দুর্গাপুর ব্যারাজ। ফাইল চিত্র
মেরামতির জন্য কি বন্ধ থাকবে ব্যারাজের রাস্তা? পুজোর মুখে দামোদরের দু’পাড়ে এই প্রশ্নটাই ঘুরে ফিরছে। আর জল্পনা মেলছে ডালপালা। ফেসবুক আর হোয়াটসঅ্যাপে নানা রকমের খবর ভেসে বেড়াচ্ছে। কবে থেকে কবে পর্যন্ত রাস্তা বন্ধ থাকবে, সেই ‘দিনক্ষণও’ ফরওয়ার্ড হয়ে চলে আসছে কারও কারও মোবাইলে। তবে সেচ দফতর সূত্রে জানা যাচ্ছে, সে সব নিতান্তই গুজব। রাস্তা সংস্কার হবে, এটা ঠিক। তার জন্য যান চলাচল বন্ধ রাখার সম্ভাবনাও প্রবল। কিন্তু কী ভাবে হবে বা কবে থেকে হবে— সে সব এখনও স্থির হয়নি।
দুর্গাপুর ব্যারাজের রাস্তা ব্যবহারের প্রায় অযোগ্য হয়ে পড়েছে। প্রায়ই দিনই ভাঙা রাস্তায় বিকল হয়ে পড়ছে গাড়িঘোড়া। যানজট প্রায় রোজনামচায় দাঁড়িয়েছে। দীর্ঘ দিনের দাবির পরে রাস্তাটি সংস্কারে উদ্যোগী হয়েছে দামোদর হেডওয়ার্ক ডিভিশন। ২৭ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করে ডাকা হয়েছে টেন্ডার। দফতর সূত্রের খবর, কাজ শুরু হতে আরও সপ্তাহখানেক লাগবে। তখন কি গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকবে? দামোদর ইরিগেশন সার্কলের সুপারিন্টেন্ডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার দেবাশিস পড়ুয়া বলেন, “যানবাহন চলাচল করলে মেরামতিতে সমস্যা হবে। সেতু কাঁপলে কাজ ভাল ভাবে করা যাবে না। তাই সেতুতে যান চলাচল বন্ধ রেখেই কাজ করার ভাবনাচিন্তা করেছি আমরা।”
এক পাড়ে পশ্চিম বর্ধমানের দুর্গাপুর। অন্য পাড়ে বাঁকুড়ার বড়জোড়া। ব্যবসা, বাণিজ্য, স্বাস্থ্য, শিক্ষা— সমস্ত দরকারেই দু’জেলার মধ্যে সেতুবন্ধ করে ব্যারাজের রাস্তাটি। বাঁকুড়ার সঙ্গে কলকাতার সড়ক-যোগাযোগও ওই পথেই। রোজ হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করেন। পথ আটকালে ভোগান্তি যে বিস্তর হবে, সে কথা বুঝছে সেচ দফতরও। দেবাশিসবাবু বলেন, “দু’টি জেলার প্রশাসনের সঙ্গে কথা না বলে এ নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না। শীঘ্রই আমরা বৈঠকে বসব।”
সেচ দফতরের এসডিও (ব্যারাজ) গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, আগামী বুধবার টেন্ডার খোলার কথা রয়েছে। শুক্র বা শনিবারের মধ্যে সেচ দফতর সিদ্ধান্ত নিয়ে বৈঠকের তোড়জোড় করতে পারে। আগে পিচের রাস্তার কাজ রাতে হত। তখন গাড়ির চাপ কম থাকত। এ বার সেই জো নেই। দফতর সূত্রের খবর, এ বারে ব্যারাজের রাস্তা কংক্রিটের হবে। ফলে কাজ করতে হবে দিনের আলোতেই। সূত্রের দাবি, পরিস্থিতি বিবেচনা করে মেরামতির সময়ে শুধু ভারী গাড়িও আটকানো হতে পারে। একটি লেন খোলা রেখে পার করে দেওয়া হতে পারে ছোট গাড়ি এবং রুটের বাস। খুব ধীরে, যাতে সেতু যথাসম্ভব কম কাঁপে।
রাস্তা পুরোপুরি বন্ধ করার অনুমতি কি প্রশাসন দেবে? পশ্চিম বর্ধমানের জেলাশাসক শশাঙ্ক শেট্টি বলেন, “ব্যারাজের রাস্তা সংস্কারের কাজ কী ভাবে হবে তা নিয়ে আমার কাছে কোনও খবর নেই। দফতরের তরফে এখনও কিছু জানানো হয়নি। তবে ব্যারেজটি দু’টি জেলার যোগাযোগের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই এ নিয়ে কোনও প্রস্তাব এলে ভাবনাচিন্তা করে সিদ্ধান্ত নেব।” বাঁকুড়ার জেলাশাসক উমাশংকর এস বলেন, “ব্যারেজের রাস্তা মেরামত করা একান্ত প্রয়োজন। তাই দরকার হলে ব্যারাজ বন্ধ রাখার অনুমতি দিতে হতেই পারে।”
বাঁকুড়া চেম্বার অব কমার্সের (শিল্প) যুগ্ম সম্পাদক প্রবীর সরকার বলছেন, “পুজোর মরসুমে ব্যারাজ বন্ধ হওয়া মানে কয়েক কোটি টাকা লোকসানের মুখে পড়বেন ব্যবসায়ীরা। একে বারে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার পক্ষে মানুষ কখনও থাকবেন না।’’ তাঁর দাবি, আপাতত রাস্তার ভাঙাচোরা অংশে তাপ্পি মেরে সুষ্ঠু পরিকল্পনা করে বাকি কাজ পুজোর পরে করা হোক। দুর্গাপুর পুরসভার ৩ নম্বর বোরো চেয়ারম্যান চন্দ্রশেখর বন্দ্যোপাধ্যায় রাস্তাটি সংস্কারের জন্য সেচ দফতরে বেশ কয়েক বার চিঠি দিয়েছিলেন। তাঁর অবশ্য বক্তব্য, ‘‘রাস্তা সারাই নিতান্তই জরুরি। অন্য কোনও পথে যানবাহন ঘুরিয়ে যদি কাজ করা যায়, তা হলে সব থেকে ভাল হয়।’’
সহ-প্রতিবেদন: সুব্রত সীট