হত্যাকাণ্ডের পর কুরবান আনসারির বাড়িতে পুলিশ। —নিজস্ব চিত্র।
জমি বিবাদের জেরে খুন হলেন পুরুলিয়ার আদ্রা এলাকার এক সময়ের ত্রাস কুরবান আনসারি। শনিবার সকালে আদ্রা থানার বেনেডালা গ্রামে তাঁকে রড, লাঠি, শাবল দিয়ে ব্যাপক মারধর করার অভিযোগ উঠল তাঁর কয়েক জন আত্মীয়ের বিরুদ্ধে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় কুরবানকে রঘুনাথপুর সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
কুরবান এক সময় শুধু পুরুলিয়া নয়, আশপাশের জেলা এমনকি, পার্শ্ববর্তী ঝাড়খণ্ড রাজ্যেও কার্যত ত্রাস ছিলেন। বছর পঞ্চাশের এই কুরবান পুলিশের নথিতে একজন ‘দাগী দুষ্কৃতী’ হিসাবেই চিহ্নিত। তাঁর বিরুদ্ধে পুরুলিয়া ছাড়াও আশপাশের জেলা এবং ঝাড়খণ্ডের বিভিন্ন থানায় ডাকাতি, ছিনতাই, মাদক পাচার-সহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে জেলে থাকার পর সম্প্রতি জামিনে মুক্ত হয়েছিলেন তিনি।
স্থানীয় সূত্রে খবর, জেল থেকে বেরিয়ে অপরাধ জগতের সঙ্গে সমস্ত রকম সম্পর্ক ছিন্ন করে নিজের বেনেডালা গ্রামের বাড়িতেই বসবাস করছিলেন কুরবান। নিজের জমিতে চাষাবাদ ছাড়াও নির্মাণ সামগ্রী সরবরাহের ব্যবসা দেখাশোনা করতেন তিনি। সম্প্রতি জমিজমা নিয়ে আত্মীয়দের সঙ্গে বিবাদ শুরু হয় কুরবানের। কুরবানের পরিবারের দাবি, সেই বিবাদের কারণেই শনিবার সকালে বেশ কয়েক জন আত্মীয় হাতে রড, লাঠি নিয়ে চড়াও হন কুরবানের উপর। প্রথমে বচসা শুরু হলেও আত্মীয়েরা পরে এলোপাথাড়ি মারতে শুরু করে কুরবানকে। গুরুতর জখম হয়ে ঘটনাস্থলেই লুটিয়ে পড়েন তিনি। এর পরেই হামলাকারীরা এলাকা থেকে পালিয়ে যান। পরে কুরবানকে উদ্ধার করে রঘুনাথপুর সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে নিয়ে যান পরিবারের লোকেরা। সেখানেই তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। মৃত কুরবান আনসারির ভাইপো শরিফ আনসারি বলেন, ‘‘চাচা সকালে পুকুরে গিয়েছিলেন। ফেরার পথে জমির আলপথে আত্মীয় আকবর আনসারির সঙ্গে দেখা হয়। আকবরের সঙ্গে জমির দখল নিয়ে বচসা হয় প্রথমে। এর পরেই বেশ কয়েক জন জড়ো হয়ে চাচাকে মারতে শুরু করে। আমি বাধা দিতে গেলে আমাকে হামলাকারীরা সরিয়ে দেয়। এর পর চাচাকে সেখানেই ওরা মেরে ফেলে পালিয়ে যায়। আমরা দোষীদের ফাঁসি চাই।’’
ঘটনার পর এলাকায় উত্তেজনা থাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়। গ্রামে বসানো হয় পুলিশ পিকেট। পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। এখনও পর্যন্ত এই ঘটনায় কেউ গ্রেফতার হয়নি।’’