এ বার বাড়ি ফেরা হল না জগন্নাথের

এ বারে আর মাসির বাড়ি ঘুরে বাড়ি আসা হল না জগন্নাথের। কোনও ক্ষোভ কিংবা অভিমানে নয়। যাওয়ার পথে প্রাকৃতিক দুর্যোগই আটকে দিল তার রথের চাকা। তিন বছরের প্রথা ভেঙে তাই এ বারই তাকে মাসির বাড়ি দর্শন না করেই ফিরতে হচ্ছে নিজের ঘরে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নানুর শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০১৫ ০০:৪৯
Share:

এ বারে আর মাসির বাড়ি ঘুরে বাড়ি আসা হল না জগন্নাথের। কোনও ক্ষোভ কিংবা অভিমানে নয়। যাওয়ার পথে প্রাকৃতিক দুর্যোগই আটকে দিল তার রথের চাকা। তিন বছরের প্রথা ভেঙে তাই এ বারই তাকে মাসির বাড়ি দর্শন না করেই ফিরতে হচ্ছে নিজের ঘরে। প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী, পুরীর জগন্নাথও সোজা রথের যাত্রা শেষে মাসির বাড়ি যান। সাত দিন কাটিয়ে ফেরেন উল্টো রথে। নানুরেও এত দিন ওই প্রথা মানা হয়েছে। সোজা রথের যাত্রা শেষে রথে চড়ে জগন্নাথ হাজির হয়েছেন লাগোয়া সাকুলিপুরে। সাত দিন সেখানে মহা সমাদরে কাটিয়ে উল্টো রথে ফিরেছেন নানুরে। কিন্তু, এ বারে বাদ সেধেছে প্রাকৃতিক বিপর্যয়। টানা কয়েক দিনের বৃষ্টিতে ওই এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। ঘরবাড়ি ভেঙেও যায় অনেকের। তাই মাসির বাড়ি আর যাওয়া ওঠেনি জগন্নাথের। স্থানীয় রক্ষাকালী তলার একটি মণ্ডপে কাটিয়ে আজই পশ্চিমপাড়ার নিজের মন্দিরে ফিরতে হচ্ছে তাকে। এতে স্বয়ং জগন্নাথের কতটা দুঃখ হয়েছে জানা না গেলেও মনখারাপ সাকুলিপুরের বাসিন্দাদের। বধূ বিনোদিনী মাঝি, শ্যামলী মণ্ডলরা বলেন, ‘‘প্রাকৃতিক দুর্যোগে আমাদের অনেকেরই ঘরবাড়ি ভেঙেছে। জল-কাদায় একাকার হয়ে রয়েছে জগন্নাথের থাকার নির্ধারিত জায়গা। তাই বোনপোকে এ বার আর আমরা আনতে পারিনি। তিন বছর ধরে সাতটা দিন কেমন জমজমাট হয়ে থাকত আমাদের পাড়া। এবারে ফাঁকা ফাঁকাই কেটে গেল।’’ তা বলে উৎসাহে কোনও ঘাটতি নেই। সাকুলিপুরের কচিকাঁচা থেকে বধূ, দু’বেলাই ভিড় জমিয়েছেন রক্ষাকালী তলায়। ষষ্ঠ শ্রেণির অভি মণ্ডল, প্রিয়া মণ্ডলরা বলছে, ‘‘রথের মেলায় আমরা প্রতি দিনই খুব ঘুরেছি। পাঁপড়, আইসক্রিম খেয়ে মজা করেছি।’’

Advertisement

রবিবার স্থানীয় বাসিন্দা পিন্টু কারক, সাধন মাঝিরা জানান, প্রতিকূল পরিস্থিতির জন্য এ বার আমরা জগন্নাথকে পাড়ায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। তার জন্য সবারই মন খারাপ। সম্ভব হলে আগামী বছর থেকে আবার তাকে আনার আয়োজন করা হবে। তবে, সব মনখারাপকে ছাপিয়ে গিয়েছে নানা অনুষ্ঠান। মেলা তো ছিলই, ছিল নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও। নানুর ফুটবল ক্লাব পরিচালিত ওই সব অনুষ্ঠানের পাশাপাশি একদিনে ফুটবল প্রর্দশনী ম্যাচও জমিয়ে দিয়েছিল রথের মেলা।

প্রসঙ্গত, এক সময় নানুরে সেই অর্থে কোনও রথযাত্রা ছিল না। আর্থিক প্রতিকূলতার কারণে রথযাত্রা উৎসব করতে না পারায় বোলপুরের একটি বনেদিবাড়ি রথ ওই এলাকার একটি ক্লাবের হাতঘুরে ২০১২ সালে পৌঁছয় নানুরের ‘হরি গুণানুকীর্তন মহোৎসব কমিটি’র হাতে। সেই থেকেই ওই কমিটির পরিচালনায় নানুরে রথযাত্রা উৎসবের সূচনা হয়। কমিটির অন্যতম কর্ণধার সুনীল মুর্ম, বিশ্বম্ভর লাহারা বলেন, ‘‘নানুরের বাসিন্দারের আগ্রহেই আমরা বোলপুরের থেকে ওই রথ এনে রথযাত্রা উৎসব শুরু করেছিলাম।’’

Advertisement

এ দিকে, রথযাত্রা উৎসব কমিটির উপদেষ্টা তথা স্থানীয় বিধায়ক গদাধর হাজরা, সভাপতি তথা তৃণমূলের নানুর ব্লক সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্যরা বলছেন, ‘‘তিন বছরেই নানুরের রথযাত্রা সর্বজনীন রূপ পেয়েছে। তাই ওই রথযাত্রাকে টিকিয়ে রাখতে আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement