ভরসা এই স্প্রেয়ার।
রাজ্য জুড়ে ডেঙ্গির আতঙ্ক। ঘরে বাইরে মশার উপদ্রবে নাজেহাল শহরবাসী চাইছেন অবিলম্বে নিজেদের ওয়ার্ডে মশা মারতে কামান দাগা হোক। পথে ঘাটে এই নিয়ে মানুষের প্রশ্নের মুখেও পড়ছেন কাউন্সিলরেরা। পরিস্থিতি এমনই দাঁড়িয়েছে যে দু’টি ফগিং মেশিন নিয়ে সব কটি ওয়ার্ড সামলাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে বাঁকুড়া পুরসভা।
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যে বাঁকুড়া পুরএলাকার চার জন বাসিন্দা ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়েছেন। সোমবার থেকে ফগিং মেশিন নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় মশা নিধন অভিযান শুরু করেছে পুরসভা। বুধবার পুরসভার ২০ ও ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে এই অভিযান চালানো হয়। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, তিন দিনে মোট চারটি ওয়ার্ডে অভিযান হয়েছে। এখনও বাকি ২০টি ওয়ার্ড। এ দিকে কমবেশি প্রতিটি ওয়ার্ডেই মশার উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন এলাকাবাসী। কাউন্সিলরদের কাছে ইতিমধ্যেই বাসিন্দাদের অনেকে গিয়ে তাঁদের এলাকায় আগে ফগিং মেশিন আনানোর দাবি জানিয়ে গিয়েছেন। তাঁদের বোঝাতে গিয়ে নাজেহাল হচ্ছেন কাউন্সিলররা। শহরের এক নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর দেবাশিস লাহা বলেন, “ওয়ার্ডে মশার উপদ্রবে অনেকেই আতঙ্কিত। আমাদের কাছে দ্রুত ফগিং মেশিন দিয়ে মশা মারার অভিযান চালাতে আবেদন করেছেন। আমি বিষয়টি পুরপ্রধানকে জানিয়েছি।” শহরের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর হিরণ চট্টরাজ বলেন, “রাজ্যে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে শুনেই আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন মানুষ। আমরা তাঁদের আশ্বস্ত করছি।”
বাঁকুড়ার কংগ্রেস বিধায়ক তথা শহরের ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শম্পা দরিপা অবশ্য পুরসভার ভূমিকা নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন। তাঁর দাবি, তিনি পুরপ্রধান থাকাকালীন পুরসভার ফান্ড থেকে একটি ফগিং মেশিন কেনা হয়েছিল। দীর্ঘদিন ধরে সেটি বেহাল হয়ে পড়ে রয়েছে। তাঁর দাবি, বর্ষা শুরুর আগে সেই মেশিনটি সারিয়ে নিলে সমস্যা অনেকটাই কমে যেত। শম্পাদেবী বলেন, “বর্ষা শুরুর আগেই ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে বেড়ে ওঠা আগাছা, ঝোপঝাড় পরিষ্কার করা দরকার ছইল। কিন্তু পুরসভা সেই কাজ করেনি। মশা নিধনে নামতেও অনেকটাই দেরি হয়ে গিয়েছে।” যদিও অভিযোগ উড়িয়ে পুরপ্রধান মহাপ্রসাদ সেনগুপ্ত পাল্টা বলেন, “ওই মেশিনটি শম্পাদেবীর আমল থেকেই খারাপ হয়ে রয়েছে। আমরা সারানোর ব্যবস্থা করছি। তবে সময় লাগবে।” পুরপ্রধানের দাবি, কাউন্সিলরদের কথা মতো প্রতিটি ওয়ার্ডেই আগাছা সাফাই হচ্ছে। এলাকাবাসীরাও চাইলে পুরসভায় আগাছা পরিষ্কারের জন্য যোগাযোগ করতে পারেন বলে তিনি জানিয়েছেন।
এ দিন পুরসভায় স্বাস্থ্য কর্মীদের নিয়ে একটি বৈঠক করে পুরপ্রধান ডেঙ্গি বিষয়ে সাধারণ মানুষের সচেতনতা গড়ে তোলায় জোর দেওয়ার কথা বলেন। তিনি প্রতিটি ওয়ার্ডে মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সচেতন করতে নির্দেশ দিয়েছেন স্বাস্থ্য কর্মীদের। তাঁর আশ্বাস, “আমরা রুটিন তৈরি করে প্রতিটি ওয়ার্ডে মশা মারার অভিযান চালাচ্ছি। কোনও ওয়ার্ডই বাদ পড়বে না।” এ দিন জেলায় নতুন করে ডেঙ্গি আক্রান্তের কোনও খবরও নেই বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। —নিজস্ব চিত্র