বৃষ্টির মধ্যে আলুর জমিতে নজরদারি চাষির। বান্দোয়ানের বেকো গ্রামে। ছবি: রথীন্দ্রনাথ মাহাতো
পূর্বাভাস অনুযায়ীই, মঙ্গলবার বিকেল থেকে বৃষ্টি নামল পুরুলিয়া-বাঁকুড়ার নানা প্রান্তে। তাতে মাথায় হাত পড়েছে আলু চাষিদের। চিন্তায় পড়েছেন রবি শস্যের চাষিরাও। কৃষি দফতরের পরামর্শ, জমিতে নিকাশি ব্যবস্থা ভাল রাখতে হবে এবং বৃষ্টি থামলে ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করতে হবে।
মঙ্গলবার থেকে পাঁচ দিন দুই জেলায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। বাঁকুড়া জেলার সবনচেয়ে বেশি আলু চাষ হয় বিষ্ণুপুর মহকুমায়। পাত্রসায়রের পাঁচপাড়ার বাসিন্দা অনন্ত বিশ্বাসের কথায়, ‘‘কিছু দিন আগেই আলু লাগিয়েছি। এখনও গাছ বেরোয়নি। সব মাটি বৃষ্টিতে বসে যাবে। মাটি শক্ত হয়ে আলু বীজ সব নষ্ট হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছি।’’
পাত্রসায়র, ইন্দাস, সোনামুখীর কিছু চাষির আলু বীজ এর আগেও এক দফা বৃষ্টিতে নষ্ট হয়েছিল বলে অভিযোগ। আবার বৃষ্টি নামায় চিন্তায় পড়েছেন তাঁরা। পাত্রসায়রের শালখাড়ার রাম দুয়ারির দাবি, ‘‘যে সব জমিতে আলু গাছ বেরিয়েছে, সেখানেও নাবি ধসা এসে যাবে। বহু টাকার ক্ষতি হয়ে যাবে।’’ ইন্দাসের রতন মণ্ডল জানান, প্রথম বার অতিবৃষ্টিতে আলু বীজ নষ্ট হওয়ার পরে, আবার ঋণ নিয়ে আলু লাগিয়েছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘এ বার বীজ নষ্ট হলে, ভীষণ সমস্যা হয়ে যাবে।’’ অসময়ের বৃষ্টি চিন্তায় রেখেছে রবিশস্য চাষিদেরও। সোনামুখীর নিত্যানন্দপুরের প্রকাশ সরকার বলেন, ‘‘জমিতে জল দাঁড়িয়ে গেলে সব কপি নষ্ট হবে।’’
বাঁকুড়ার জেলা কৃষি আধিকারিক দীপঙ্কর রায় বলেন, ‘‘এই ধরনের প্রাকৃতিক পরিবেশ আলুর ধসা রোগ হওয়ার জন্য আদর্শ। তাই জমিতে জল দাঁড়াতে দেওয়া চলবে না। বৃষ্টি থামলে ধসার লক্ষণ থাক বা না থাক, ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করতে হবে।’’ তিনি জানান, এক লিটার জলে আড়াই গ্রাম ম্যাঙ্কোজেব গুলে বা প্রতি লিটার জলে চার গ্রাম কপার অক্সি-ক্লোরাইডের মিশ্রণ করে স্প্রে করতে হবে। যে সব আনাজ তোলার যোগ্য, তা তুলে বাজারজাত করতে হবে।
পুরুলিয়া জেলা কৃষি দফতরের সহ আধিকারিক (তথ্য) সুশান্ত দত্ত অবশ্য জানান, মঙ্গলবার সামান্য বৃষ্টি হয়েছে। এই বৃষ্টি সর্ষে চাষের জন্য ফলদায়ক হবে। পাশাপাশি, মাটিতে রসের ঘাটতিও মিটবে। তবে বৃষ্টি বাড়লে গোড়াপচা রোগ এড়ানোর জন্য আনাজের খেতে যাতে জল না জমে, সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। যদি অল্প বৃষ্টি ও মেঘলা আবহাওয়ার কারণে স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ থাকে, তখন ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে।
কল্যাণ কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র, জাহাজপুরের তরফেও চাষিদের আলুর জমিতে নিকাশি নালা কেটে রাখার পরামর্শ ও নিয়মিত পর্যবেক্ষণের কথা বলা হয়েছে। কপি জাতীয় আনাজে হীরকপৃষ্ঠ মথের হামলা দেখা দিতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে। এই রোগপোকার আক্রমণ ঠেকাতে বৃষ্টি বন্ধের পরে, আবহাওয়া পরিষ্কার হলে ওষুধ স্প্রে করার কথা বলা হয়েছে।