বিশ্বভারতীতে পড়ুয়ারা হস্টেল খোলা-সহ তিন দফা দাবি নিয়ে যে আন্দোলন শুরু করেছে তার পরিপ্রেক্ষিতে তাঁরা পরীক্ষা এবং ক্লাস বয়কট করার পথ বেছে নেন। বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ হঠাৎ বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানান, যাঁরা পরীক্ষা দেবেন না তাঁদের উত্তীর্ণ করা হবে না।
ফাইল চিত্র।
ছাত্র আন্দোলনের জেরে মঙ্গলবারই ইস্তফা দিয়েছিলেন বিশ্বভারতীর রেজিস্ট্রার আশিস আগ্রবাল। তার ঠিক কয়েক ঘণ্টা পরই দায়িত্ব থেকে ইস্তফা দিলেন জনসংযোগ আধিকারিক (পিআরও) অতিগ ঘোষ। লাগাতার আন্দোলনের জেরে রেজিস্ট্রার ইস্তফা দিয়েছেন বলে মঙ্গলবার জানিয়েছিলেন অতিগ নিজেই।
বুধবার ইস্তফা দেওয়ার পর তার কারণও ব্যাখ্যা করেছেন অতিগ। বিশ্বভারতী সূত্রে খবর, পারিবারিক কারণ দেখিয়ে তিনি পদত্যাগ করেছেন। তবে অনেকে মনে করছেন, দীর্ঘদিন ধরে ছাত্র আন্দোলনের জেরেই তাঁর এই সিদ্ধান্ত। আবার আন্দোলনকারী পড়ুয়াদের পাল্টা দাবি, ছাত্র আন্দোলন নয়, বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মতানৈক্যের কারণেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অতিগ।
শুধু রেজিস্ট্রার, জনসংযোগ আধিকারিকই নন, বিশ্বভারতীর একজিকিউটিভ কাউন্সিলের সদস্যপদ ছেড়েছেন সঙ্গীতভবনের অধ্যক্ষ স্বপন কুমার ঘোষ। তাঁর দাবি, ছাত্রদের সমস্যার সমাধান করতে পারছেন না তিনি। সেই কারনে তিনি এই পদত্যাগ। ইতিমধ্যেই পদত্যাগপত্র কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্বপন।
অন্য দিকে, পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে বিশ্বভারতীর। ছাত্রছাত্রীদের ক্লাস করার ব্যবস্থাও করেছেন আন্দোলনকারীরা। জানানো হয়েছে, যে সব পড়ুয়ার ক্লাস রয়েছে তাঁরা সেই ক্লাস করতে পারবেন। তবে দাবি না পূরণ হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন জারি থাকবে বলে জানিয়েছেন পড়ুয়ারা।
ছাত্র আন্দোলন শুরুর দিন থেকেই টানা চারদিন বিশ্বভারতীর সেন্ট্রাল অফিসে জনসংযোগ আধিকারিককে আটকে রাখা হয়। পরে আদালতের নির্দেশে ছাড়া পান তিনি। গত সোমবার বিকেলে রেজিস্ট্রার-সহ বিশ্বভারতীর অধ্যাপক-অধ্যাপিকারা বাংলাদেশ ভবনে একটি বৈঠকে যোগ দিতে গিয়েছিলেন। বিক্ষোভরত পড়ুয়ারা সেখানেই তাঁদের ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। তাঁদের বাংলাদেশ ভবনে আটকে রাখার অভিযোগও ওঠে। যদিও, ঘেরাও করে রাখার বিষয়টি মানতে অস্বীকার করেছেন ছাত্র-ছাত্রীরা। তাঁদের দাবি, রেজিস্ট্রার-সহ বাকি অধ্যাপক-অধ্যাপিকারা ওখানে ‘স্ব-ইচ্ছায় আটকে’ আছেন। তাঁরা সেখান থেকে যেতে চাইলে অনায়াসে যেতে পারেন বলেও জানান বিক্ষোভরত ছাত্র রিজুন গড়াই।
বিশ্বভারতীতে পড়ুয়ারা হস্টেল খোলা-সহ তিন দফা দাবি নিয়ে যে আন্দোলন শুরু করেছে তার পরিপ্রেক্ষিতে তাঁরা পরীক্ষা এবং ক্লাস বয়কট করার পথ বেছে নেন। বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ হঠাৎ বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানান, যাঁরা পরীক্ষা দেবেন না তাঁদের উত্তীর্ণ করা হবে না। কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সোমবার আন্দোলনরত পড়ুয়ারা আমরণ অনশনের সিদ্ধান্ত নেন। যদিও পড়ুয়াদের এই আন্দোলনের চাপে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ পরে সেই সিদ্ধান্ত তুলে নেওয়ার ঘোষণা করেন। এর পর পড়ুয়ারাও তাঁদের অনশন তুলে নেন।