n এক দিনের আন্দোলনেই জমল আবর্জনা। ছবি: অভিজিৎ অধিকারী
নিয়মিত বেতন দেওয়া-সহ নানা দাবিতে সোমবার থেকে লাগাতার কর্মবিরতি শুরু করেছেন বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের ঠিকা সংস্থার অস্থায়ী কর্মীরা। তার জেরে, হাসপাতালের সাফাই-সহ নানা কাজ ব্যাহত হয় বলে অভিযোগ। এক দিনের কর্মবিরতিতেই ওয়ার্ডের বাথরুমে জমে ওঠে নোংরা জল, ডাস্টবিন ভরে ওঠে ভাত, তরকারি, ফলের খোসায়। নার্সদের কেবিনের সামনেও জমে ওঠে জঞ্জালের স্তূপ। দুর্ভোগে পড়েন রোগী, তাঁদের আত্মীয়, চিকিৎসক-সহ স্বাস্থ্যকর্মীরা।
কাজ বন্ধ করে এ দিন সকাল থেকে গেটের বাইরে অবস্থানে বসেন হাসপাতালের ৯১ জন অস্থায়ী কর্মী। তাঁদের কেউ সুপারভাইজ়ার, ওয়ার্ড বয়, ওয়ার্ড গার্ল, নিরাপত্তা রক্ষী, হাউস কিপিংয়ের কর্মী।
হাসপাতাল সুপার মহেন্দ্রনাথ মান্ডি বলেন, “ঠিকাকর্মীদের দাবিদাওয়া মেটানো আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আমি ওই ঠিকাদার সংস্থার সঙ্গে কথা বলেছি। অগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে তাঁরা আলোচনা করতে আসবেন। কিন্তু তাঁদের কর্মীরা তা মানতে নারাজ। সে জন্য স্বাস্থ্য পরিষেবায় ব্যাঘাত ঘটছে। অন্য সাফাই কর্মীদের দিয়েও পরিষ্কার করাতে তাঁরা দেবেন না। বিষয়টি প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।”
মহকুমাশাসক (বিষ্ণুপুর) অনুপকুমার দত্ত বলেন, ‘‘আন্দোলনকারীদের জানানো হয়েছে, তাঁরা এ দিনের মধ্যেই কর্মবিরতি প্রত্যাহার করুন। তাঁদের দাবিদাওয়ার বিষয়টি নিয়ে প্রশাসন ওই ঠিকা সংস্থার সঙ্গে কথা বলবে। কিন্তু প্রত্যাহার না করলে মঙ্গলবার প্রশাসন হাসপাতাল পরিষ্কার করাতে বাইরে থেকে লোক লাগাতে বাধ্য হবে।’’
ওই ঠিকা সংস্থার অধীনে কর্মরত ফেসিলিটি ম্যানেজার বিশ্বনাথ ঘোষ প্রশাসনের বৈঠকে ছিলেন। রাতে তিনি বলেন, ‘‘প্রশাসনের বার্তা সহকর্মীদের জানাই। কিন্তু তাঁরা কর্মবিরতি প্রত্যাহার করতে রাজি হননি। তাঁরা জানিয়েছেন, ঠিকা সংস্থাকে হয় এসে কথা বলতে হবে। নয়তো দাবিদাওয়া মেটানোর ব্যাপারে মধ্যস্থতা করার কথা প্রশাসনকে লিখিত ভাবে
জানাতে হবে।’’
বিশ্বনাথবাবু অভিযোগ করেন, “আমাদের কাজ শুরু হয়েছে প্রায় সাড়ে চার বছর আগে। তার মধ্যে সাড়ে তিন বছর ধরে সংস্থার সঙ্গে কর্মীদের দাবিদাওয়া নিয়ে কথা বলছি। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। না আছে নিয়মিত বেতন, বোনাস, প্রভিডেন্ট ফান্ড, পে স্লিপ, আর না আছে নিয়োগের বৈধ কাগজপত্র। রোগীদের কথা ভেবে আমরা বার বার অবস্থান বিক্ষোভ থেকে ফিরে এসেছি। এ বার সংস্থার কর্মকর্তাদের প্রশাসনের সামনে আশ্বাস দিতেই হবে। তা না হলে বড়সড় আন্দোলন হবে।’’
ফোনে ঠিকা সংস্থার এরিয়া ম্যানেজার ইন্দ্রনীল বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেন, ‘‘কী কারণে কর্মীদের কর্মবিরতি, তা বুঝে উঠতে পারছি না। কর্মীদের পূরণ করা ‘অফারিং লেটার’ আমাদের অফিসে পৌঁছয় আড়াই বছর পরে। তার পরেই নিয়োগপত্র দেওয়ার নিয়ম। তা শীঘ্রই দেওয়া হবে। নিয়োগপত্রের জন্যই আটকে আছে দু’-একটি পদক্ষেপ। বেতনও প্রতি মাসের ১২ তারিখের মধ্যেই হয়। অন্য সুযোগ-সুবিধাও দেওয়ার চেষ্টা চলছে। করোনা পরিস্থিতিতে কর্মীদের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব হয়নি। তবে শীঘ্রই যাব।”
যদিও এই চাপান-উতোরে যেতে চান না রোগী ও তাঁদের পরিজনেরা। এ দিন কোতুলপুর থেকে আসা এক রোগী বাথরুমের আবর্জনা দেখেই বমি করতে শুরু করেন। প্রতিটি ওয়ার্ড সকাল থেকে পরিষ্কার না হওয়ায় চিন্তিত রোগীর সঙ্গে চিকিৎসক ও নার্সরাও।
এক নার্স বলেন, “দিনের পর দিন আবর্জনা জমে উঠলে আমরাও রোগী হয়ে যাব।” দরজায় রক্ষী না থাকায় যে কেউ বিনা বাধায় এ দিন হাসপাতালে বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঢুকতে শুরু করে। জরুরি বিভাগে এ দিন সকালে এক মদ্যপ ব্যক্তি ঢুকে পড়ায় স্বাস্থ্যকর্মীরা তাঁকে সামাল দিতে নাকাল হন।
বিকেলে মহকুমাশাসক নিজের অফিসে এসডিপিও কুতুবুদ্দিন খান, বিষ্ণুপুর স্বাস্থ্য-জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জগন্নাথ সরকার ও আন্দোলনকারীদের
প্রতিনিধি বিশ্বনাথ ঘোষকে নিয়ে বৈঠক করেন। সেখানেই আন্দোলনকারীদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে কাজে যোগ দিতে বলা হয়।