হাতছানি: গড়পঞ্চকোট পাহাড়ের কোলে। ছবি: সঙ্গীত নাগ
সপ্তাহান্তের দু’-তিন দিনের ছুটি কাটানোর জন্য কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের পর্যটকদের গন্তব্য হয়ে উঠেছে পুরুলিয়া। সেই ধারা বজায় থাকছে পুজোতেও। মহালয়া থেকে লক্ষ্মীপুজো— কার্যত ঠাঁই নেই বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি রিসর্টগুলিতে। থাকছে স্পেশ্যাল প্যাকেজে পুজোর ক’টা দিন অন্য রকম ভাবে কাটানোর বন্দোবস্ত। কেউ পর্যটকদের পাহাড়ের না দেখা জায়গাগুলি চিনিয়ে দেবেন। কেউ বা আবার পুজোর সন্ধ্যায় রিসর্টেই আয়োজন করছেন ছৌ নাচ, বাউল গানের। কোনও রিসর্টে আবার জোর দেওয়া হচ্ছে পর্যটকদের রসনা তৃপ্তিতে।
মাওবাদীদের ভয়ে একটা সময়ে অযোধ্যায় একটা সময়ে ভিড় ক্রমশ কমে যাচ্ছিল। তখন জেলার মধ্যে অন্যতম পর্যটনস্থল হিসাবে উঠে এসেছিল উত্তর পুরুলিয়ার আসোনসোল ঘেঁষা নিতুড়িয়া ব্লকের গড়পঞ্চকোট। বন উন্নয়ন নিগমের প্রকৃতি ভ্রমণ কেন্দ্রকে ঘিরে পঞ্চকোট পাহাড়ে পর্যটনের বিকাশ শুরু। কয়েক বছর আগেই বন উন্নয়ন নিগমের রাজ্যের রিসর্টগুলির মধ্যে সব থেকে বেশি ব্যবসা করে নজর কেড়েছিল গড়পঞ্চকোট। সেই ধারাবাহিকতা এখনও বজায় রয়েছে।
এখন আবার সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে গড়পঞ্চকোট পাহাড় ঘিরে তৈরি হয়েছে আরও তিনটি রিসর্ট। অন্য দিকে, জয়চণ্ডী পাহাড় ও মুরাড্ডির বড়ন্তিতেও প্রসার ঘটেছে পর্যটনের। অযোধ্যাপাহাড়েও বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে উঠেছে একাধিক রিসর্ট। উন্নতি হয়েছে পরিকাঠামোর। একই সঙ্গে পাহাড়, জঙ্গল আর নদীর টানে তীব্র গরমের সময়টা বাদ দিয়ে বছরভর জেলা এখন জমজমাট।
এ বারেও পুজোয় কী হতে চলেছে, তার একটা আভাস পাওয়া যাচ্ছে রিসর্টগুলির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে। গড়পঞ্চকোটে রিসর্ট তৈরি করেছে একটি বেসরকারি সংস্থা। সেখানকার ম্যানেজার বিকাশ মাহাতো জানান, মহালয়া থেকে লক্ষ্মী পুজো পর্যন্ত সমস্ত ঘরের বুকিং সম্পূর্ণ। একই অবস্থা বন উন্নয়ন নিগমের প্রকৃতি ভ্রমণ কেন্দ্র থেকে আরও দু’টি বেসরকারি সংস্থার রিসর্টেও। পুজোর পাঁচ দিন তাঁদের কোনও ঘর খালি নেই বলে জানাচ্ছেন অযোধ্যার একটি রিসর্টের কর্ণধার মোহিত লাটা ও জয়চণ্ডী পাহাড়ের একটি রিসর্টের কর্মকর্তা মলয় সরখেলও।
অযোধ্যাপাহাড়ে উঠে মূলত আপার ড্যাম ও লোয়ার ড্যাম দেখতেই বেশি আগ্রহী হন পর্যটকেরা। মোহিতবাবু জানান, ওই দু’টি জলাধার ছাড়া পাহাড়ে আরও অনেক কিছু দেখার রয়েছে। স্থানীয়রাই সে সবের হদিস রাখেন। মোহিতবাবু বলেন, ‘‘আমরা পুজোর কথা মাথায় রেখে এলাকার যুবকদের গাইড হিসাবে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। পুজোর সময়ে তাঁরা পর্যটকদের পাহাড়ের না দেখা জায়গাগুলি ঘুরিয়ে দেখাবেন।”
পুজোর দিনগুলিতে পুরুলিয়ার লোকশিল্প ও লোক সংস্কৃতির সঙ্গে ভিন্ জেলার পর্যটকদের পরিচয় করিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে গড়পঞ্চকোটের একটি রিসর্টের। সেখানকার ম্যানেজার অনন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পুজোর সময়ে দিনে ও সন্ধ্যায় আমরা পর্যটকদের জন্য রিসর্টের মধ্যেই ছৌ নাচ ও বাউল গানের অনুষ্ঠান রেখেছি।” সেখানকার আর দু’টি সংস্থার কর্ণধার সুপ্রিয় গঙ্গোপাধ্যায়, ম্যানেজার বিকাশ মাহাতো, জয়চণ্ডীর মলয় সরখেলরা বলেন, ‘‘পুজোর সময়ে মেনুতে আমূল বদল ঘটানো হচ্ছে। খাবারের মধ্যে বাঙালিয়ানার স্বাদটা যাতে বজায় থাকে, তা নিশ্চিত করা হয়েছে।”
কেমন?
সুপ্রিয়বাবু জানান, তাঁরা নজর দিচ্ছেন মাছের বিভিন্ন পদের উপরে। ইলিশ, পাবদা, চিংড়ি, পার্শে যেমন থাকছে, তেমনই থাকবে কুচো মাছ বা মৌরালার টকের মত নানা পদ। বিকাশবাবু বলেন, ‘‘অষ্টমীতে নিরামিষই পছন্দ করেন অনেকে। তাই ওই দিনের জন্য একাধিক নিরামিষ পদ রাখা হচ্ছে। নবমীতে থাকবে কচি পাঁঠার ঝোল। দশমীতে রাখা হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি।’’
বাইরে ঢাকের বাদ্যি। মণ্ডপ থেকে ভেসে আসা অঞ্জলির মন্ত্র। ঘরে যদি মন না টেকে, তার ব্যবস্থাও থাকছে। সমস্ত রিসর্টগুলিই স্থির করেছে, চাইলে পর্যটকেরা বিভিন্ন পুজো মণ্ডপ ঘুরে দেখতে পারেন। তার জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। অযোধ্যার মোহিতবাবু ও পঞ্চকোটের বিকাশবাবু বলেন, ‘‘স্থানীয় পুজো থেকে শুরু করে জেলার বড় বাজেটের পুজো চাইলেই দেখতে পারবেন পর্যটকেরা। দুয়ারে প্রস্তুত গাড়ি। ইচ্ছা হলেই পর্যটকেরা ঘুরতে বেরিয়ে যাবেন।’’