বেলা পৌনে ১২টায় পুরুলিয়া শহরের ট্যাক্সিস্ট্যান্ড। নিজস্ব চিত্র।
ভিড় ফিরতে শুরু করেছে শহরের রাস্তা। সোমবার, সপ্তাহের প্রথম দিনে পুরুলিয়া জেলা সদর-সহ মফস্সল শহরগুলিতেও এমনটা দেখা গিয়েছে। একই চিত্র ছিল বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুর, খাতড়ায়। যা দেখে প্রমাদ গনছেন চিকিৎসকেরা। পুরুলিয়া মেডিক্যালের চিকিৎসক নয়ন মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সোমবার বেলা ১১টার কিছু পরে, পুরুলিয়ার বড়হাটের রাস্তা ধরে যেতে গিয়ে থমকে গিয়েছিলাম। সংক্রমণ কিছুটা কমতেই মানুষজন বেশ বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। করোনা বিদায় নিয়েছে, এমনটা মনে করার কোনও কারণ নেই। সতর্কতায় ঢিলেমি দিলেই বিপদ আছে।’’
দোকানপাট মোটের উপরে নির্দিষ্ট সময়েই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। রাস্তায় টহল দিতে বেরোচ্ছে পুলিশ। কিন্তু তার পরেও ভিড় থাকছেই। এ দিন পুরুলিয়া শহরের ট্যাক্সি স্ট্যান্ড, চকবাজার, বড়হাট গিজগিজ করছিল। মানবাজারের ব্যাঙ্ক মোড় এলাকায় বেলা সাড়ে ১১টাতেও ভিড় ছিল রাস্তায়। স্থানীয় বাসিন্দা রামকৃষ্ণ নন্দী বলেন,‘‘কড়াকড়ি যে চলছে, রাস্তার অবস্থা দেখলে বোঝাই যায় না।’’ রঘুনাথপুর মহকুমার কিছু এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, নির্ধারিত সময়ের পরেও অনেক দোকান খোলা থাকছে। একই অভিযোগ বান্দোয়ানেও। সোমবার ঝালদায় একটি মুদির দোকানের সামনে লাইন দিয়েছিলেন বিশাল সাহু। তিনি বলেন, ‘‘এক সপ্তাহের জিনিস এক সঙ্গে নিয়ে যাব। লোকে ঘাড়ের উপরে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। এ দিকে, চলেও যেতে পারছি না।’’
বাঁকুড়ার লালবাজার ও মাচানতলায় এ দিন ভিড় ভালই ছিল। বাঁকুড়ার শহর লাগোয়া এক আবাসনের বাসিন্দা দেবব্রত নন্দী বলেন, ‘‘ভিড়ের মধ্যেই জিনিস কিনতে হচ্ছে। অল্প সময়ে বাজার করতে হচ্ছে বলে সবাই হুড়োহুড়ি করছেন। এতে সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়ছে।’’ পাত্রসায়রের বিধান মণ্ডলের কথায়, ‘‘সবাই হুড়োহুড়ি করায় সংক্রমণের আশঙ্কাও বাড়ছে, সময়ও বেশি লাগছে।’’ দক্ষিণ বাঁকুড়ার বাসিন্দাদের অনেকেই দাবি করেছেন, প্রশাসনের ধারাবাহিক প্রচার আর পুলিশের অভিযানের জন্য মাস্ক ব্যবহারের প্রবণতা বেড়েছে, কিন্তু সামাজিক দূরত্ব প্রায় কোথাও বজায় থাকছে না। খাতড়ার সুমন মাহাতো বলেন, ‘‘সকাল সাড়ে ৯টা থেকে মুদির দোকানে ভিড়ের মধ্যে গায়ে-গা লাগিয়ে দাঁড়িয়েছিলাম। কিন্তু ১০টা বাজার মিনিট দশেক আগে থেকেই মালিক দোকান বন্ধের তোড়জোড় শুরু করেন। আমার মতো আরও চার-পাঁচজন ক্রেতা জিনিস পাননি। খুব সমস্যা হয়েছে।’’
পুরুলিয়া জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলছেন, ‘‘সংক্রমণ কিছু কমায় অনেকেই সতর্কতা মানছেন না। এতে বিপদ বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। পুলিশ টহলদারি চালাচ্ছে। পাশাপাশি, নিজেদেরও সচেতন থাকতে হবে।’’ বাঁকুড়া স্বাস্থ্য-জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শ্যামল সোরেন জানান, এই সময় মানুষ বাড়ি থেকে যত কম বেরোবেন, ততই ভাল। তাঁর পরামর্শ, ‘‘প্রয়োজনে সপ্তাহে এক দিন বাজার করে খাবার মজুত রাখুন।’’