ছবি: সংগৃহীত
গত এপ্রিল থেকে চলতি বছরের মার্চ—এক বছর ধরে পেনশন পাচ্ছেন না পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর পুরসভার অবসরপ্রাপ্ত কর্মীরা। পুরপ্রধান মদন বরাটের বক্তব্য, ‘‘পেনশনের চল্লিশ শতাংশ দেয় রাজ্য সরকার। সেটা এখনও আসেনি। তাই পেনশন দেওয়া যাচ্ছে না।’’ এ দিকে, কিছু সূত্রের দাবি, বাকি ষাট শতাংশ টাকা দেওয়ার মতো তহবিলও নেই পুরসভার। যে কারণে অস্থায়ী কর্মীদের এমপ্লয়িজ় প্রভিডেন্ট ফান্ডের (ইপিএফ) টাকাও জমা করা যাচ্ছে না। গত এক বছর ইপিএফ বকেয়া আছে প্রায় ১৪০ জন অস্থায়ী কর্মীর। পুরপ্রধানের বক্তব্য, ‘‘তহবিলে টাকা এলেই ইপিএফ জমা করে দেওয়া হবে।’’
সামনেই পুরনির্বাচন। এমন একটা সময়ে রঘুনাথপুর পুরসভার এই সমস্ত ঘটনায় অস্বস্তিতে পড়েছে শাসকদল তৃণমূল। কেন এমন হাঁড়ির হাল?
অবসরপ্রাপ্ত ও অস্থায়ী কর্মীদের একাংশ পুরসভার পরিচালন পদ্ধতিকেই দায়ী করছেন। হোল্ডিং ট্যাক্স, জন্ম-মৃত্যুর শংসাপত্র, জমি বাড়ির মিউটেশন, নতুন বাড়ির নকশার অনুমোদন, জলের কর, দোকানের ভাড়া, কমিউনিটি হলের ভাড়া— এ সমস্তই পুরসভার আয়ের মূল উৎস। ওই কর্মীদের অভিযোগ, রাজনৈতিক কারণে পুরসভা বকেয়া কর আদায়ে উদ্যোগী হয় না। একই ভাবে অন্য ক্ষেত্রগুলি থেকেও আয় বাড়ানো চেষ্টা বিশেষ দেখা যায় না বলে অভিযোগ তাঁদের। পুরসভার কর্মীদের একাংশেরর দাবি, ১৪০ জন অস্থায়ী কর্মীর বেতন দিতেই ফুরিয়ে যায় আয়ের বেশির ভাগ।
রঘুনাথপুর পুরসভায় জনা চল্লিশ অবসরপ্রাপ্ত কর্মী রয়েছেন। পুরসভার প্রাক্তন প্রধান করণিক সমীর দাস জানান, গত এক বছর ধরে চল্লিশ জনেরই পেনশন বকেয়া। সূত্রের খবর, দীর্ঘ সাত বছর ইপিএফ বকেয়া ছিল। আগের পুরপ্রধান ভবেশ চট্টোপাধ্যায় উদ্যোগী হয়ে ছয় বছরের ইপিএফের টাকা ধাপে ধাপে কর্মীদের অ্যাকাউন্টে জমা করেন। কিন্তু এখনও এক বছরের টাকা জমা দেওয়া বাকি। সমীরবাবু অবসর নিয়েছেন সাত বছর আগে। টানা এক বছর পেনশন বন্ধ থাকা এই প্রথম বলেই জানাচ্ছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘‘পুরসভা যদি নিজস্ব আয় বাড়ানোর চেষ্টা করত আর বকেয়া আদায়ের জন্য রাজ্যের কাছে তদ্বির করত, তা হলে এই অবস্থা হত না।”
ইপিএফ জমা না হওয়ায় অস্থায়ী কর্মীরাও যথেষ্ট ক্ষুব্ধ। পুরসভার সাফাই বিভাগের ইন-চার্জ যুধিষ্ঠির পাল জানান, মাসে প্রায় ৪,২০০ টাকা মজুরি পান তাঁরা। ভবিষ্যতের সঞ্চয়ের জন্য ইপিএফের টাকা গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, ‘‘বার বার পুরসভা কর্তৃপক্ষের কাছে বকেয়া ইপিএফ জমা করার আবেদন করেছি। কিন্তু কাজ হয়নি।”
পুরসভা পরিচালনায় তৃণমূল নেতাদের পরিকল্পনার অভাবের অভিযোগ তুলেছেন বিরোধীরা। সিপিএমের রঘুনাথপুর এরিয়া কমিটির সদস্য লোকনাথ হালদার বলেন, ‘‘গত পনেরো বছর ধরে পুরসভা চালাচ্ছে তৃণমূল। এই বছরগুলিতে খেয়ালখুশি মতো অস্থায়ী কর্মী নিয়োগ করছে। প্রয়োজনের তুলনায় অস্থায়ী কর্মীর সংখ্যা অনেকটাই বেশি হয়ে যাওয়ায় মজুরি দিতেই তহবিল ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে।” তবে বিরোধীদের অভিযোগ মানতে চাননি পুরপ্রধান মদনবাবু। তাঁর দাবি, ছোট পুরসভা হওয়ায় আর্থিক রোজগারের সুযোগ অনেকটাই কম। তার উপরে সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে পুরসভার মধ্যে থাকা সরকারি অফিসগুলি দীর্ঘ সময় ধরে কর বকেয়া রাখায়। মদনবাবুর কথায়, ‘‘সরকারি অফিসগুলি থেকেই কোটি টাকার কাছাকাছি কর পাবে পুরসভা। তারা কর মিটিয়ে দিলেই আর্থিক সমস্যা মিটে যেত। বারবার অফিসগুলিকে কর মেটানোর জন্য চিঠি দিয়েছি। কিন্তু বকেয়া কর পাওয়া যায়নি।”