নিয়ন্ত্রনহীন টোটোর ভিড় সিউড়ির মসজিদ মোড়ে। এই সব টোটোর এক বড় অংশ নম্বরহীন। নিজস্ব চিত্র।
সিউড়িতে যানজট মোকাবিলায় ৫ ডিসেম্বর থেকে টোটো নিয়ন্ত্রণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল প্রশাসন। বাস্তবে তার কোনও প্রতিফলন দেখা গেল না। এখনও প্রচুর নম্বরহীন টোটো ঘুরে বেড়াচ্ছে শহর জুড়ে। গ্রামের টোটো শহরে ঢুকতে না-দেওয়ার যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল, তা-ও বাস্তবায়িত হয়নি। পরিকল্পনা ঘোষণা এবং তার বাস্তবায়নের মধ্যে এই ফারাকে ক্ষুব্ধ শহরবাসী।
সূত্রের খবর, টোটোর জন্য নতুন বিধিননিষেধ চালু হওয়ার পরে যাতে কোনও রকম সমস্যা দেখা না-দেয়, তার জন্য নানা সম্ভাবনা খতিয়ে দেখে সেগুলির সমাধান করার কাজ চলছে। ডিসেম্বরের শেষের দিকেই এই পদ্ধতি চালু হয়ে যাবে বলে দাবি সিউড়ি পুরসভার। পুরপ্রধান উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় বলেন, “শহরের যানজট নিয়ন্ত্রণে আমরা বদ্ধপরিকর। নিয়ম চালু হওয়ার পরে যাতে নতুন করে কোনও সমস্যা না হয়, তার জন্য সব দিক খতিয়ে দেখতে একটু সময় বেশি লাগছে।’’
প্রসঙ্গত, গত মাসে সিউড়ি পুরসভা, শহর সংলগ্ন পঞ্চায়েতগুলির প্রধান, পুলিশ, ট্রাফিক বিভাগ, টোটো ইউনিয়ন, বাস মালিক সমিতি-সহ সংশ্লিষ্ট সমস্ত বিভাগকে নিয়ে বৈঠক করেছিলেন সদর মহকুমাশাসক। সেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, ৫ ডিসেম্বর থেকে শহরের যানজট সমস্যা মেটাতে টোটো চলাচলে নিয়ন্ত্রণ টানা হবে। দিনের নির্দিষ্ট সময়ে গ্রামের টোটো শহরে ঢুকতে পাবে না, শহরের সমস্ত টোটোকে নথিভুক্ত করতে হবে, টোটোগুলিকে দু’টি আলাদা রঙে চিহ্নিত করে নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট রঙের টোটোকে রাস্তায় নামার অনুমতি দেওয়া হবে।
গত বৃহস্পতিবার থেকে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। সিউড়ির বাসিন্দা দিব্যেন্দু ঘোষ, আমিন আনসারি, বাসুদেব দত্তেরা বলেন, ‘‘প্রশাসন ও পুরসভা যে-ভাবে শহরের টোটো নিয়ন্ত্রণের কথা জানিয়েছিল, তাতে আশার আলো জেগেছিল। সকালে ছেলেমেয়েদের স্কুলে পৌঁছে দিতে বা নিজেদের অফিস বা বাজারে যেতে যে প্রবল যানজটের মুখে পড়তে হয় তার থেকে মুক্তি পাওয়ার আশা জেগেছিল। কিন্তু নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে গেলেও একটি সিদ্ধান্তও কার্যকর হতে দেখা গেল না।’’
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্রামের টোটোকে দিনের নির্দিষ্ট সময়ে শহরে ঢুকতে না-দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তার বিরোধিতা করেছে একাধিক গ্রাম পঞ্চায়েত ও সেখানকার টোটো ইউনিয়ন। সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করে প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, শহর ও গ্রাম নির্বিশেষে সিউড়ি শহরের যে-সব টোটো চলাচল করে, সেগুলিকে সিউড়ি পুরসভার অধীনে নথিভুক্ত করতে হবে। নথিভুক্ত হওয়া প্রত্যেকটি টোটোকে কিউআর কোড দেওয়া হবে। পুলিশ-প্রশাসনের আধিকারিক থেকে সাধারণ যাত্রী, সকলেই সেই কিউআর কোড স্ক্যান করে টোটোর যাবতীয় তথ্য সরাসরি সার্ভার থেকে পেয়ে যাবেন। টোটো চালকের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ থাকলে, তা-ও জানানোর ব্যবস্থা থাকবে।
সপ্তাহের কোন কোন দিনে একটি নির্দিষ্ট টোটোর পথে নামার কথা, তাও উল্লেখ থাকবে কোডে। একটি বেসরকারি সংস্থাকে এই কিউআর কোড তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জানিয়ে পুরপ্রধানের দাবি, “কিউআর কোড তৈরির কাজ হয়ে গেলেই আমরা সিদ্ধান্ত কার্যকর করব৷ টোটো নিয়ে সব সিদ্ধান্ত কার্যকর হবেই।’’