শাসকদলের প্রতিনিধিদের ঘিরে বিক্ষোভ, বিরোধী দলগুলির আক্রমণ— সারা দিন অভূত পূর্ব সব ঘটনা ঘটল রাজ্য রাজনীতি তোলপাড় করা বগটুইয়ে। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
এক বছর হল বীরভূমের রামপুরহাট থানার বগটুইয়ে হাড়হিম করা ঘটনার। বড়শাল গ্রামের তৃণমূলের উপপ্রধান ভাদু শেখকে বোমা মেরে খুন এবং তার অব্যবহিত পরে ১০ গ্রামবাসীর পুড়ে মারা যাওয়ার এক বছর পর মঙ্গলবার শাসকদলের প্রতিনিধিদের ঘিরে বিক্ষোভ, বিরোধী দলগুলির আক্রমণ— সারা দিন অভূত পূর্ব সব ঘটনা ঘটল রাজ্য রাজনীতি তোলপাড় করা বগটুইয়ে।
বুধবার রাজ্যের ডেপুটি স্পিকার তথা রামপুরহাটের বিধায়ক আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বগটুই গ্রামে নিহতদের বাড়িতে গিয়েছিলেন। কিন্তু তৃণমূল বিধায়ক এবং তাঁর প্রতিনিধিদের ঘিরে বিক্ষোভ শুরু হয়। পরে জল দিয়ে ধুয়ে ওই স্থান ‘পবিত্র’ করেন নিহতদের পরিবারের লোকজন।
বগটুইয়ে শুভেন্দু অধিকারী।—নিজস্ব চিত্র।
বগটুইয়ে ‘শহিদ বেদি’তে মাল্যদান করে জনসভা করেন বিজেপি নেতৃত্ব। সেখান থেকে শাসকদল এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। নন্দীগ্রামের বিজেপি বিধায়কের পাশে মিহিলাল শেখের আত্মীয়দের দেখা যায়। শুভেন্দু জানান, বগটুইয়ে মৃতদের পরিবারের দায়িত্বভার তিনি নিচ্ছেন। মৃতদের সন্তানদের পড়াশোনার খরচ তাঁরা বহন করবেন। পাশপাশি ডেপুটি স্পিকারকে ঘিরে বিক্ষোভ নিয়ে শুভেন্দুর টিপ্পনী, ‘‘মৃতের পরিবারের লোকজনেরা তৃণমূলকে প্রত্যাখ্যান করেছেন।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘মৃতদের পরিবারগুলি কেমন আছে, গত এক বছর কোনও খোঁজ রাখেনি তৃণমূল। আমরা এই গ্রামে ভোট চাইতেও আসিনি। আমরা ভোট পাইনি। কিন্তু তৃণমূল?’’
বগটুইয়ে মহম্মদ সেলিম। —নিজস্ব চিত্র।
বগটুইয়ে গিয়ে মৌন মিছিল করেছে বামেরা। মিছিলে নেতৃত্বে ছিলেন দলের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। বগটুই মোড় থেকে বগটুই গ্রামের ভেতর হয়ে সেই মিছিল আবার ঘুরে বগটুই মোড়ে শেষ হয়। সেলিমের কটাক্ষ, ‘‘কলকাতার পাশাপাশি এই রামপুরহাটেও এক ভাইপো আছেন (মনে করা হচ্ছে সেলিমের আক্রমণ আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপোর উদ্দেশে), তিনি এখানে তোলাবাজি চালাচ্ছেন। আর যাঁরা বগটুইয়ে মারলেন এবং যাঁরা মরলেন তাঁরা সবাই তৃণমূল। কিন্তু দোষীদের এখনও শাস্তি হল না।’’ মৃতের পরিবারদের সমবেদনা জানিয়ে সেলিমের ঘোষণা, ‘‘যত দিন না পর্যন্ত দোষীরা শাস্তি পাচ্ছে, তত দিন পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাব আমরা।’’
প্রসঙ্গত, বগটুই মামলার তদন্ত করছে সিবিআই। এখনও বেশ কয়েক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বুধবার রাজনৈতিক দলগুলোর সমাবেশ দেখে স্থানীয়দের কেউ কেউ বলছেন, ‘‘সবই হল। বিচারটা যেন হয়।’’