হতাশ পুরভোটের প্রার্থীরা

শেষ ওভারে ডোবাল বিএসএনএল

বিএসএনএল পরিষেবা বিপর্যস্ত হওয়ায় জেলা জুড়ে বিঘ্নিত পুরভোটের সরকারি কর্মসূচি। জেলা প্রশাসনের নির্বাচনের কাজ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দলগুলির দলীয় প্রচার, জনসভার মতো কর্মসূচীতেও ব্যাপক রদবদল। জরুরী পরিষেবার মতো আদালত, স্বাস্থ্য এবং দমকলের দফতরও চরম বিপাকে পড়েছেন। দিশাহারা জেলার কয়েক হাজার উপভোক্তা।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০১৫ ০২:০০
Share:

কর্মী ধর্মঘটের জেরে বন্ধ গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্র। সিউড়িতে ছবিটি তুলেছেন তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়।

বিএসএনএল পরিষেবা বিপর্যস্ত হওয়ায় জেলা জুড়ে বিঘ্নিত পুরভোটের সরকারি কর্মসূচি। জেলা প্রশাসনের নির্বাচনের কাজ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দলগুলির দলীয় প্রচার, জনসভার মতো কর্মসূচীতেও ব্যাপক রদবদল। জরুরী পরিষেবার মতো আদালত, স্বাস্থ্য এবং দমকলের দফতরও চরম বিপাকে পড়েছেন। দিশাহারা জেলার কয়েক হাজার উপভোক্তা।

Advertisement

কার্যত পুরভোটের আগে বিএসএনএলের এমন বেহাল দশায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রার্থী থেকে শুরু করে পুলিশ, প্রশাসনের কর্মকর্তা এবং সাধারণ গ্রাহকদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। হেনস্থার মধ্যে এই দু’দিনে অন্য সংস্থার নতুন সংযোগ নিতে অনেকে লাইন দিয়েছেন একাধিক দোকানে। এ দিকে এ দিনও সংস্থার কোনও কর্তাই বেহাল পরিস্থিতি নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

টেলি পরিষেবা বিপর্যস্তের কারণে চরম অসুবিধের মুখে পড়তে হয়েছে জেলা সদরে। সামান্য তথ্য জানতে বা জানাতে নিচুতলার আধিকারিকদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বারে বারে যোগাযোগ করতে দৌড়তে হয়েছে তাঁদের কাছে। কারণ সংশ্লিষ্ট সেই দফতরগুলির ‘ইন্টারকাম’ সুবিধাও বিপর্যস্ত। জেলা প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তার অন্য নেটওয়ার্কের সংযোগ থাকলেও, বাকিদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে কার্যত তাঁকেও হিমশিম খেতে হয়েছে। তবে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের তুলনায় জেলার পুলিশ কর্তা ব্যক্তিদের হয়রানি একটু কম বললেই চলে। কারণ জেলা পুলিশ মহলে একাধিক কর্মী এবং আধিকারিকের একাধিক সংযোগের ব্যবস্থা রয়েছে।

Advertisement

জেলার চারটি পুরসভার ভোটের মুখে এহেন টেলি পরিষেবা বিপর্যস্তের কারণে চরম অসুবিধেয় প্রার্থীরাও। সিউড়ি পুরসভার বিদায়ী উপ-পুরপ্রধান উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়ের যেমন বুধবার বিকেলে সাড্ডি পাড়ায় ছিল নির্বাচনী সভা। তাতে যোগ দিতে আসার কথা অনুব্রত মণ্ডল, বিকাশ রায় চৌধুরী প্রমুখ। এই হেভিওয়েট সভার জন্য দলীয় কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে যোগযোগ করতে সকাল থেকে দুপুর গড়িয়ে বিকেল পর্যন্ত হিমশিম খেতে হয়েছে উজ্বলবাবুকে। এদিকে বামফ্রন্টের সমর্থিত ৫ নম্বার ওয়ার্ডের নির্দল প্রার্থী ইয়াসিন আখতার। তাঁর নির্বাচনী প্রচারেও চরম ভোগান্তি হয়েছে এই পরিষেবা বিপর্যস্তের কারণে। নিজের প্রচার, মিছিল এবং নির্বাচনী প্রচার সভার ক্ষেত্রে নিজের অনুগামী এবং কর্মী-সমর্থকদের পেতে চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন তিনি।

একই পরিস্থিতি জেলার অন্য শহর রামপুরহাটেও। ওই পুরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী শুভাশিষ চৌধুরী বলেন, “বিএসএনএল পরিষেবা ব্যাহতের কারণে ঠিক মতো প্রচারের কাজ চালাতে পারছি না। শুধু তাই নয়, এলাকায় যে সমস্ত নির্বাচনী সভা ও প্রচার করার কর্মসূচী ছিল, তা সময়োপযোগী হচ্ছেও না।’’ পুরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের বামফ্রন্টের ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী স্বপন দত্তও জানান একই ক্ষোভের কথা। তিনি বলেন, “বুধবার বামফ্রন্টের ডাকে পুরভোট উপলক্ষে মহা মিছিলের আয়োজন ছিল। সেখানে কর্মীদের নিয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু বিএসএনএল পরিষেবা বিপর্যস্ত থাকার কারণে অনেক কষ্ট করে যোগাযোগ করতে হয়েছে।’’ শুধু তাই নয়, রামপুরহাটে ভোগান্তির কথা জানিয়েছেন কংগ্রেস দলও। কংগ্রেসের জেলা সভাপতি সৈয়দ সিরাজ জিম্মি বলেন, “বিএসএনএল পরিষেবা ব্যাহতের কারণে, প্রচুর অসুবিধের সম্মুখীন হতে হয়েছে। শুধু যে ভোটের কাজ ব্যাহত হয়েছে তা নয়, বিভিন্ন পরিষেবা থেকেও আমরা বঞ্চিত হচ্ছি।’’

ক্ষোভ জানাল জেলার অন্যতম ব্যবসা বাণিজ্যের জায়গা সাঁইথিয়াও। সাঁইথিয়ায় সব দলই ক্ষোভ জানালেন আসন্ন পুরভোটের কথা বলে। পুর নির্বাচনের মুখে এহেন পরিষেবা বিপর্যস্তকে কেউ কেউ আবার চক্রান্ত বলে। পুরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূলের প্রার্থী মায়া সাহা, ৩ নম্বর প্রার্থী চন্দ্রানী ঘোষ, দশ নম্বর ওয়ার্ডের দলীয় প্রার্থী মানস সিংহদের এ দিনের দলীয় প্রচার কর্মসূচী চরম ব্যাহত হয়েছে বলে অভিযোগ। ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস প্রার্থী তরুন ঘোষ ও ১০ নম্বরের প্রার্থী হিল্লোল ঘোষদের ক্ষোভ কম নয় টেলি পরিষেবা নিয়ে।

বোলপুর-শান্তিনিকেতনও একই ভোগান্তির শিকার হয়েছেন জনতা। দিনভর ব্যাপক হারে ভোটের কাজকর্ম ব্যাহত হয়েছে। কোনও কোনও প্রার্থী বুধবার সকাল সকাল নিজের অনুগামীদের দিয়ে অন্য সংস্থার নতুন সংযোগ আবার নিয়েছেন। কেউ কেউ আবার জরুরী ভিত্তিতে অন্যের ফোন রিচার্জ করিয়ে সাময়িক ব্যবহার করছেন। ৪ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী সুকান্ত হাজরা, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী নরেশ বাউরি, ১৯ নম্বার ওয়ার্ডের প্রার্থী সঞ্জয় ঘোষরা জানালেন, বিএসএনএল বসে যাওয়ায় প্রচুর ক্ষতি হচ্ছে প্রচার কর্মসূচিতে। তাই অন্য উপায় না পেয়ে অন্য সংস্থার সংযোগ ব্যবহার করছেন তাঁরা।

এ দিন বোলপুর বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তপন কুমার দে বলেন, ‘‘বিএসএনএল পরিষেবা বিপর্যস্ত থাকার কারণে অনেক আইনজীবীর সঙ্গে বিচার প্রার্থীদের যোগাযোগই হইনি। খুব সমস্যা হয়েছে মক্কেল এবং আইনজীবীদের।’’ আদালত থেকে থানা। স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে দমকল বিভাগ। উপভোক্তারা কার্যত পরস্পরের মধ্যে যোগাযোগ করতে হিমশিম খেয়েছেন দিনভর।

এ দিন দুপুরে বোলপুরের এসডিপিও অম্লান কুসুম ঘোষের কার্যালয়ে আইজি সিদ্ধিনাথ গুপ্ত, ডিআইজি অজয় কুমার নন্দ এবং জেলার পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার বৈঠক ছিল। নিচুতলার অফিসার থেকে পুলিশ কর্তাদের আপ্যায়নের দায়িত্বে থাকা কর্মীদের ব্যাপক হেনস্থার মুখে পড়তে হয়েছে। জেলাজুড়ে এই চরম ভোগান্তি নিয়ে অবশ্য কোনও কথাই বলতে চাননি বিএসএনএলের কর্তা ব্যক্তিরা। উত্তর দেননি এসএমএসেরও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement