বকেয়া কর আদায়ে তৎপর রঘুনাথপুর পুরসভা প্রতীকী চিত্র।
কোনও দফতরের বকেয়া ১০ লক্ষের বেশি। কোনও ক্ষেত্রে তা আবার কোটির অঙ্ক ছুঁয়েছে। পুরসভা এলাকায় থাকা সরকারি অফিসগুলি থেকে বিপুল পরিমাণ বকেয়া কর আদায়ে শেষমেষ তৎপর হয়েছে তৃণমূল পরিচালিত রঘুনাথপুর পুরসভা। সূত্রের খবর, এ পর্যন্ত হিসাব কষে পুর-কর্তৃপক্ষ দেখেছেন, পুর-এলাকায় থাকা ১৫টি সরকারি দফতরের বকেয়া করের মোট পরিমাণ দুই কোটি ছাড়িয়েছে। কর আদায়ে দফতরগুলির কাছে আইনি নোটিস পাঠাতে শুরু করেছেন পুর-কর্তৃপক্ষ। পুরপ্রধান তরণী বাউরি বলেন, ‘‘পুর-এলাকার মধ্যে থাকা প্রায় সব দফতরই দীর্ঘসময় ধরে কর বকেয়া রেখেছে। কর আদায়ে বাধ্য হয়ে তাই কড়া পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে।”
হঠাৎ কেন পদক্ষেপ? সূত্রের খবর, পুরসভার নিজস্ব তহবিলের অবস্থা শোচনীয়। ছোট পুরসভা হওয়ায় পুরসভার নিজস্ব আয় বলতে কার্যত কিছু নেই। কয়েক রকমের ‘হোল্ডিং’ ট্যাক্স-সহ জন্ম-মৃত্যুর শংসাপত্র, বাজারের ডাক, ট্রেড লাইসেন্স, জলের কর—এ গুলি থেকে মূলত আয় হয় পুরসভার। তবে আয়ের চেয়ে ব্যয়ের বহর অনেক বেশি হওয়ায় সমস্যা হচ্ছে বলে দাবি পুর-কর্তৃপক্ষের।
সূত্রের খবর, বর্তমানে পুরসভার মাসে আয় হয় সাড়ে পাঁচ লক্ষের কিছু বেশি। সেখানে পুরসভার চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের বেতন দিতেই খরচ হয় কম-বেশি পনেরো লক্ষ টাকা। এ ছাড়া, পুরসভার কর্মীদের বেতন ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের পেনশনের একাংশ দিতে হয় পুরসভাকে। নিয়ম অনুযায়ী স্থায়ী কর্মীদের বেতনের তিরিশ শতাংশ দিতে হয় পুরসভাকে। সেই খাতে খরচ হয় বছরে কম-বেশি তিরিশ লক্ষ টাকা। অবসপ্রাপ্ত কর্মীদের পেনশন দিতে খরচ হয় কুড়ি লক্ষের বেশি টাকা। এ ছাড়া, পুরসভার নিজস্ব কিছু খরচ রয়েছে।
পুর-কর্তৃপক্ষের দাবি, পুরসভার খরচ চালাতে দৈনিক এক থেকে দেড় লক্ষের বেশি টাকা আয় করতে হবে পুরসভাকে। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে তা হচ্ছে না। তাই সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্র থেকে বকেয়া কর আদায়ে নজর দেওয়া হয়েছে। পুর-কর্তৃপক্ষর দাবি, হিসাব করে দেখা যাচ্ছে পুর-এলাকার মধ্যে থাকা রঘুনাথপুর ১ পঞ্চায়েত সমিতির কার্যালয় বকেয়া রেখেছে ১ কোটির বেশি টাকা। পঞ্চায়েত সমিতির কমিউনিটি হলের কর বাবদ বকেয়া আছে দশ লক্ষাধিক টাকা। পূর্ত দফতরের কার্যালয় ও পরিদর্শন বাংলো থেকে বকেয়া আছে সাড়ে ছয় লক্ষের বেশি টাকা। একই ভাবে কর বকেয়া আছে স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ দফতর-সহ প্রায় সমস্ত দফতরেরই। পুরপ্রধান বলেন, ‘‘নিয়ম অনুযায়ী পুর-এলাকার মধ্যে থাকা সরকারি কার্যালয়গুলি পুরসভাকে হোল্ডিং ট্যাক্স দেবে। কিন্তু তারা দীর্ঘসময় কর বকেয়া রেখেছে। সরকার অফিস হওয়ায় কর আদায়ে কিছুটা ছাড় দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রচুর কর বকেয়া থাকায় বাধ্য হয়ে কর আদায়ে তৎপর হতে হয়েছে।”
এ ছাড়া, বেসরকারি অফিস, ছোট-বড় দোকান, হোটেল, লজ, বড় বেসরকারি নির্মাণ— এ ধরনের ক্ষেত্র থেকেও ভাল কর বকেয়া আছে পুরসভার। সরকারি ক্ষেত্রের পাশাপাশি এ সব দিকেও কর আদায়ে তৎপর হচ্ছে পুরসভা। পুরপ্রধান বলেন, ‘‘শহরে রাস্তা, নর্দমা তৈরি-সহ বড় মাপের কাজ রাজ্যের দেওয়া তহবিল থেকে করা হয়। কিন্তু ছোটখাটো অথচ প্রয়োজনীয় উন্নয়নমূলক কাজের জন্য রাজ্য অর্থ দেয় না। সেই কাজ করতে হয় পুরসভার নিজস্ব তহবিল থেকে। ছোট শহর হওয়ায় পুরসভার আয় কম। তাই উন্নয়নমূলক কাজ করতে ও পুরসভার খরচ চালাতে বকেয়া কর আদায়ই এখন আমাদের অন্যতম লক্ষ্য।”