n সারেঙ্গা ব্লক অফিসে সিপিএমের বিক্ষোভ। নিজস্ব চিত্র
প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার (প্লাস) তালিকায় প্রকৃত দুঃস্থদের নাম বাদ যাওয়ার অভিযোগকে ঘিরে বুধবারও বাঁকুড়া জেলার বিভিন্ন এলাকায় ক্ষোভ-বিক্ষোভ চলল। কোথাও বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা পথে নামলেন। কোথাও অসন্তোষ জানালেন নাম না থাকা মানুষজন।
এ দিন স্বচ্ছ ভাবে আবাস প্লাসের তালিকা প্রকাশ করা ও যোগ্যদের বাড়ি দেওয়ার দাবিতে সারেঙ্গা ব্লক অফিসে স্মারকলিপি দেয় সিপিএম। সারেঙ্গা বাজারে মিছিল করে দলের কর্মীরা ব্লক অফিসে গিয়ে বিক্ষোভ দেখান। বিডিও (সারেঙ্গা ফাহিম আলম বলেন, ‘‘নামের তালিকা দেওয়া হয়েছে। বাকি অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে।’’
খাতড়া ১ পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ তাঁদের নাম বাদ পড়েছে বলে অভিযোগ তুলে খাতড়া ব্লক অফিসে গিয়ে বিক্ষোভ দেখান। তাঁদের মধ্যে খাতড়ার চুয়াকানালির বাসিন্দা লিলি বাউরি, মিতা মণ্ডলদের অভিযোগ, ‘‘কয়েকদিন আগে খাতড়া হাই স্কুলে গ্রামসভার বৈঠকে পাঠ করা আবাস যোজনার উপভোক্তাদের তালিকায় আমাদের নাম ছিল। পরে জানতে পারি, আমাদের নাম বাদ পড়েছে। অথচ পাকা বাড়ি আছে, এমন অনেকের নাম তালিকায় রয়েছে। তাই প্রতিবাদ জানাতে এসেছি।’’ বিডিও (খাতড়া) অভীক বিশ্বাস জানান, আবাস যোজনার তালিকা থেকে নাম বাদ পড়ার কারণ তাঁদের বুঝিয়ে বলা হয়েছে। বিষয়টি তাঁরা বুঝতে পেরে শান্ত হন।’’
বিষ্ণুপুর ব্লক অফিসেও এ দিন মড়ার পঞ্চায়েতের লাউবাগান গ্রামের আদিবাসী মহিলারা তাঁদের নাম বাদ দেওয়ার অভিযোগে বিক্ষোভ দেখান। সেখানে বিক্ষোভ দেখাতে যান মড়ার পঞ্চায়েতের মল্লিকপাড়ার কিছু বাসিন্দাও। লাউবাগান গ্রামের বুলবুলি মুর্মু, ফুলমুনি মান্ডি, মালতি কিস্কু, মংলি টুডু, সুমি মান্ডিদের অভিযোগ, ‘‘প্রথমে তালিকায় আমাদের নাম ছিল বলেই জানি। আশাকর্মী বাড়ি গিয়ে সমীক্ষা করেন। এখন শুনছি, আমাদের নাম নেই। অথচ যাঁদের নাম তালিকায় আছে, তাঁদের অনেকেই পাকা বাড়িতে থাকেন। আমরা তদন্তের দাবি নিয়ে ব্লক দফতরে এসেছি।”
এ বিষয়ে বিডিও (বিষ্ণুপুর) শতদল দত্তের দাবি, ‘‘খোঁজ নিয়ে দেখলাম, লাউবাগান গ্রামে ২৪টি আদিবাসী পরিবারের বাস। তার মধ্যে এক জনের নাম বাতিল হয়েছে। আট জন প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় আগেই বাড়ি পেয়েছেন। নতুন তালিকায় আদিবাসীদের ১৫ জনের নাম আছে। প্রথম পর্যায়ে চার জন, পরে বাকিরা আবাস যোজনার সুবিধা পাবেন। তাঁদের ভুল বোঝানো হচ্ছে।”
অন্য দিকে, মড়ার পঞ্চায়েতের মল্লিকপাড়ার বাসিন্দা সুকুবুদ্দিন মল্লিক, আকবর খান, হাসমত মল্লিকেরা দাবি করেন, ভাঙা মাটির বাড়িতে থাকলেও তালিকায় তাঁদের নাম নেই। কিন্তু পঞ্চায়েতের এক সুপারভাইজারের পরিবারের পাঁচ জনের নাম তালিকায় উঠেছে। বাইক, ট্রাক্টর থাকা লোকের নামও তালিকায় রয়েছে। যদিও ওই সুপারভাইজারের দাবি, “আমরা ছ’ভাই আলাদা থাকি। মাটির বাড়িতেই পাঁচ ভাই থাকি। তাই পাঁচ ভাইয়ের নাম তালিকায় আছে। এক জনের পাকা বাড়ি থাকায় তাঁর নাম বাদ গিয়েছে। তালিকা তৈরিতে সুপারভাইজারদের কোনও হাত নেই।” ব্লক অফিস থেকে তাঁদের বিষয়টি পঞ্চায়েতকে জানাতে বলা হয়। মড়ার পঞ্চায়েত প্রধান অরুণ বিশ্বাস বলেন, “সমীক্ষা বা তালিকায় নাম তোলার বিষয়ে আমাদের কোনও হাত নেই। তবে তথ্য গোপন করে কেউ সরকারি সুবিধা নিলে স্থানীয় মানুষ দফতরে জানালে প্রশাসনিক ভাবেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বাঁকুড়া ২ ব্লকে আবাস প্লাস তালিকা নিয়ে অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ দেখায় বিজেপি। সেখানে উপস্থিত ছিলেন বিজেপির বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বিল্লেশ্বর সিংহ, বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুনীলরুদ্র মণ্ডল প্রমুখ। বিল্লেশ্বর বলেন, “আবাস প্লাস তালিকায় বহু যোগ্য মানুষের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। আমরা এর প্রতিবাদ জানাচ্ছি।” জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, আবাস প্লাসে বাদ পড়া নিয়ে যে অভিযোগগুলি উঠছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।