— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
বাজেটে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন একশো দিন কাজের প্রকল্পে (মনরেগা) বরাদ্দ বাড়িয়েছেন। গত বছর ওই প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল ৬০ হাজার কোটি টাকা। এ বার তা বেড়ে করা হয়েছে ৮৬ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু এ রাজ্যে ওই প্রকল্পে কয়েক বছর ধরে কাজ দেওয়া বন্ধ রেখেছে কেন্দ্র। তাই পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ার দিন আনা দিন খাওয়া মানুষজনের প্রশ্ন, ‘‘কেন্দ্র বরাদ্দ বাড়ালেও আমরা তার সুফল পাব কী করে?’’ দ্রুত কেন্দ্র-রাজ্য জটিলতা কাটিয়ে প্রকল্পে কাজ দেওয়ার দাবি তুলেছেন তাঁরা।
করোনা পরিস্থিতিতে ফিরে আসা পরিযায়ী শ্রমিকদের রোজগারের দিশা দেখিয়েছিল একশো দিনের কাজের প্রকল্প। স্থায়ী কাজ পাওয়ায় অনেকে আর ভিন্ রাজ্যে ফিরে যাননি। কিন্তু প্রকল্পে কাজ দেওয়া বন্ধ হওয়ায় ফের তাঁরা ভিন্ রাজ্যমুখী হয়েছেন।
এ দিকে কাজ নেই। বৃষ্টি আশানুরূপ না হওয়ায় জমিতে দিনমজুরির কাজের সুযোগও তেমন নেই। অন্য দিকে, দ্রব্যমূল্যের মূল্যবৃদ্ধিতে জেরবার প্রান্তিক শ্রেণির মানুষজন।
মানবাজার ১ ব্লকের জিতুজুড়ি পঞ্চায়েতের নডিহার জবকার্ড প্রাপক সমলা মাহাতো ও তাঁর স্বামী জিতেন মাহাতোর কথায়, ‘‘জমি যেটুকু রয়েছে, তাতে মাস পাঁচ-ছয়েকের ভাতের সংস্থান হয়। কিন্তু বৃষ্টি না হলে চাষটুকুও হবে না। বাকি সময়ে ভরসা দিনমজুরি। সে কাজও রোজ নেই। একশো দিনের কাজ আড়াই বছর বন্ধ।’’ জিতেনের দাবি, ব্যাঙ্কে সমস্যা থাকায় মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া বকেয়া মজুরির টাকাও পাননি। পুরুলিয়া ২ ব্লকের বেলমা পঞ্চায়েতের রঘুডির শ্রমিক গাজু কৈবর্তের আক্ষেপ, সংসার চালাতে ভরসা ছিল একশো দিনের কাজ। সংসার কী ভাবে চলবে?
তবে বিকল্প হিসেবে রাজ্য সরকার কর্মশ্রী প্রকল্পে জবকার্ড প্রাপকদের বছরে ৫০ দিন কাজ দেওয়ার কাজ শুরু করেছে। পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন জানাচ্ছে, কর্মশ্রী প্রকল্পে যাঁরা কাজ চাইছেন, তাঁদের কাজ দেওয়া হচ্ছে। বাঁকুড়ার জেলা শাসক সিয়াদ এন বলেন, “কর্মশ্রী প্রকল্পের মাধ্যমে জেলার প্রায় দেড় লক্ষ শ্রমিক ইতিমধ্যেই কাজ পেয়েছেন। আরও বেশি শ্রমিককে কাজে যুক্ত করার চেষ্টা চলছে।’’
যদিও বহু শ্রমিক এখনও কর্মশ্রীতে কাজের ডাক পাননি বলেই অভিযোগ তুলেছেন। ইঁদপুরের হীরাশোলের শ্রমিক শৈলেন বাউরি ও প্রবীর বাউরির দাবি, “একশো দিনের কাজ চালু হওয়া খুব দরকার। রাজ্য সরকার কাজ দেবে বলে শুনছিলাম। কিন্তু কাজ পাইনি। স্থানীয় পঞ্চায়েতে মাঝেমধ্যেই খোঁজ নিচ্ছি।”
নীতি আয়োগের রিপোর্ট অনুযায়ী পুরুলিয়া রাজ্যের দরিদ্রতম জেলা। রাজ্যে একশো দিনের কাজের প্রকল্পে শ্রমিদের অধিকার নিয়ে কাজ করা ‘পশ্চিমবঙ্গ খেত মজুর সমিতি’-র রাজ্য কমিটির সদস্য অনুরাধা তলোয়ার বলেন, ‘‘পুরুলিয়া জেলার বহু মানুষ সংসার চালাতে একশো দিন কাজের প্রকল্পের উপরে নির্ভরশীল। অথচ বাজেট তাঁদের কোনও দিশা দেখাতে পারেনি।’’ সংগঠের পুরুলিয়ার দায়িত্বে থাকা প্রেমচাঁদ মাইতির দাবি, তহবিল নয়ছয়ের অভিযোগে বছরের পর বছর শ্রমিকেরা কাজ পাবেন না, এটা কেন চলবে? গাফিলতি থাকলে খুঁজে বের করে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নিক সরকার। তাই বলে শ্রমিকদের বঞ্চনা মেনে নেওয়া যায় না। তিনি জানান, অগস্ট মাস থেকে ফের শ্রমিকদের নিয়ে তাঁরা রাস্তায় নামতে চলেছেন।