পাত্রসায়র স্টেশনে। নিজস্ব চিত্র।
এগারো মাস পরে রবিবার ফের বিডিআর লাইনে ছুটল ট্রেন। বাড়তি পাওনা ডিজেলের বদলে এ বার ইলেকট্রিক ট্রেন। প্রথম ট্রেন বাঁকুড়া ছেড়ে ছুটল পূর্ব বর্ধমানের মশাগ্রামে। কোনও স্টেশনে ফুল ছড়িয়ে বাসিন্দারা স্বাগত জানালেন। কোথাও গার্ড ও ড্রাইভারকে দেওয়া হল ফুলের তোড়া। কোথাও ট্রেনের হাতলে প্রণাম করে কামরায় উঠলেন নিত্যযাত্রী।
এক সময়ে বিডিআর লাইনের নাম নিয়ে লোকে কটাক্ষ করে বলতেন, ‘বড় দুঃখের রেল’। দিনবদলে তা-ই এখন বহু মানুষের ভরসা হয়ে উঠেছে। বাঁকুড়া-মশাগ্রাম লাইনে এগারো মাস পর চালু হওয়া ট্রেনকে নিয়ে প্রায় সমস্ত স্টেশনে ছিল যাত্রীদের উচ্ছ্বাস। রেললাইনের আশপাশের গ্রামের মানুষজন ট্রেন দেখতে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
করোনার শুরুতে লকডাউনে দীর্ঘদিন এই লাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল। অন্য রুটে ট্রেন চালানো শুরু হলেও বিডিআর লাইনে কেন হচ্ছে না, তা নিয়ে যাত্রীমহলে ক্ষোভ ছিলই। মশাগ্রামের সঙ্গে এই লাইন ধরে হাওড়া পর্যন্ত ট্রেন চালানোর দাবি বাঁকুড়াবাসীর দীর্ঘদিনের। লাইনে বৈদ্যুতিকরণ হওয়ায়, এ বার সেই দাবি আরও জোরাল হয়ে উঠেছে। খড়্গপুরের বদলে মশাগ্রাম হয়ে হাওড়া পৌঁছতে বাঁকুড়া ও পুরুলিয়াবাসীর কম সময় লাগবে। তাই এ দিন ইলেকট্রিক ট্রেন চলা শুরু হওয়ায় খুশি অনেকে।
এ দিন দুপুরে বাঁকুড়া স্টেশনে সবুজ পতাকা দেখিয়ে ট্রেনটির যাত্রার সূচনা করেন বিজেপিতে যোগ দেওয়া বর্ধমান পূর্ব কেন্দ্রের সাংসদ সুনীল মণ্ডল এবং বড়জোড়ার সিপিএম বিধায়ক সুজিত চক্রবর্তী। ছিলেন ডিআরএম (আদ্রা) নবীন কুমার। সোনামুখী স্টেশনে সবুজ পতাকা দেখান বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খাঁ। তৃণমূল শিবিরে যাওয়া বাঁকুড়ার বিধায়ক শম্পা দরিপার নাম থাকলেও তিনি যাননি। তিনি বলেন, ‘‘অন্যত্র ব্যস্ত থাকায় যেতে পারিনি।’’
এ দিন পাত্রসায়র স্টেশনে ট্রেন ঢুকতেই গার্ড ও ড্রাইভারের হাতে ফুলের তোড়া তুলে দেন বাঁকুড়া দামোদর রিভার রেলওয়ে পরিবহণ সমিতির পাত্রসায়র শাখার সদস্যেরা। ওই স্টেশনে ট্রেনকে প্রণাম করে কামরায় উঠতে দেখা গেল কলকাতার একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী নিত্যযাত্রী অর্ঘ্য কর্মকারকে। তিনি বলেন, ‘‘ট্রেন চললে তবেই কম খরচে সপ্তাহের বেশির ভাগ দিন বাড়ি থেকে যাতায়াত করতে পারি। না হলে এত দূর থেকে যাতায়াতে বেতনের বেশির ভাগই বেরিয়ে যায়।’’
কলকাতা থেকে মালপত্র এনে পাত্রসায়রের বিভিন্ন দোকানে জোগান দেন পাত্রসায়রের বাসিন্দা প্রহ্লাদ হাজরা। প্রহ্লাদবাবু বলেন, ‘‘ট্রেন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কাজ একেবারেই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। বাসে অনেক ভাড়া। তাতে লাভ থাকে না। ট্রেন চালু হওয়ায় আবার কাজ ফিরে পেলাম।’’
বাঁকুড়া দামোদর রিভার রেলওয়ে পরিবহণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুপ্রকাশ সামন্ত বলেন, ‘‘দীর্ঘদিনের সংগ্রাম সফল হল। ছোট লাইনের ট্রেন থেকে ইলেকট্রিক। বিরাট বিবর্তন। আমরা ভীষণ খুশি।’’ ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো ও সরাসরি বাঁকুড়া-হাওড়া ট্রেনের দাবিপত্র রেল আধিকারিকদের হাতে তাঁরা তুলে দেন।
রেলের জনসংযোগ দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘রবিবার বাঁকুড়া-মশাগ্রাম লাইনে ইলেকট্রিক লোকাল ট্রেনের উদ্বোধন হয়েছে। সোমবার থেকে পূর্ব সময়সূচি মেনেই দু’জোড়া ট্রেন চলাচল করবে।’’ ভবিষ্যতে ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানোর কথা দফতরের বিবেচনার মধ্যে রয়েছে বলে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন।