—নিজস্ব চিত্র।
বিরসা মুন্ডার মূর্তি-বিতর্কে বিরক্ত হয়ে এ নিয়ে রাজনীতি বন্ধ করার দাবিতে এ বার পোস্টার পড়ল বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলে।
রাইপুর, সারেঙ্গা, রানিবাঁধের বিভিন্ন জায়গায় মঙ্গলবার ‘ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহল’ (বিজেএমপিএম) এর শতাধিক পোস্টার সাঁটানো হয়। তা নিয়ে এলাকায় প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। তৃণমূল ও বিজেপি—দু’দলের জেলা নেতারা অবশ্য পরস্পরের বিরুদ্ধে বিরসার মূর্তি নিয়ে রাজনীতি করার অভিযোগ তুলেছেন।
বুধবার বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলের বিভিন্ন এলাকায় সাদা কাগজে ডিটিপি করা চার ধরনের লেখা পোস্টার দেখতে পাওয়া গিয়েছে। কোনওটায় লেখা— ‘বীর বিরসা মুন্ডাকে নিয়ে নোংরা রাজনীতি বন্ধ হোক’। আবার কিছু পোস্টারে লেখা— ‘আদিবাসী শিকারির মূর্তিকে বিরসার মূর্তি হিসেবে চালিয়ে দেওয়ার নোংরা মানসিকতাকে ধিক্কার জানাই’। কোথাও লেখা— ‘বিরসার মূর্তিকে নিয়ে নোংরা রাজনীতির কারবারিরা সাবধান, হুঁশিয়ার’। আবার এমন দাবিও জানানো হয়েছে— ‘রাজনৈতিক তরজা বন্ধ করে অবিলম্বে পোয়াবাগান সংলগ্ন মোড়ে বিরসা মুন্ডার মূর্তি স্থাপন করা হোক’।
৫ নভেম্বর দলীয় কর্মসূচিতে বাঁকুড়ায় আসেন দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। পোয়াবাগানে বাঁকুড়া-পুরুলিয়া ৬০ এ জাতীয় সড়কের পাশে আগে তৈরি করা এক আদিবাসী শিকারির মূর্তির নীচে রাখা বিরসা মুন্ডার ছবিতে তিনি মালা দেন। ফুল দেন ওই মূর্তিতে।
তবে আদিবাসী মানুষের একাংশ ওই মূর্তি বিরসা মুন্ডার নয় বলে দাবি করেন। তৃণমূল নেতাদের উপস্থিতিতে পরদিনই ওই মূর্তি চত্বর দুধ-গঙ্গাজল দিয়ে শুদ্ধকরণ করা হয়। পরে বিজেপি নেতৃত্বের উপস্থিতিতে আদিবাসী মানুষের একাংশ মূর্তিটিকে বিরসা মুন্ডার বলে দাবি করে গোবর-জল ছিটিয়ে শুদ্ধ করেন। এরই মধ্যে সোমবার তৃণমূল নেতৃত্ব জানান, পোয়াবাগান এলাকায় ৩০ ফুটের মূর্তি (বেদি ১৫ ফুট) বিরসা মুন্ডার মূর্তি তৈরি করা হবে।
জেলা রাজনীতির ওঠাপড়ার নিয়মিত পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, বিধানসভা ভোটকে সামনে রেখে আদিবাসী মন পেতে বিরসার মূর্তি-বিতর্ককে জিইয়ে ভোট বাক্সে ফায়দা লোটার চেষ্টা চালাচ্ছেন কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তেমনটা মনে করছেন আদিবাসীদের একাংশও। তাই ওই বিতর্কে অনেকে বিরক্ত।
সাঁওতালদের সর্বোচ্চ সামাজিক সংগঠন ‘ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহল’-এর জেলা গডেৎ বিপ্লব সরেন বলেন, ‘‘মূর্তি বিতর্ক নিয়ে বিজেপি ও তৃণমূলের রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে আমরা অসন্তুষ্ট। এটা আদিবাসী সমাজ বা জঙ্গলমহলের মানুষ ভাল ভাবে নিচ্ছেন না।’’
ওই সংগঠনের জেলা পারানিক সনগিরি হেমব্রম এ দিন দাবি করেন, ‘‘বিজেপি নেতৃত্ব যে মূর্তিকে বিরসা মুন্ডার বলে দাবি করছেন, তা ভুল। সেটি এক জন আদিবাসী শিকারির মূর্তি। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছি। আবার রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল দুধ-গঙ্গাজল দিয়ে মূর্তিটিকে যে শুদ্ধকরণ করেছে, তারও প্রতিবাদ করছি। কারণ, আদিবাসীদের সমাজে এ ভাবে শুদ্ধকরণ করা করা যায় না। তাই প্রতিবাদ জানাতে আমরা পোস্টার দিয়েছি।’’ অখিল ভারতীয় আদিবাসী বিকাশ পরিষদের বাঁকুড়া জেলা সভাপতি সুনীলকুমার মান্ডি বলেন, ‘‘আদিবাসী একতা মঞ্চ’-সহ বিভিন্ন আদিবাসী সংগঠনের পক্ষ থেকে বিরসা মুন্ডার মূর্তি নিয়ে রাজনীতি করার প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’’
পোস্টার পড়ার পরে ,এ দিন বিজেপির বাঁকুড়া জেলা সাংগঠনিক সভাপতি বিবেকানন্দ পাত্র দাবি করেন, ‘‘আমরা নই। তৃণমূলই ওই মূর্তিকে নিয়ে রাজনীতি শুরু করেছে।’’ অন্য দিকে, জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী শ্যামল সাঁতরা দাবি করেন, ‘‘রাজনীতি বিজেপিই করছে। আদিবাসী ভাবাবেগে তারা আঘাত করেছে।’’ তিনি দাবি করেন, আদিবাসী সংস্কৃতিকে সম্মান জানাতে তাঁরাই পোয়াবাগান লাগোয়া জায়গায় বীরসা মুন্ডার মূর্তি স্থাপন করতে চলেছেন।