রমনিতা শবর। ফাইল চিত্র।
দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করে খেড়িয়া শবরদের মহিলাদের মধ্যে প্রথম স্নাতক হয়ে ইতিহাসের শরিক হয়েছেন পুরুলিয়ার বরাবাজারের ফুলঝোরের রমণিতা শবর। আগামী বিধানসভা ভোটের প্রচারে সেই শবর-কন্যাকেই জেলার ‘ব্র্যান্ড অ্যাম্বাস্যাডর’ ঘোষণা করল পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন।
বুধবার পুরুলিয়ার জেলাশাসক অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রমণিতা লড়াই করে নিজেকে তুলে এনেছেন। বিধানসভা নির্বাচনে ভোটদানে উৎসাহ দিতে আমরা সেই রমণিতাকেই জেলার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাস্যাডর হিসেবে ঘোষণা করছি।’’
পুরুলিয়ায় জেলাশাসকের সঙ্গে এ দিন দেখা করেন রমণিতা। তাঁকে প্রশাসন ভোটদানে উৎসাহ দেওয়ার জন্য নির্বাচন করেছে শুনে উচ্ছ্বসিত রমণিতা বলেন, ‘‘ভাল লাগার মতোই খবর। জেলার সমস্ত মানুষের কাছে আমার আবেদন, নির্ভয়ে, নির্দ্বিধায় ভোটে যোগ দিন। আমাদের সরকার, আমরাই গড়ব। এটাই আমাদের গণতন্ত্রের ভিত। তবে কোভিড-পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে মাস্ক-ও পরতে হবে এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।’’
প্রশাসন সূত্রের খবর, রমণিতার ভোটদানে উৎসাহ দেওয়ার ভিডিয়ো-বার্তা দিকে দিকে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। তাঁর ছবি দেওয়া বার্তার হোর্ডিং, ট্যাবলো জেলার বিভিন্ন এলাকায় থাকবে।
অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) সুপ্রিয় দাস বলেন, ‘‘রমণিতা এই জেলার প্রতিনিধি। তাঁর সঙ্গে জেলার প্রত্যন্ত এলাকার মানুষজনও নিজেদের মিল খুঁজে পাবেন। তাঁর আহ্বানের মধ্যে দিয়েই নির্ভয়ে ভোটদানের আহ্বান প্রশাসন সমস্ত ভোটারদের কাছে পৌঁছে দিতে চাইছে।’’ গত বিধানসভা ভোটেও জেলার লোকশিল্পীদের ছবি দেওয়া হোডিং, ভিডিয়ো-বার্তার মাধ্যমেও ভোটদানে উৎসাহ দিতে উদ্যোগ নেয় প্রশাসন।
বরাবাজারের প্রত্যন্ত গ্রাম ফুলঝোরের দরিদ্র একটি শবর পরিবারের সদস্য রমণিতার শৈশব কেটেছে গ্রামেই। পরিবারের জীবিকা বলতে বৃষ্টিনির্ভর সামান্য চাষাবাদ। গ্রামের স্কুলে প্রাথমিকের গণ্ডি ডিঙোনোর পরে, একটি সংস্থার সহায়তায় ঝাড়খণ্ডের একটি স্কুল থেকে মাধ্যমিক। পুরুলিয়া শহরে উচ্চ মাধ্যমিক, ঝাড়খণ্ডের পটমদা কলেজ থেকে ইতিহাসে অনার্স নিয়ে স্নাতক। জেলা প্রশাসনের তৎপরতায় এখন তিনি পুরুলিয়ার সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাসে স্নাতকোত্তরে ভর্তি হয়েছেন।
পুরুলিয়া রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যাপীঠের সম্পাদক স্বামী শিবপ্রদানন্দ রমণিতার এই খবর শুনে বলেন, ‘‘প্রতিকূল পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াই করে এই ছাত্রীটি শিক্ষার আলোয় নিজেকে তুলে ধরেছেন। জেলার প্রত্যন্ত এলাকার ও প্রান্তিক একটি জনজাতির ওই ছাত্রীকে জেলা প্রশাসন আগামী নির্বাচনে জেলার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাস্যাডর হিসেবে নির্বাচন করে তাঁর সংগ্রামকে স্বীকৃতি দিল।’’
‘পশ্চিমবঙ্গ শবর-খেড়িয়া কল্যাণ সমিতি’র সংযোজক প্রশান্ত রক্ষিত বলেন, ‘‘শবর জেলার অন্যতম প্রত্যন্ত জনজাতি। সে সম্প্রদায়ের এক মেয়েকে এত বড় দায়িত্ব দেওয়ার জন্য প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ। রমণিতাকেও ধন্যবাদ, নিজেকে এই জায়গায় নিয়ে আসার জন্য।’’