পূ্র্বরেল যে ৫৭ জোড়া ট্রেন চালাবে, সেই তালিকায় দু’জোড়া ট্রেন চলবে পূর্ব রেলের অন্ডাল-সাঁইথিয়া শাখায়। কোভিড-বিধি মানতে তার আগে স্টেশন, প্লাটফর্মে দূরত্ববিধি সার্কেল আঁকা হয়েছে। রামপুরহােট। নিজস্ব চিত্র।
দীর্ঘ আট মাস পরে বুধবার থেকে বর্ধমান সাহেবগঞ্জ রেললাইনে চালু হতে চলেছে লোকাল ট্রেন পরিষেবা। পাশাপাশি রামপুরহাট দুমকা এবং সাঁইথিয়া থেকে অণ্ডাল লাইনেও ট্রেন পরিষেবা আগামী বুধবার থেকে চালু হচ্ছে। স্বাভাবিক ভাবেই খুশি নিত্যযাত্রীরা। খুশি জেলার রাজগ্রাম থেকে বোলপুর, সাঁইথিয়া থেকে দুবরাজপুর— সমস্ত এলাকার বাসিন্দারাই। তবে এখনও পর্যন্ত সরাসরি হাওড়া বা শিয়ালদহ যাওয়ার জন্য জেলার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ট্রেন চালু হচ্ছে না জেনেও নিত্যযাত্রী সহ বহু বাসিন্দা ক্ষুব্ধ। লোকাল ট্রেন চালু হলেও ট্রেনে হকার বা স্টেশনের দোকান খোলার অনুমতি রেল কর্তৃপক্ষ না দেওয়ায় ক্ষুব্ধ বহু ব্যবসায়ী।
রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার থেকে বর্ধমান সাহেবগঞ্জ রেললাইনে রামপুরহাট থেকে বর্ধমান পর্যন্ত আপাতত ৮টি লোকাল ট্রেন চালু হচ্ছে। এ ছাড়া রামপুরহাট সাহেবগঞ্জ তিনপাহাড় রেললাইনে ৮টি ট্রেন চালু হচ্ছে। রামপুরহাট আজিমগঞ্জ রেললাইনে ৪টি ট্রেন চালু হচ্ছে। রামপুরহাট জসিডি দুমকা রেললাইনে আগের মতোই ২টি ট্রেন চালু হচ্ছে। সাঁইথিয়া অন্ডাল লাইনে ৪টি ট্রেন চালু হচ্ছে।
লোকাল ট্রেন চালু হওয়ার প্রস্তুতি হিসেবে ছোট বড় সমস্ত স্টেশনগুলিতে যাত্রীদের সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে রেল পুলিশ এবং রেলের আধিকারিকেরা জানিয়েছেন। রবিবার জেলার রামপুরহাট, সাঁইথিয়া, বোলপুর, সিউড়ি স্টেশনে খোঁজ নিয়ে জানা যায় স্টেশনগুলিতে যাত্রীদের সুরক্ষার জন্য প্লাটফর্মে দূরত্ব বজায় রেখে বৃত্ত আঁকা হয়েছে। সেই সঙ্গে টিকিট কাউন্টারের সামনেও যাত্রীদের বৃত্ত আঁকা হয়েছে। সমস্ত স্টেশনেই কোভিড সংক্রান্ত স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার জন্য বাঙলা, হিন্দি এবং ইংরেজিতে ব্যানার টাঙানো হয়েছে।
সাঁইথিয়া স্টেশনের স্টেশন ম্যানেজার পুলক রায় এবং রামপুরহাট স্টেশনের স্টেশন ম্যানেজার হাদিউজ জামান জানান, বিভিন্ন সংস্থা এবং সংগঠন ট্রেন চালুর দাবিতে স্মারকলিপি দিয়েছিল। তা উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়। রেল কর্তৃপক্ষ এলাকার রেলযাত্রীদের অসুবিধার কথা ভেবে লোকাল ট্রেন চালু করছে। এতে রেলযাত্রীদের সুবিধা হবে। বোলপুর স্টেশনের স্টেশন ম্যানেজার গৌরেন্দ্র মিত্র জানান, রেল কর্তৃপক্ষের যাবতীয় নির্দেশ সমস্ত কিছু মানা হবে।
রেল পুলিশের পক্ষে সাঁইথিয়া থানার জিআরপি ইন চার্জ প্রীতম দাস জানান, যাত্রীরা যাতে স্টেশনে দূরত্ব বিধি মেনে চলেন সে জন্য এবং প্রত্যেক যাত্রী যাতে মাস্ক পরেন তার জন্য স্টেশনে মাইকিং করা হবে। বর্ধমান সাহেবগঞ্জ রেললাইনে খানা জংশন থেকে ঝাড়খণ্ডের গুমানি পর্যন্ত রেললাইনের দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত এরিয়া ম্যানেজার
মোহিত বিশ্বাস বলেন, ‘‘লকডাউনের সময় রেললাইনে মালগাড়ি চালানো হয়েছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন কোভিড স্পেশাল ট্রেন চালু আছে। সেই কারণে রেললাইনে ট্রেন চলাচলে অসুবিধা নেই।’’
লোকাল ট্রেন চালু হওয়ার জন্য দুবরাজপুর-সহ বোলপুর, সিউড়ি, রামপুরহাট, সাঁইথিয়া, নলহাটি, মুরারই, রাজগ্রাম সমস্ত জায়গার বাসিন্দারা খুশি। দুবরাজপুর নাগরিক কমিটির সদস্য ব্যবসায়ী মঙ্গল গড়াই, সিউড়ি মার্চেন্ট ওয়েলফেয়ার কমিটির সম্পাদক কিষান পাল, রামপুরহাট যাত্রী সঙ্ঘের সদস্য নিয়ামত আলিরা জানান, দীর্ঘদিন থেকে ট্রেন চালুর জন্য দাবি জানিয়ে আসছিলাম। তবে হাওড়া রামপুরহাট বিশ্বভারতী ফাস্ট প্যাসেঞ্জার, হাওড়া মালদহ ইন্টারসিটি ফাস্ট এক্সপ্রেস, হাওড়া আজিমগঞ্জ গণদেবতা এক্সপ্রেস, শিয়ালদহ রামপুরহাট মাতারা এক্সপ্রেস, হাওড়া রামপুরহাট শহিদ এক্সপ্রেস, কলকাতা বালুরঘাট এক্সপ্রেসের মতো ট্রেনগুলি চালু হলে যাত্রীদের আরও সুবিধা হবে বলে জানান বাসিন্দারা। ট্রেন চালু হলেও ট্রেনে হকার উঠতে বা স্টেশনগুলিতে দোকানদারদের বসতে না দেওয়ার সিদ্ধান্তে অখুশি হকার থেকে দোকানদাররা। হকার এবং দোকানদারেরা বলছেন, ‘‘কবে ট্রেন চালু হবে সেই অপেক্ষায় বসে ছিলাম। এখন যদি আমাদের ট্রেনে উঠতে না দেয় তাহলে কীভাবে আমরা জীবিকা নির্বাহ করব?’’