—প্রতীকী ছবি।
বাঁকুড়া জেলা পরিষদের ১০টি স্থায়ী সমিতি গঠন হওয়ার কথা ছিল শুক্রবার। সেই মতো প্রস্তুতিও সারা হয়েছিল। কিন্তু হাজির থাকলেন না জেলা পরিষদে নির্বাচিত সদস্যদের সিংহভাগই। যার জেরে পিছিয়ে গেল স্থায়ী সমিতি গঠনের প্রক্রিয়া। বিরোধীদের দাবি, গোষ্ঠীকোন্দলের কারণেই স্থায়ী কমিটি গঠনের দিনে গরহাজির ছিলেন শাসকদলের জয়ী সদস্যদের একাংশ। পাল্টা তৃণমূলের দাবি, বিভিন্ন কাজ থাকার কারণেই জেলা পরিষদে হাজির হতে পারেননি তাঁরা।
রাজ্যে সদ্য শেষ হওয়া গ্রাম পঞ্চায়েত নির্বাচনে বাঁকুড়া জেলা পরিষদে বিরাট জয় পায় তৃণমূল। জেলা পরিষদের ৫৬টি আসনের মধ্যে বিজেপির একটি বাদ দিলে বাকি ৫৫টি আসনই তাদের দখলে যায়। কিন্তু নির্বাচনে এই সাফল্যের পরেও দলের গোষ্ঠীকোন্দল এড়াতে ব্যর্থ হয় শাসকদল। সভাধিপতি ও সহকারী সভাধিপতি পদে কে বসবেন, তা নিয়ে দলের অন্দরেই দ্বন্দ্ব শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত দলের রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশে গত ১৪ অগস্ট জেলা পরিষদের সভাধিপতি হিসাবে অনুসূয়া রায় ও সহকারী সভাধিপতি হিসাবে পরিতোষ কিস্কু নির্বাচিত হন। এর পর দ্বন্দ্ব শুরু হয় জেলা পরিষদের স্থায়ী সমিতি ও কর্মাধ্যক্ষ পদ নিয়ে। বাঁকুড়া জেলা পরিষদে অর্থ, পূর্ত, বন ও ভূমি, নারী ও শিশু কল্যাণ-সহ বিভিন্ন দফতরে উন্নয়নমূলক কাজ পরিচালনার জন্য নির্বাচিত সদস্যদের নিয়ে মোট দশটি স্থায়ী সমিতি গঠন করা হয়। এর মধ্যে অর্থ সংক্রান্ত স্থায়ী সমিতি বাদ দিলে প্রতিটি স্থায়ী সমিতির মাথায় থাকেন এক জন করে কর্মাধ্যক্ষ। এই স্থায়ী সমিতিগুলি গঠনের জন্য শুক্রবারকে বেছে নিয়েছিল জেলা প্রশাসন। প্রত্যেক নির্বাচিত সদস্যকে চিঠি দিয়ে তা জানানোও হয়। ডাকা হয় জেলার ২২টি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিকেও। কিন্তু শুক্রবার নির্ধারিত সময়ে দু’এক জন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ও হাতেগোনা দু’-একজন জেলা পরিষদ সদস্য এলেও হলেও বেশির ভাগ সদস্যই অনুপস্থিত ছিলেন। এর ফলে স্থায়ী সমিতি গঠন আপাতত স্থগিত করে দেওয়া হয়। জেলা পরিষদের সভাধিপতি অনুসূয়া রায় বলেন, “বাঁকুড়া জেলা পরিষদের ৫৬ জন সদস্য ও ২২টি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিদের প্রত্যেককে চিঠি দিয়ে জেলা পরিষদের স্থায়ী সমিতি গঠনের জন্য ডাকা হয়েছিল। দু’-এক জন বাদ দিলে প্রায় কেউই উপস্থিত হতে পারেননি। আজ অনেক জায়গায় পঞ্চায়েত সমিতি গঠন হচ্ছে। সেই কাজে কেউ কেউ ব্যস্ত রয়েছেন। আবার কেউ অসুস্থ থাকায় বা পারিবারিক কাজ থাকায় আজ আসতে পারেননি।’’
এ নিয়ে বিজেপির বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সুনীল রুদ্র মণ্ডল বলেন, “স্থায়ী সমিতির সদস্য হয়ে বা কর্মাধ্যক্ষ পদে বসে কাটমানি খাওয়ার ক্ষমতা কার হাতে থাকবে, তা নিয়ে তৃণমূলের অন্দরে কোন্দলের ফল হিসাবে স্থায়ী সমিতি নির্ধারিত সময়ে গঠিত হল না।” প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির সদস্য দেবু চট্টোপাধ্যায় বলেন, “তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দলের জেরে জেলা পরিষদের স্থায়ী সমিতি গঠন প্রক্রিয়া পিছিয়ে যাওয়ায় জেলার উন্নয়ন আপাতত থমকে থাকল। এর ফল ভোগ করতে হবে সাধারণ মানুষকে।”
পাল্টা তৃণমূলের বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলার সহ-সভাপতি প্রদীপ চক্রবর্তী বলেন, “এর সঙ্গে গোষ্ঠীকোন্দলের কোনও সম্পর্ক নেই। বাঁকুড়া জেলায় কোথাও আমাদের দলে গোষ্ঠীকোন্দল নেই। দলের সিদ্ধান্তই সকলে মাথা পেতে নেবে।”