Kasba attempt to murder case

তৃণমূল কাউন্সিলরকে গুলি করার বরাত দিয়েছিলেন, পালানোর সময় গ্রেফতার ‘মূল ষড়যন্ত্রকারী’ ইকবাল

তদন্তকারীদের সূত্রে খবর, পালানোর চেষ্টা করছিলেন ইকবাল। বাংলা ছেড়ে অন্য রাজ্যে পালানোর পরিকল্পনা ছিল তাঁর। তবে তার আগেই পুলিশের হাতে গ্রেফতার হলেন তিনি।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা ও বর্ধমান শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০২৪ ১৬:০২
Share:

(বাঁ দিকে) তৃণমূল কাউন্সিলর সুশান্ত ঘোষ, গুলি চালানোর মুহূর্তের সিসিটিভি ফুটেজ (ডান দিকে)। —নিজস্ব চিত্র।

কসবার তৃণমূল কাউন্সিলর সুশান্ত ঘোষকে গুলি করে খুনের চেষ্টার ঘটনার ‘মূল ষড়যন্ত্রকারী’ আফরোজ় খান ওরফে মহম্মদ ইকবাল ওরফে গুলজ়ারকে এ বার পাকড়াও করল পুলিশ। তদন্তকারীদের সূত্রে খবর, পালানোর চেষ্টা করছিলেন তিনি। বাংলা ছেড়ে অন্য রাজ্যে পালানোর পরিকল্পনা ছিল তাঁর। তবে তার আগেই লালবাজারের গুন্ডা দমন শাখার আধিকারিকদের হাতে গ্রেফতার হলেন।

Advertisement

শুক্রবার সন্ধ্যায় সুশান্তকে লক্ষ্য করে পর পর দু’বার গুলি চালানোর চেষ্টা হয়। কিন্তু দু’বারই ব্যর্থ হন ভাড়া করা ‘শুটার’। ১০৮ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলরকে খুনের চেষ্টার অভিযোগে শুক্রবার রাতেই যুবরাজ সিংহ নামে এক তরুণকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাঁকে জেরা করেই পরিকল্পনার ছক স্পষ্ট হয়। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে ধৃত জানিয়েছেন, কাউন্সিলরকে ‘ভয় দেখানোর’ জন্য তাঁকে সুপারি দিয়েছিলেন জনৈক মহম্মদ ইকবাল। তিনিই পিস্তলের বন্দোবস্ত করেছিলেন। যুবরাজকে নাইন এমএম পিস্তলটি দিয়েছিলেন। তবে সুশান্তকে লক্ষ্য করে গুলি চালানোর সময় সেই পিস্তল কাজ করেনি।

তবে সুশান্তকে কেন খুনের চেষ্টা করা হয়েছিল, তা এখনও স্পষ্ট নয়। শুক্রবার রাতে তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছিল, স্থানীয় এক ব্যক্তি সুশান্তকে খুনের বরাত দিয়েছিলেন। তাঁর কথা মতো বিহার থেকে ‘শুটার’ ভাড়া করে আনা হয়। শনিবার প্রকাশ্যে আসে ইকবালের নাম। ধৃতের বয়ান অনুযায়ী, মাত্র ১০ হাজার টাকার জন্য সুশান্তকে খুনের চেষ্টা করেছিলেন। ইকবালের নাম জানার পর থেকেই তাঁর সন্ধান শুরু হয়। তদন্তকারীরা জানতে পারেন সীমানা পেরিয়ে অন্য রাজ্যে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন ইকবাল। তার পরই কলকাতা লাগায়ো প্রায় সব জেলাকে সতর্ক করা হয়। বাইকে করে পালানোর সময়ই বর্ধমানের গলসিতে ইকবালকে আটক করে পুলিশ। সূত্রের খবর, বাইক নিয়ে তিনি বিহারের জামুই যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন।

Advertisement

এই বাইকে চেপেই বিহারে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন ইকবাল। —নিজস্ব চিত্র।

ধৃত যুবরাজের জবানবন্দি থেকে পুলিশ জানতে পারে, ইকবালও বিহারের বাসিন্দা। লকডাউনের সময় থেকে ইকবাল বাইপাস সংলগ্ন এলাকায় থাকেন। সুশান্তকে খুন করার জন্য তিনি সরাসরি ‘শুটার’-এর সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। বিহারে তাঁর এক বন্ধুস্থানীয় ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেন। তিনিই আরও এক জনের মাধ্যমে ‘শুটার’ ভাড়া করেন। তার পরই খুনের পরিকল্পনা করা হয়। হাতে হাতে আড়াই হাজার টাকা পাবেন, ওই প্রতিশ্রুতি পাওয়ার পর বিহার থেকে দুই সঙ্গীকে নিয়ে শুক্রবার কলকাতায় আসেন যুবরাজ। বিহার থেকে হাওড়া ট্রেনে, তার পর ট্যাক্সি চেপে কলকাতা বন্দর এলাকায় উঠেছিলেন তাঁরা। সেখানে তাঁদের থাকার ব্যবস্থা করেছিলেন ইকবালই। যে ট্যাক্সি চেপে অভিযুক্তেরা ঘুরছিলেন, সেই ট্যাক্সির চালককে শনিবার গ্রেফতার করে পুলিশ।

অন্য দিকে, শনিবার ধৃত ‘শুটার’ যুবরাজকে আলিপুর আদালতে হাজির করানো হয়। আদালতে রাজ্যের পক্ষের আইনজীবী সৌরীন ঘোষালের সওয়াল, অভিযুক্ত বিহারের বৈশালী থেকে আসার পরই ‘লক্ষ্য’ ঠিক করে দেওয়া হয়। অভিযুক্ত ছাড়াও আরও লোক ছিলেন। তবে তাঁরা পালিয়েছেন। পুরো চক্রের হদিস চলছে। বৈশালীর আরও কয়েক জন এই ঘটনায় যুক্ত রয়েছেন। সুশান্তের আইনজীবী সুব্রত সরকার, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও আদালতে একই দাবি করেন। পাশাপাশি, তাঁরা আরও জানান, কেন এসেছিলেন, কে তাঁদের পাঠিয়েছিলেন, তা জানতে হবে। অভিযুক্তের পক্ষের আইনজীবী জামিনের আবেদন করলেও তা খারিজ হয়ে যায়। সওয়াল–জবাব শেষে অভিযুক্তকে ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।

উল্লেখ্য, শুক্রবার রাতের ঘটনার পরে সুশান্তের নিরাপত্তা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে কলকাতা পুলিশ। কাউন্সিলরের বাড়ির সামনে গার্ডরেল দেওয়া হয়েছে শনিবার। আগে সুশান্তের নিরাপত্তার জন্য কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল ব্রাঞ্চের দুই নিরাপত্তারক্ষী ছিলেন। এ বার নিরাপত্তা দ্বিগুণ করছে পুলিশ। সুশান্ত জানিয়েছেন, তাঁকে খুনের চেষ্টার পর দলের শীর্ষ নেতৃত্ব উদ্বিগ্ন। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ফোন করে তাঁর খোঁজ নিয়েছেন। একে একে তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী, দক্ষিণ কলকাতা জেলা তৃণমূলের সভাপতি দেবাশিস কুমারের সঙ্গে কথা হয়েছে সুশান্তের। তাঁর সঙ্গে দেখা করেছেন কলকাতার মেয়র তথা পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement