রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ। নিজস্ব চিত্র।
আশ্বাস মিলেছে বহু বার। সমাধান হয়নি। এ বছরও একই ছবি রামপুরহাট মেডিক্যালে। জল থৈ থৈ অবস্থা মেডিক্যাল চত্বরে। নোংরা আবর্জনা মিশ্রিত জল ডিঙিয়েই হাসপাতালে প্রবেশ করতে হচ্ছে রোগী, চিকিৎসক-সহ হাসপাতাল কর্মী, নার্সদের। হাসপাতালের জল নিকাশি ব্যবস্থার ত্রুটিতেই এই হাল বলে মনে করছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও।
হাসপাতালের কর্মীদের একাংশ জানিয়েছেন, ৫৯ কোটির বেশি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে শুরু থেকেই নিকাশি ব্যবস্থায় গলদ রয়েছে। হাসপাতালের কর্মীদের দাবি, অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকায় সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল তৈরি করা হয়েছে। হাসপাতাল তৈরির সময় যে পরিমাণ মাটি ভরাট করা দরকার ছিল সেই পরিমাণ মাটি ভরাট করা হয়নি বলে তাঁদের অভিযোগ। পরে যেভাবে নিকাশি ব্যবস্থা করা প্রয়োজন ছিল সে ভাবেও নিকাশি ব্যবস্থা করা হয়নি।
হাসপাতালের সুপার ও উপাধ্যক্ষ পলাশ দাস জানান, এখন জাতীয় সড়কের ধারে নিকাশি নালার সঙ্গে হাসপাতালের নিকাশি ব্যবস্থা যুক্ত। জাতীয় সড়কের ধারে নিকাশি নালার উপরে অনেকগুলি দোকান থাকায় হাসপাতালের জল বেরোতে পারত না। ফলে জল নিকাশিতে সমস্যা হত বলে তাঁর দাবি। পলাশ বলেন, ‘‘এ ব্যাপারে একাধিকবার প্রশাসনের সর্বস্তরে অভিযোগ জানানো হয়। সম্প্রতি নিকাশি নালার উপরে থাকা দোকান উচ্ছেদের ফলে জল নিকাশি ব্যবস্থায় কিছুটা সুরাহা হয়েছে।’’ কিন্তু তিন দিন ধরে টানা বৃষ্টিতে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের সামনে প্রচুর পরিমাণে জল জমে গিয়েছে বলে তিনি জানান। তিনটি পাম্প চালিয়েও জমা জল দূর করা যায়নি।
সোমবার সকালে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় ভোগান্তির ছবি। বৃষ্টি মাথায় হাসপাতালের বহির্বিভাগে নলহাটি থানার জয়পুর থেকে এসেছেন পিন্টু মাল। পেটের ব্যথার রোগী পিন্টুকে দেখাতে এসে রোগীর আত্মীয় পরিজনদের নোংরা জল পেরিয়ে হাসপাতালের ঢুকতে হল। নলহাটি থানার চণ্ডীপুর গ্রামের বাসিন্দা সেরফাতুন বিবিকে হাসপাতাল থেকে ছুটি দেয় এ দিন। ছেলে মুরসালিম শেখ মাকে কোলে নিয়ে হাসপাতালের সামনে জমে থাকা জল ডিঙিয়ে পেরোলেন। রামপুরহাট থানার নাইশরগ্রামের বাসিন্দা তপন মাল বললেন, ‘‘মেয়েকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালের সামনে জমে থাকা জল পেরিয়ে জরুরি বিভাগে নিয়ে যেতে হয়েছে।’’ অন্য রোগীর আত্মীয় পরিজনেরাও জানান, হাসপাতালের জমে থাকা জলের দুর্গন্ধেই অসুস্থ হওয়ার উপক্রম হচ্ছে।
মেডিক্যালের সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের এই পরিস্থিতি ২০১৬ সাল থেকে দেখে আসছেন হাসপাতালের কর্মী, চিকিৎসক, নার্স এবং রোগীর আত্মীয় পরিজনরা। এমন অবস্থায় সব চেয়ে বেশি সমস্যা হয় রোগী এবং রোগীর পরিজনদের। তাঁরা জানান, বহির্বিভাগে বা জরুরি বিভাগে রোগীদের দেখাতে গেলে বা ইন্ডোরে ভর্তি থাকা রোগীর সঙ্গে দেখা করতে গেলে হাঁটু জল ডিঙিয়ে হাসপাতালের ভিতরে ঢুকতে হচ্ছে।