অলিগলিতে নেশার ঠেক, ক্ষুব্ধ বাঁকুড়া

অলিগলি থেকে বাড়ির সামনে ফাঁকা জমিতে রাত নামলেই বসে যাচ্ছে নেশার ঠেক। মদ থেকে কাফ সিরাপ নিয়ে এক দল ছেলে রাতভর হল্লা করছে। স্থানীয় বাসিন্দা থেকে শাসকদলের নেতারাও এ নিয়ে সরব। কিন্তু, তারপরেও প্রকাশ্যে নেশাড়ুদের দাপট কেন কমছে না, সেই প্রশ্ন ঘুরছে বাঁকুড়া শহরে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০১৮ ০১:৩১
Share:

রাতে নেশা করা হয়েছে। সকালে বঙ্গ বিদ্যালয়ের মাঠে গড়াগড়ি খাচ্ছে কাশির সিরাপের বোতল। নিজস্ব চিত্র

অলিগলি থেকে বাড়ির সামনে ফাঁকা জমিতে রাত নামলেই বসে যাচ্ছে নেশার ঠেক। মদ থেকে কাফ সিরাপ নিয়ে এক দল ছেলে রাতভর হল্লা করছে। স্থানীয় বাসিন্দা থেকে শাসকদলের নেতারাও এ নিয়ে সরব। কিন্তু, তারপরেও প্রকাশ্যে নেশাড়ুদের দাপট কেন কমছে না, সেই প্রশ্ন ঘুরছে বাঁকুড়া শহরে।

Advertisement

বাঁকুড়া শহরের ধীবরপাড়া সংলগ্ন হরিশঙ্করবাবুর বেড় এলাকায় একটি ফাঁকা জায়গার কাছে কয়েকটি বাড়ি রয়েছে। সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, রাত নামলেই ওই ফাঁকা জায়গা দিনের পর দিন কার্যত নেশাড়ুদের দখলে চলে যায়। তাদের ঠেকাতে বাড়ির সামনে বসানো হয় বড় দরজা। তা সত্ত্বেও বন্ধ হয়নি।

বাসিন্দাদের আক্ষেপ, “আগে অনেকবার পুলিশকে এই সব ঘটনার কথা জানানো হয়েছে। কিন্তু লাভ হয়নি।’’ এক বাসিন্দা বলেন, “নেশার ঠেক বন্ধ করতে দরজা বসানো হয়েছে। কিন্তু তাতেও তাদের আটকানো যাচ্ছে না। পাঁচিল টপকে ঢুকে পড়ছে ওরা। অনুরোধ করেও লাভ হয়নি। বরং আগে শুধু রাতে ঠেক বসত, এখন দিনেও বসছে। কার কাছে আমরা যাব?” সেখান থেকে নেশার জিনিস বিক্রিবাটাও চলছে বলে বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ।

Advertisement

কেবল ওই এলাকাতেই নয়, অন্ধকার নামলেই বাঁকুড়া শহরের বিভিন্ন অলিগলি, পুকুরের পাড়, এমনকি প্রকাশ্য রাস্তার পাশেও মদের ঠেক চলছে বলে অভিযোগ তুলছেন বাসিন্দারা। এই সব রুখতে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন অনেকেই।

মাস খানেক আগেই মাচানতলা এলাকায় পরপর দু’দিন অভিযান চালিয়ে অবৈধ মদ আটক করেছিলেন বাঁকুড়ার উপপুরপ্রধান দিলীপ অগ্রবাল। শহরের প্রাণকেন্দ্র খোদ মাচানতলা এলাকাতেই যে রমরমিয়ে বেআইনি মদের ঠেক চলছে, তা ওই ঘটনায় প্রকাশ্যে এসে গিয়েছিল। তবে তার পরেও ওই ঠেক বন্ধ করা যায়নি বলে অভিযোগ তুলছেন অনেকেই। দিলীপবাবু বলেন, “পুরসভার পক্ষে তো মদের ঠেক বন্ধ করা সম্ভব নয়। এ জন্য পুলিশকে আরও সক্রিয় হতে হবে। শহরের বেশ কিছু জায়গাতেই নেশার ঠেক গজিয়ে উঠেছে। বেশ কিছু ঘটনা আমি পুলিশ ও প্রশাসনের নজরেও এনেছি।”

জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক তথা বাঁকুড়া শহরের যুগীপাড়ার বাসিন্দা জয়দীপ চট্টোপাধ্যায়ও বলেন, “বিভিন্ন এলাকায় নেশার ঠেক গজিয়ে ওঠার ব্যাপারটা আমাদেরও নজরে পড়েছে। দলীয় ভাবে এ নিয়ে আমরা ভাবনাচিন্তাও শুরু করেছি। এলাকার মানুষদের নিয়েই এর বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে।”

যদিও জেলা পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরার দাবি, “নেশার ঠেক চলার খবর পেলেই আমরা অভিযান চালাচ্ছি। এ ছাড়া কোনও এলাকা থেকে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলেও দ্রুত পদক্ষেপ করা হয়।” তাহলে নেশাড়ুদের এত বাড়বাড়ন্ত কী ভাবে? প্রশ্ন শহরবাসীর।

প্রতাপবাগানের বাসিন্দা সঙ্গীত শিল্পী জয়দীপ মুখোপাধ্যায়ের অভিজ্ঞতা, “অন্ধকার নামলেই প্রতাপবাগানের বিভিন্ন গলিতে বসে প্রকাশ্যে কিছু লোকজনকে মদ্যপান করতে দেখা যাচ্ছে। শুধু নেশা করাই নয়, চিৎকার করে অশ্রাব্য ভাষায় কথা বলে। টিউশন নিতে অনেক রাত পর্যন্ত এই এলাকা দিয়ে ছাত্রছাত্রীরা যাতায়াত করে। নেশাড়ুদের নিয়ে সকলেই ভয়ে অস্থির।’’

হাজরা গলি এলাকার এক বাসিন্দা জানাচ্ছেন, স্থানীয় হাজরা পুকুরের পাড়ে রাত হলেই একাধিক মদের ঠেক বসছে। কলেজ পড়ুয়া থেকে মাঝবয়সি লোকজনকেও সেই ঠেকে দেখা যাচ্ছে। তাঁর অভিযোগ, অবৈধ চোলাই মদও বিক্রি হচ্ছে এলাকায়।

‘আমরা সবাই একসাথে’ সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সমীরণ সেনগুপ্তের দাবি, “কয়েক বছর আগেও এমন পরিস্থিতি ছিল না বাঁকুড়া শহরে। এখন অলিগলিতে নেশার ঠেক চলছে। শহরের বাইপাস এলাকায় রাতের দিকে যাওয়াই দুষ্কর। কলেজ মোড় এলাকা সংলগ্ন বিভিন্ন সরকারি অফিসের আশপাশেও রাতে কিছু ছেলে মদ্যপান করে।’’

বাঁকুড়া বঙ্গ বিদ্যালয়ের মাঠে নেশার ঠেক চালানোর অভিযোগ দীর্ঘদিনের। বছর খানেক আগেই স্কুলের মাঠে অবৈধ কাজকর্ম রুখতে দখলদারদের হটিয়ে কিছুটা অংশ পাঁচিল দিয়ে ঘিরে দেয় প্রশাসন। কিন্তু তার পরেও পরিস্থিতি বদলায়নি। প্রায় দিনই ওই স্কুলের মাঠে মদ ও কাফ সিরাপের বোতল ইত্যাদি পড়ে থাকতে দেখা যায়। ওই স্কুল সূত্রে জানা যাচ্ছে, সম্প্রতি একটি বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগে স্কুলের মাঠটিতে কিছু চারা গাছ লাগানো হয়েছিল। রাতে দুষ্কৃতীরা সেই চারাগাছ নষ্ট করে দিয়েছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক অনিমেষ চৌধুরী বলেন, “স্কুলের মাঠে অবৈধ কাজকর্মে আমরা নাজেহাল।’’ নাট্যব্যক্তিত্ব মধুসূদন দরিপা বলেন, “রাতের বেলায় বাঁকুড়া শহরে সুস্থ মানুষদের ঘোরাঘুরি করাই দায় হয়ে পড়ছে। পুলিশ এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলির সক্রিয়তা প্রয়োজন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement