চলছে শোলার অলঙ্কার বানানোর কাজ। নিজস্ব চিত্র।
পোলিয়ো কেড়ে নিয়েছে এক জনের চলার ক্ষমতা, অন্য জনের কাজ করার শক্তি। সব প্রতিকূলতা দূরে সরিয়ে দুর্গা-কালীর শোলার সাজ তৈরি করে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন প্রতিবন্ধী দম্পতি।
বীরভূমের আমোদপুর স্কুলবাগানপাড়ার বাসিন্দা, বছর তিরিশের হীরু বীরবংশীর একটি পা পোলিও আক্রান্ত। সোজা হয়ে চলতে পারেন না। এক টানা বেশিক্ষণ বসে থাকতেও পারেন না। ছেলেবেলায় বাবাকে হারিয়ে অর্থাভাবে অষ্টম শ্রেণির বেশি পড়া এগোয়নি। কিন্তু, মনের মধ্যে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর অদম্য জেদ ছিল। সেই জেদের বশেই কীর্ণাহারের বিশিষ্ট শোলাশিল্পী অনন্ত মালাকারের কাছে কাজ শিখে হীরুবাবু প্রতিমার সাজ তৈরি করা শুরু করেন। স্ত্রী শম্পাদেবীকেও শিখিয়ে নিয়ে শামিল করেন ওই কাজে। শম্পাদেবীর একটি হাত পোলিয়ো আক্রান্ত। তবুও প্রতিবন্ধতা জয় করে ওই কাজ করে চলেছেন তাঁরা।
ওই দম্পতি মূলত তৈরি করেন কালীর সাজ। বরাত অনুযায়ী বছরে ৫-৬টি কালীর এবং ৬-৭টি দুর্গা প্রতিমার সাজ তৈরি করেন। তাঁদের হিসেব অনুযায়ী , কালীর সাজসেট তৈরি করতে শোলা, জরি, চুমকি, আঠা, রাংতা মিলিয়ে প্রায় দু’হাজার টাকার কাঁচামাল লাগে। বিক্রি হয় চার থেকে সাড়ে চার হাজারে। একটি সাজ তৈরি করতে দু’জনের সময় লাগে গড়ে ১০ দিন। দুর্গাপ্রতিমার সাজ তৈরিতে অবশ্য দিন কুড়ি-পঁচিশ লেগে যায়। শোনার কাজ করেই এখন এক মাত্র ছেলের পড়াশোনা, বৃদ্ধা মায়ের চিকিৎসা-সহ পাঁচ সদস্যের সংসার চলে তাঁদের।
স্থানীয় বাসিন্দা রোহিত বীরবংশী, সন্তোষ সাহানি, বুলু বীরবংশীরা বলেন, ‘‘ছোট থেকেই হীরুকে প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করতে দেখেছি। তার উদ্যম দেখে কাঁচামাল কেনার জন্য মাঝেমধ্যে ধার দিয়েছি। হীরু যথাসময়ে তা শোধও করে দিয়েছে।’’ হীরুর কথায়, ‘‘ছেলেবেলায় বাবাকে হারিয়ে মাথার উপর আকাশ ভেঙে পড়েছিল। তার উপরে ছিল শারিরীক প্রতিবন্ধকতা। মা খুব কষ্ট করে আমাকে মানুষ করেছেন। মনের মধ্যে একটা জেদ ছিল, যে করেই হোক মায়ের কষ্ট দূর করব। মায়ের সাজ গড়েই আজ মায়ের মুখে হাসি ফোটানো সম্ভব হয়েছে।’’