টহলদারি: সংঘর্ষের পরে গ্রামে পুলিশ। বৃহস্পতিবার বামদেবপুরে। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম
পুরনো বিবাদকে কেন্দ্র করে দুই গোষ্ঠীর অশান্তিতে উত্তেজনা ছড়াল মাড়গ্রাম থানার বামদেবপুর গ্রামে। উত্তেজনার জেরে দেদার বোমাবাজি হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে খবর।
পুলিশ ও এলাকার বাসিন্দারা জানান, বৃহস্পতিবার ভোর থেকে ওই গ্রামে বোমাবাজি শুরু হয়। দফায় দফায় বোমাবাজি চলে। সকাল এগারটা পর্যন্ত গোটা গ্রাম জুড়ে দু-পক্ষ বোমা নিয়ে পরস্পরকে আক্রমণ করে। প্রথম দিকে বোমাবাজির দাপটে পুলিশ গ্রামে ঢুকতেই পারেনি। পরে বেলার দিকে পুলিশ গ্রামের ভিতরে ঢোকে। পুলিশের সামনেই বোমাবাজি চলে। দুপুর বারোটার পরে রামপুরহাটের এসডিপিও সৌম্যজিত বড়ুয়ার নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ বাহিনী গ্রামে ঢুকে তল্লাশি শুরু করে। পুলিশি তল্লাশির জেরে বোমাবাজি বন্ধ হলেও সকাল থেকে দীর্ঘক্ষণ বোমাবাজিতে গ্রামের মানুষ আতঙ্কিত হয়ে ঘর বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান। পুলিশ গ্রামের মধ্যে রীতিমতো চিরুনি তল্লাশি চালায়। তাজা বোমা ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার হয়।
বীরভূমের পুলিশ সুপার শ্যাম সিংহ বলেন, ‘‘পুরনো বিবাদের জেরে সরষে কাটাকে কেন্দ্র করে দু-পক্ষ বোমাবাজি করেছে বলে জানা গিয়েছে। ঘটনায় তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রামে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশ কিছু বোমাও উদ্ধার করেছে।’’ এলাকার বিধায়ক তথা মন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বামদেবপুরের ঘটনা সরষে কাটাকে কেন্দ্র করে নিছক পারিবারিক গণ্ডগোল। এর সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই।’’ মন্ত্রী বা পুলিশ সুপার যাই বলুন, গ্রামবাসীদের অভিযোগ, এই বোমাবাজির পিছনে রয়েছে ক্ষমতা দখলের লড়াই।
এ দিন দুপুরে গ্রামে গিয়ে দেখা যায় গ্রামের স্কুল পাড়া এবং উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্র সংলগ্ন প্রায় কোনও বাড়িতে লোক নেই। ফাঁকা বাড়িতে আসবাবপত্র আছে। রান্নার জিনিসপত্রও ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। অরক্ষিত ঘর ফেলে পালিয়ে গিয়েছেন বাসিন্দারা। বিভিন্ন জায়গায় বোমা বাঁধার সরঞ্জাম পড়ে থাকতে দেখা যায়। পুলিশ দিনভর টহল দিয়েছে গোটা গ্রাম জুড়ে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কংগ্রেস থেকে নির্বাচিত দুবারের পঞ্চায়েত সদস্য পূর্ণচন্দ্র মণ্ডল ২০১৩ সালে পঞ্চায়েত ভোটে সিপিএমের রাজ্যধর মালের কাছে পরাজিত হন। পূর্ণচন্দ্র পরবর্তীতে তৃণমূলে যোগ দেন। তখন থেকেই এলাকায় দুই গোষ্ঠীর বিবাদ তীব্র হয়। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে পূর্ণচন্দ্র তৃণমূল থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়ে দখলবাটি পঞ্চায়েতের সদস্য হন। তাঁর দাবি, ‘‘বিশ্বকর্মা পুজোর বিসর্জনে হুক করে ডিজে বক্স বাজানোকে কেন্দ্র করে কাকা ভাইপোর মধ্যে মারামারি হয়। গ্রামের বিজেপি কর্মীরা অশান্তি শুরু করেন। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আমার বাড়িতেও বোমা ছোঁড়া হয়।’’ অন্যদিকে, গ্রামের প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্য রাজ্যধর মাল বলেন, ‘‘পরশু পূর্ণচন্দ্রের লোকেরা বোমাবাজি করে। এলাকাবাসী ক্ষেপে ওঠে। সেই ক্ষোভের জেরেই এ দিন সকালে বোমাবাজি হয়।’’ পুলিশ পূর্ণচন্দ্রের বাড়ির কাছাকাছি এলাকা থেকে দুটি তাজা বোমা উদ্ধার করে।
এদিকে গ্রামবাসীরা জানান, গ্রামের ভিতরে রাস্তা এখনও ঢালাই হয়নি। মণ্ডল পাড়ার রাস্তা এখনও কোথাও মাটির কোথাও বা মোরামের। সেই সব দিকে পঞ্চায়েত সদস্যদের নজর নেই। একদল বোমা ছুঁড়লেই পাল্টা বোমা ছোঁড়ায় ব্যস্ত আরেক পক্ষ। আইন শৃঙ্খলার অবনতিতে এর আগেও দুবার ওই গ্রামে পুলিশ ক্যাম্প করা হয়েছিল। তিন দিন আগেও এখানে পুলিশ ক্যাম্প ছিল। সেটি তুলে নেওয়াতেই ক্ষমতা প্রদর্শনের লড়াই শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ গ্রামবাসীদের।