তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে সাংসদ সৌমিত্র খান ও বিধায়ক দীপালি সাহা। সোমবার সোনামুখীতে শুভ্র মিত্রের তোলা ছবি।
নির্দল গোঁজ প্রার্থীরা যে শাসকদলকে বাঁকুড়ায় দুর্ভাবনায় ফেলেছে, তা বারবার দলের নেতা ও প্রার্থীদের হাবেভাবে বোঝা যাচ্ছিল। এ বার সোমবার দলের তরফে জেলা পর্যবেক্ষক তথা সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীও শহরে সভা করতে এসে ওই নির্দলদের থেকে সতর্ক করে গেলেন। কোথাও তিনি সিপিএম, বিজেপি প্রভৃতি বিরোধী দলগুলির সঙ্গে নির্দল প্রার্থীদের সমালোচনা করলেন। কোথাও অবার বললেন, ‘‘চটের আড়ালে প্রার্থীর নাম না দেখে শুধু জোড়াফুল প্রতীক দেখে ভোটটা দিন।’’ এ থেকে দলের নিচুতলার কর্মীদের বক্তব্য, এ বার তৃণমূলের টিকিট না পেয়ে পাঁচ তৃণমূল কর্মী নির্দল হয়ে ভোটে দাঁড়িয়েছেন। তাঁদের যাতে সমর্থকরা ভুলেও ভোট না দেন, সে কথাই শুভেন্দুদা জানাতে চেয়েছেন।
শুধু ভোট না দেওয়াই নয়, তৃণমূলের বিক্ষুদ্ধ এই নির্দল প্রার্থীরা এলাকায় বলে বেড়াচ্ছেন, জয়ের পরে তাঁরা ফের তৃণমূলেই ফিরবেন। ফলে জিতলে এলাকার উন্নয়নে অসুবিধা হবে না। শুভেন্দুবাবু এ দিন তাঁ বক্তৃতায় পরিষ্কার করে দেন, ‘‘তৃণমূলের এতটা দুর্দিন এখনও আসেনি যে নির্দলদের সমর্থন নিয়ে আমাদের বোর্ড গড়তে হবে। টের সময় যাঁরা বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন, তৃণমূল কোনও দিন তাঁদের দলে ফেরার সুযোগ দেবে না।’’
শুভেন্দুবাবু শহরের তিনটি এলাকায় সভা করেন। রীতিমতো হোমওয়ার্ক করেই তিনি সভা করতে এসেছেন। যেমন হরেশ্বর মেলায় তিনি কংগ্রেসের সমালোচনায় জোর দেন। বস্তুত এই ২ নম্বর ওয়ার্ডটি দীর্ঘদিন ধরে কংগ্রেসের দখলে। এখানে তিনি বলেন, ‘‘আমরাই আসল কংগ্রেস। কলকাতাতেও বহু কংগ্রেস কাউন্সিলর তৃণমূলে যোগ করেছেন। তাঁরাও স্বীকার করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই প্রকৃত কংগ্রেসের ধারক ও বাহক।’’ এ ছাড়া গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি যে এই শহরে ভাল ভোট কেড়েছিল, সে খবর তিনি বিলক্ষণ জানেন। তাই একটি সভায় তিনটি সভায় বলেছেন, ‘‘লোকসভা ভোটের আগে খোদ নরেন্দ্র মোদী বাঁকুড়ায় প্রচারে এসেছিলেন। সভায় তিনি আশ্বাস দিয়েছিলেন, বেকারদের চাকরি দেওয়া হবে। তাই আবেগ তাড়িত হয়ে অনেক বেকার বিজেপিকে ভোট দিয়েছিলেন। এখন পদ্মফুল শুকিয়ে গিয়েছে। তাই আর ওই ভুল করবেন না।’’ বাঁকুড়ার ভৈরবস্থান, নতুনচটি ও হরেশ্বরমেলায় শুভেন্দুর সভায় ভালই লোক হয়েছিল বলে শাসকদলের দাবি। বিকেলে সোনামুখী ও রাতে বিষ্ণুপুরে তিনি সভা করেন।
বিষ্ণুপুরে শুভেন্দু মঞ্চে বলেন, ‘‘১৯ নম্বর ওয়ার্ডের নির্দল প্রার্থীকে একটি ভোটও দেবেন না।’’ দলের প্রতীক না পাওয়া ওই বিক্ষুদ্ধ ‘নির্দল’ প্রার্থী বিদায়ী পুরপ্রধান তথা মন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ বলে এলাকায় পরিচিত। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে শ্যামবাবুকে শুভেন্দুর সভায় দেখা যায়নি। এ নিয়ে কর্মীদের মধ্যে গুঞ্জন শুরু হয়। শ্যামবাবু ফোনও ধরেননি।
সোনামুখীতে শুভেন্দুর সভায় বিধায়ক দীপালি সাহাকে দেখা গেলেও এলাকার অপর বড় নেতা সুরজিৎ মুখোপাধ্যায়কে দেখা যায়নি। দীপালিদেবীর সঙ্গে সুরজিতের আকচাআকচি এলাকায় পরিচিত। সে জন্যই কি তিনি ওই সভা এড়িয়ে গেলেন? যদিও সুরজিতের দাবি, ‘‘ওই সময়েই আমার ওয়ার্ডে পূর্বঘোষিত পথসভার আয়োজন করা হয়েছিল। তাই যেতে পারিনি।’’