোলপুর মহকুমায়। ক্ষতি রুখতে ১০ হাজার হেক্টর জমিতে তরিয়া সর্ষে ও কালো কলাই চাষে উৎসাহ জোগাচ্ছে কৃষি দফতর। তবে, নিম্নচাপের এই বৃষ্টি ধান চাষের ক্ষতি করবে না বলেই মনে করছে কৃষি দফতর। জেলার এক কৃষি কর্তা বলছেন, ‘‘এই সময় ধান বড় হয়। যে পরিমাণ বৃষ্টি হচ্ছে, তাতে ক্ষতির ভয় নেই। চলতি বর্ষায় প্রথম দিকে ঘাটতি থাকায় জলাশয়গুলিও ভরার সুযোগ পায় নি। ভূগর্ভস্থ জলতল নেমেছে। এই বৃষ্টি সেই অর্থে উপকারই করছে ধরতে হবে।’’

Advertisement

কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি মাস ছাড়া গোটা বর্ষা মরসুমে বৃষ্টি কম হয়েছে। সবচেয়ে ক্ষতি হয়েছে ধান চাষের আদর্শ জুলাই ও অগস্ট মাসের বৃষ্টি পাতের ঘাটতিতে। জুলাইয়ে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৩২৪.৫ মিলিমিটার। সেখানে বৃষ্টি হয়েছে মাত্র ৬০ মিলিমিটারের কাছাকাছি। ঘাটতি ৮০ শতাংশেরও বেশি। অগস্টে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ যেখানে ২৯৫.৭ মিলিমিটার, সেখানে জেলায় গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ২০২ মিলি। তবে সেপ্টেম্বরে ১৬ তারিখের মধ্যেই ১২৮.৪ মিলি বৃষ্টি হয়েছে।

শেষ বেলায় বৃষ্টির পরিমাণ বাড়ায় আনাজ চাষ কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে দাবি আনাজ চাষিদের। তাঁরা জানাচ্ছেন, শীতকালীন আনাজের বীজ লাগানোর সঠিক সময় এটাই। বৃষ্টিতে বেশ কিছু চারা নষ্ট হয়েছে। ক্ষতি হয়েছে অন্যান্য আনাজ চাষও। বাজারে আনাজের দাম দেখলেই সেটা বোঝা যাচ্ছে। যদিও উপ কৃষি অধিকর্তা (উদ্যানপালন ) স্বপন কুমার শীট বলেন, ‘‘শীতকালীন আনাজ চাষে বীজতলা বা চারা এই সময়ে তৈরি হওয়ার কথা ঠিকই। কিন্তু, অধিকাংশ চাষি আরও কয়েক দিন পর সেটা করেন। যে পরিমাণ বৃষ্টি হচ্ছে, তাতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তবে বৃষ্টিপাত চলতে থাকলে সমস্যা আছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement