অঝোরে: হঠাৎ নামল বৃষ্টি। মেলায় মাথা বাঁচাতে হাতে ছাতা। শনিবার শান্তিনিকেতনে। —নিজস্ব চিত্র
হঠাৎ নামা বৃষ্টিই এবার ভেস্তে দিল শান্তিনিকেতনের অন্যতম বৈচিত্র্যময় মেলা আনন্দবাজার। নিম্নচাপের একটানা বৃষ্টিরর জন্য এই বছর আনন্দবাজার নাট্য ঘরে বলবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। এই মেলার বিক্রেতারা বিশ্বভারতীর বিভিন্ন বিভাগের ছাত্রছাত্রী। তাঁদের হাতে তৈরি বিভিন্ন পসরা, খাদ্য সামগ্রী নিয়ে নাট্য ঘরে স্টল সাজানাও শুরু হয়েছিল। কিন্তু খেয়ালি আবহাওয়া সকালের পরে একটু একটু করে যখন সোনালি রোদ নিয়ে শরতের হাসি হাসছে তখন আয়োজকেরা তড়িঘড়ি ঠিক করেন রীতি মেনে শালবীথির ফাঁকে গৌর প্রাঙ্গণেই মেলা বসবে। প্রতি বছর বিকেল তিনটে থেকে রাত আটটা পর্যন্ত একদিনের এই মেলা বসে। আচমকা সিদ্ধান্ত বদলানোয় এবার মেলা বসতেও একটু সময় লেগে যায়। কিন্তু মেলা জমে ওঠার আগেই ঝেঁপে বৃষ্টি নামায় ভেসে গেল আনন্দ বাজার। কাগজের ফুল, মাটির পাখি, আরও যত পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন ছাত্র-ছাত্রীরা সব গেল ভিজে। ফুচকা, ঘুগনি, পিঠে, মিষ্টির মতো খাবারে জল ঢুকে নষ্ট হল সব।
শান্তিনিকেতনে প্রথম এই মেলা শুরু হয় ১৯১৫ সালে। রবীন্দ্রনাথের ভাবনা থেকেই এই মেলার সূচনা হয়েছিল। শান্তিনিকেতনে থাকাকালীন রবীন্দ্রনাথ মেলায় প্রতিবার যেতেন। কবিগুরুর সময় থেকেই মেলা বসে গৌর প্রাঙ্গণে। মেলার ক্রেতা শিক্ষক, অভিভাবকেরা আর বিক্রেতা পড়ুয়ার দল। ছাত্র-ছাত্রীদের কল্পনার বিকাশ, উদ্ভাবন ক্ষমতা ও নতুনত্বের পরিচয় , সর্বোপরি সৃজনশীল সৌন্দর্য বোধের বিকাশ ঘটাতেই এই মেলা শুরু করেছিলেন কবিগুরু। একই সঙ্গে লাভ ক্ষতির হিসেব কষে লাভের টাকা বিশ্বভারতীর কর্মী মণ্ডলীর সেবা শাখার দরিদ্র ভান্ডারে জমা দেওয়ার রীতি আজও চলে আসছে।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মেলায় বদল এসেছে। পুতুল, মালা, মুখোশ, সরা, কার্ড-এর মতো জিনিসপত্রের বদলে খাবারের দোকান বেড়েছে। আগে দোকানও সাজানো হতো ফুল পাতা, রঙিন শাড়ি, রঙিন কাগজ দিয়ে। একের পর এক মাটির কলসিতে আলপনা এঁকে তোরণ বানানো হতো। মেলায় ম্যাজিক, সার্কাস, খেলার সরঞ্জাম, হস্ত শিল্প, লটারি, প্রদর্শনী থাকতো। আর থাকতো অসাধারণ ফুলের সাজ। যা হার মানাতো যে কোনও গয়নাকে। এবারও এই মেলায় বেশিরভাগই ছিল খাবারের দোকান। ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামায় খোলা আকাশের নীচে থাকা দোকান গুটিয়ে নিতে সময় পাননি ছাত্র-ছাত্রীরা। নষ্ট হয় বেশিরভাগ সামগ্রীই। যতটুকু সময় মেলা চলেছে তাতে বিশেষ বেচাকেনা হয়নি বলেই আপশোস করেছেন পড়ুয়ারা। এবার আনন্দ বাজারে পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন বিশ্বভারতীর ছাত্রী তৃষা চৌধুরী, শ্রেয়শী মুখোপাধ্যায়রা। তাঁরা বলেন, ‘‘সবে বিক্রি শুরু করেছিলাম, বৃষ্টি এসে সব নষ্ট করে দিল। এবার মেলা নাট্য ঘরে হলেই ভাল হতো।’’
বিশ্বভারতী শিক্ষাসত্রের অধ্যাপক কৃষ্ণেন্দু দে বলেন, ‘‘মেলা হওয়ার কথা ছিল নাট্যঘরে কিন্তু শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করার ফলে বৃষ্টিতে পুরো মেলাটি ভেস্তে গেল। এত জিনিস নষ্ট হল। বিক্রি না হওয়ায় ছাত্রছাত্রীরা আর্থিক ক্ষতির শিকার হল।’’ কিন্তু বৃষ্টির পূর্ভাভাস থাকা সত্বেও কেন চটজলদি স্থান বদলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হল সেই প্রসঙ্গে বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত জনসংযোগ আধিকারিক অনির্বাণ সরকার বলেন, ‘‘যেহেতু দুপুরের দিকে বৃষ্টি ধরেছিল, তাই আমরা ঐতিহ্য মেনে গৌর প্রাঙ্গণে আনন্দবাজার মেলা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু হঠাৎ বৃষ্টি নামার ফলে মেলা জমে উঠতে পারল না।’’