কাজল শেখ (বাঁ দিকে), অনুব্রত মন্ডল (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
বীরভূমের তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল দীর্ঘদিন জেলবন্দি। সেই পরিস্থিতিতে জেলায় শাসক দলের সংগঠনে কাজল শেখ শিবিরের ‘আধিপত্য’ দৃশ্যতই বৃদ্ধি পেয়েছিল। তবে সম্প্রতি দলীয় বৈঠকে তৃণমূলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনুব্রতর প্রতি আস্থা রাখায় অনুব্রত তথা কেষ্টর অনুগামীরা ফের চাঙ্গা বলে তৃণমূল সূত্রে দাবি। এতে দুই শিবিরের দ্বন্দ্ব তীব্রতরও হওয়ার ইঙ্গিতও মিলছে সংঘাতের নানা ঘটনায়।
নানুরে তৃণমূলের সংগঠনে অনুব্রতর সঙ্গে কাজলের বিরোধ দলে বহুল চর্চিত বিষয়। অনুব্রত জেলে যাওয়ার আগে দলে কাজল ও তাঁর অনুগামীরা কার্যত কোণঠাসা ছিলেন বলে দলীয় সূত্রে দাবি। অনুব্রতর অবর্তমানে কাজল আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠেন বলে জানাচ্ছেন দলেরই নেতারা। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রথম বার ভোটে লড়েই জেলা সভাধিপতিও হন কাজল।
অন্য দিকে, অনুব্রত মণ্ডল জেলে যাওয়ার পর তাঁর অনুগামীরা মুষড়ে পড়েছিলেন। বিশেষত কাজল শেখ কোর কমিটির সদস্য এবং জেলা সভাধিপতি নির্বাচিত হওয়ার পর অনুব্রত অনুগামীরা কার্যত ‘ঘরে ঢুকে’ যান বলে তৃণমূল সূত্রেই দাবি। সম্প্রতি কালীঘাটে নিজের বাড়িতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনুব্রত মণ্ডলের প্রতি আস্থা প্রদর্শনের বার্তা দেওয়ার পর ফের তাঁর অনুগামীরা উজ্জীবিত হয়ে উঠেছেন। তার প্রকাশ ঘটেছে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘাতে।
গত মঙ্গলবার রাতে ব্রাহ্মণখণ্ড গ্রামের বাসিন্দা, স্থানীয় থুপসড়া পঞ্চায়েতের প্রাক্তন সদস্য মুকুল শেখের বাড়িতে কাজল অনুগামীরা লাঠি শাবল নিয়ে চড়াও হয় বলে অভিযোগ। মুকুলকে বাঁচাতে গিয়ে আক্রান্ত হন তাঁর স্ত্রী-সহ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী তাঁর দুই মেয়েও।
ওই ঘটনার রেশ মেলাতে না মেলাতেই শনিবার রাতে ফের বাইতারা গ্রামে অনুব্রত অনুগামীদের বাড়িতে হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে কাজল অনুগামীদের বিরুদ্ধে। ৫ টি বাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয় বলেও অভিযোগ। আনারুল শেখ, মহম্মদ ইউনুস, আইনুল শেখদের অভিযোগ, ‘‘আমরা বোলপুরে অনুব্রত মণ্ডলের মঙ্গলকামনার যজ্ঞে যোগ দিতে গিয়েছিলাম। সেই আক্রোশে কাজলের লোকেরা আমাদের বাড়িতে চড়াও হয়ে মারধর করে। বাড়িতে ভাঙচুরও চালিয়েছে। পাঁচ জন আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। অনেকে গ্রামছাড়া।’’
এ দিকে বোলপুরের যজ্ঞে জেলার অধিকাংশ নেতা-মন্ত্রী ও বিধায়কদের দেখা গেলেও কাজলকে দেখা যায়নি। তিনি সেই সময় নানুরের বাইতারা সংলগ্ন খুজুটিপাড়াতেই দলের মহিলা সংগঠনের সম্মেলনে ব্যস্ত ছিলেন। তাই নিয়ে দলের অভ্যন্তরে জল্পনাও ছড়িয়েছে।
দলের কর্মী-সমর্থকদের একাংশের অভিমত, যজ্ঞ এড়াতেই একই দিনে ওই কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছিল। কাজল অবশ্য ওই জল্পনা উড়িয়ে দিয়ে দাবি করেন, ‘‘আগে থেকেই দু'জায়গায় মহিলা সম্মেলনের কর্মসূচি ঠিক করা ছিল। তাই যজ্ঞে যাওয়া হয়নি।’’ গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের অভিযোগও ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। কাজলের কথায়, ‘‘গ্রাম্য বা পারিবারিক বিবাদকে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বলে চালানোর চেষ্টা হচ্ছে। আমাদের দলে কোনও গোষ্ঠী নেই। পুলিশ প্রতিটি ক্ষেত্রেই যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছে। এ ক্ষেত্রেও নেবে।’’ পুলিশ জানায়, উভয় পক্ষের ১৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। তাদের মধ্যে তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের খোঁজ চলছে।
তৃণমূলের অন্দরে এই পরিস্থিতিকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিরোধী বিজেপি। দলের বোলপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সন্ন্যাসীচরণ মণ্ডল বলেন, ‘‘লুটেপুটে খাওয়ার জন্য শাসক দলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যেই ওই ধরনের ঘটনা ঘটেছে।’’ তৃণমূলের জেলা কোর কমিটির মুখপাত্র বিকাশ রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘একটা ঝামেলা হয়েছে শুনেছি। কী কারণে ওই ঝামেলা তা খোঁজ নিয়ে দেখে কোর কমিটিতে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব। কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না বিরোধীরা।’’