গরু-বাছুর বিক্রি করছেন বগটুইয়ের বাসিন্দারা। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
ভবিষ্যৎ কোন দিকে গড়াবে তা জানে না বগটুই! সোমবারের ঘটনা এক লহমায় বদলে দিয়েছে গোটা গ্রামটাকে। তার পর মাঝে কয়েকটা দিন কেটে গেলেও গ্রামে আচমকা নেমে আসা ভয়ের পর্দাটা এখনও সরেনি। বরং রোজই ভিড় বাড়ছে পুলিশের। শনিবার গ্রামে পা রেখেছেন সিবিআই আধিকারিকরাও। তাই ‘হুজ্জুতি’ এড়াতে অনেকেই গ্রাম ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সোমবার রাতে বগটুই গ্রামের বাসিন্দা সোনা শেখের বাড়িতে পুড়ে মৃত্যু হয়েছিল সাত জনের। সোনার বাড়ির পিছনেই বাস করেন শাহ আলম শেখ। সোমবার থেকে দিন গড়িয়ে শনিবার হলেও এখনও ভয়ে কাঠ হয়ে আছেন শাহ আলম। কৃষিজীবী শাহ আলমের বাড়িতে গরু-বাছুর রয়েছে বেশ কয়েকটি। কিন্তু গ্রামে থাকার ‘ভরসা’ পাচ্ছেন না তিনি। তাই গবাদি পশু বিক্রি করে দিচ্ছেন তিনি।
এখনও আতঙ্কে সিঁটিয়ে আছে বগটুই। সোমবার রামপুরহাটের বড়শাল পঞ্চায়েতের উপপ্রধান ভাদু শেখ খুন হয়েছেন। ওই রাতেই অগ্নিদগ্ধ হয়ে সাত জনের মৃত্যু হয় একই গ্রামে। তার পর ঘটনার তদন্তভার পুলিশের হাত থেকে বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট)-এর হাতে। শেষে হাইকোর্টের নির্দেশে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা (সিবিআই)-র হাতে গিয়েছে তদন্তভার। কিন্তু গ্রাম থেকে ভয়ের আবহ সরেনি। গ্রামের অনেকে এখনও ঘরছাড়া। যাঁরা আছেন তাঁদের কেউ কেউ প্রস্তুতি নিচ্ছেন ভিটে ছাড়ার। দীর্ঘ দিন যত্নে লালনপালন করে এলেও, এখন শাহ আলমের মতো অনেকেই বিক্রি করে দিচ্ছেন গবাদিপশু।
কারণ জানতে চাইতেই শাহ আলমের গলায় ফুটে উঠল আতঙ্ক এবং সংশয়ের সুর। তাঁর বক্তব্য, ‘‘বাবা, কী হবে না হবে জানি না! আশপাশের ঘরেও তো কেউই নেই। গরু-বাছুর না থাকলে আমিও পালিয়ে যেতাম। এদের জন্যই শুধু পড়ে আছি। যদি পালাতেই হয় তা হলে এই গরু-বাছুর কী করব? তাই বিক্রি করে দিচ্ছি।’’
এত দিন ধরে পোষা গরু-বাছুর বিক্রি করে দেবেন, মন খারাপ লাগব না? শাহ আলমের উত্তর, ‘‘মন খারাপ লাগছে। কিন্তু কী করব? গত কাল তো চারটে ছোট ছোট ছাগল বিক্রি করে দিলাম।’’