দাবিদাওয়া: ডিভিসির তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের সামনে। নিজস্ব চিত্র
তৃণমূল ও বিজেপির পরে, এ বার পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরে বিদ্যুৎপ্রকল্পের জন্য জমিদাতাদের কর্মসংস্থানের দাবিতে বিক্ষোভ দেখাল এসইউসি প্রভাবিত জমিদাতাদের কমিটি। সোমবার ডিভিসির তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের মূল গেটের সামনে বিক্ষোভ অবস্থানে বসেন ‘আরটিপিএস ল্যান্ড লুজ়ার্স অ্যাসোসিয়শন’ নামে ওই সংগঠনের একশোর বেশি সদস্য। পরে তাঁরা জমিদাতাদের কাজের ব্যবস্থা-সহ কিছু দাবিতে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কর্তৃপক্ষকে স্মারকলিপি দেন।
কমিটির সভাপতি চিন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, কর্তৃপক্ষ তাঁদের আশ্বাস দিয়েছেন, চিফ ইঞ্জিনিয়ার তাঁদের দাবি নিয়ে কমিটির প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলোচনা করবেন। চিফ ইঞ্জিনিয়ার তথা ‘হেড অফ দি প্রজেক্ট’ অনন্ত চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘বিদ্যুৎকেন্দ্রে ছিলাম না। শুনেছি, জমিদাতাদের একটি কমিটি কাজের দাবিতে স্মারকলিপি দিয়েছে।”
‘লকডাউন’ শুরুর পরে, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে জমিদাতাদের কর্মসংস্থানের দাবি দিনদিন জোরাল হচ্ছে। আন্দোলনকারীদের দাবি, কেন্দ্র গড়তে জমি দেওয়ার পরে, সেখানে কাজ না পেয়ে তাঁদের একাংশ বাইরে গিয়েছিলেন কাজে। লকডাউনে কাজ হারিয়ে গ্রামে ফেরার পরে, ওই পরিযায়ী শ্রমিক তথা জমিদাতারা নতুন করে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে কাজের দাবিতে সরব হতে শুরু করেছেন।
এই পরিস্থিতিতে জমিদাতাদের কর্মসংস্থানের দাবিতে বিদ্যুৎকেন্দ্রের কর্তৃপক্ষের উপরে চাপ বাড়াতে শুরু করেছে রাজনৈতিক দলগুলিও। ইতিমধ্যে এলাকার জমিদাতা ও পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে কমিটি গড়ে আন্দোলন শুরু করেছে তৃণমূল। রঘুনাথপুর ২ ব্লকের যুব তৃণমূল সভাপতি স্বপন মেহেতা জানান, কমিটির সদস্যদের নিয়ে আলোচনা করে ফের আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাঁরা। বাঁকুড়ার বিজেপি সাংসদ সুভাষ সরকার সম্প্রতি কেন্দ্রে গিয়ে পদস্থ কর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেন। সেখানে জমিদাতাদের কর্মসংস্থানের প্রসঙ্গও ওঠে।
এ দিন আসরে নামে এসইউসি প্রভাবিত সংগঠনটি। জমিদাতাদের সব চেয়ে পুরনো এই কমিটিটি ২০০৯ সালে বিদ্যুৎকেন্দ্রের জমি অধিগ্রহণের সময়ে তৈরি হয়েছিল। হাজারের মতো জমিদাতা এই কমিটির সদস্য। কমিটির দাবি, তাদের আন্দোলনের চাপেই ২০১৬ সাল থেকে কমিটির দেড়শোর মতো জমিদাতাকে বিদ্যুৎকেন্দ্রে কাজে নিয়োগ করেছে ডিভিসি কর্তৃপক্ষ।
কমিটির সম্পাদক দেবজিত বন্দ্যোপাধ্যায় ও সভাপতি চিন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়েরা বলেন, ‘‘ধাপে ধাপে আরও জমিহারাদের প্রকল্পে কাজ দেওয়া হবে বলে ডিভিসি কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিলেও বাস্তবে তা মানছেন না। অনেক দিন অপেক্ষার পরেও আমাদের দাবি নিয়ে ডিভিসি কর্তৃপক্ষ উদ্যোগী না হওয়ায় আন্দোলন করতে বাধ্য হয়েছি।”
চিন্ময়বাবুর অভিযোগ, ‘‘প্রকৃত জমিহারাদের বাদ দিয়ে ডিভিসি রাজনৈতিক চাপে পড়ে নির্দিষ্ট দলের লোকজনদের কাজে নিচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে বহিরাগতদের প্রকল্পে কাজ দেওয়া হচ্ছে।” যদিও এমন অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করে বিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষের ব্যাখ্যা, যত জন জমিদাতাকে কাজে নেওয়ার সুযোগ ছিল, তা করা হয়েছে। প্রকল্পে এই মুহূর্তে কর্মসংস্থানের সুযোগ নেই। তাই নতুন নিয়োগ সম্ভব নয়।