গ্রামে পুলিশ ক্যাম্প। নিজস্ব চিত্র।
বাবা-ছেলের খুনের রহস্যভেদে সিআইডি-র সাহায্য নেবে পুরুলিয়া জেলা পুলিশ। শনিবার রাতে পুরুলিয়া মফস্সল থানার কানালি গ্রামের বাসিন্দা মদন পাণ্ডে (৭৫) ও তাঁর ছেলে কানাই পাণ্ডে (৩৩)-কে খুনের ঘটনায় ইতিমধ্যে জেলা পুলিশ তদন্তে নেমেছে। তবে ঘটনায় এ পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি। জেলা পুলিশ সুপার এস সেলভামুরুগন বলেন, “তদন্তে জেলা পুলিশকে সিআইডি সহায়তা করবে।”
সে রাতে মোটরবাইকে বাড়ি ফেরার পথে গ্রামের রাস্তা,য় আততায়ীরা মদন ও কানাইকে কুপিয়ে খুন করে বলে অভিযোগ। তার পরে, এলাকাবাসীর দাবিতে রবিবার সন্ধ্যায় গ্রামের মুখে পুলিশ-পিকেট বসেছে। সোমবার গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, যেখানে রক্তাক্ত দেহ দু’টি মিলেছিল, তা ঘিরে রেখেছে পুলিশ। এ দিন গ্রামে যান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হেড কোয়ার্টার) পিনাকি দত্ত, এসডিপিও (রঘুনাথপুর) অজয় গণপতি-সহ জেলা পুলিশের কর্তারা। তাঁরা বাড়ির লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন। মদন ও কানাই চাষ মোড়ের যে পেট্রল পাম্প ও পাম্প লাগোয়া কাঁটাঘরে কাজ করতেন, সেখানেও যান তাঁরা। সূত্রের খবর, বাবা-ছেলের সঙ্গে কারও শত্রুতা ছিল কি না, কেউ কোনও হুমকি দিয়েছিল কি না বা সম্প্রতি তাঁদের সঙ্গে কারও কোনও ঝামেলা হয়েছিল কি না, সে সব নিয়ে খোঁজ-খবর চালাচ্ছেন তদন্তকারীরা।
ঘটনার দিন যে মোটরবাইকে বাবা-ছেলে বাড়ি ফিরছিলেন, সেই মোটরবাইকটির এখনও খোঁজ পায়নি পুলিশ। মেলেনি দু’জনের দু’টি মোবাইলও। যে পেট্রল পাম্পে তাঁরা কাজ করতেন, সেই পাম্প কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গিয়েছে, অন্য দিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার পরে তাঁরা বাড়ি ফিরলেও, ঘটনার দিনে পাম্প ছাড়েন ৮টার পরে। কেন এই দেরি, তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। কানাইয়ের স্ত্রী মামণি জানিয়েছিলেন, দেরি দেখে সেই রাতে তিনি স্বামীকে ফোন করলে দু’বার বেজে তা কেটে যায়। পরে, ফোন বন্ধ হয়ে যায়। শ্বশুরমশাইকে ফোন করলেও একই ঘটনা ঘটে বলে দাবি তাঁর। সেই সময়েই বাবা-ছেলে আততায়ীদের খপ্পরে পড়েছিলেন কি না, জানার চেষ্টা করছে পুলিশ। পাশাপাশি, পেট্রল পাম্পে দিনভর বিক্রির নগদ টাকা হাতানোর মতলবে এই খুন কি না, তা-ও খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। মদনবাবুর মেয়ে ভবানীদেবী বা কানাইয়ের স্ত্রী মামণিদের তবে দাবি, ঘটনার পিছনে ষড়যন্ত্র রয়েছে।
জাতীয় সড়কের আইমণ্ডি মোড় থেকে লেভেল ক্রসিং পার হয়ে কানালি গ্রাম পর্যন্ত যে রাস্তাটি গিয়েছে, তা ধরে সরাসরি ঝাড়খণ্ডে পৌঁছনো যায়। গ্রামের চৌহদ্দি থেকে ঝাড়খণ্ডের দূরত্বও কম-বেশি তিন-চার কিলোমিটার। তবে ঝাড়খণ্ড যেতে গ্রামের মধ্যে দিয়েই যেতে হয়। মদনবাবুর ভাইপো জগন্নাথ পান্ডে বলেন, “সে রাতে গ্রামের কেউই একটা বা দু’টো মোটরবাইক গ্রামের রাস্তা দিয়ে ঝাড়খণ্ডের দিকে যেতে দেখেনি। কারণ, ওই রাতে গ্রামে ফেরার পথে দীপেন মাহাতো নামে গ্রামেরই এক যুবক ওই রাস্তায় মোটরবাইক নিয়ে দুষ্কৃতীদের খপ্পরে পড়েছিলেন। গ্রামে পৌঁছে ওই যুবকই জানান যে, ফাঁকা রাস্তায় ছিনতাইয়ের মতলবে দুষ্কৃতীরা জড়ো হয়েছে। কিছু পরে লোকজন সেখানে গিয়ে দেখেন, যে দু’জনের রক্তাক্ত দেহ পড়ে রয়েছে।”
দুষ্কৃতীদের অবয়ব আঁকানোর জন্য পুলিশ তাঁর সাহায্য নিলেও অন্ধকারে তিনি কাউকেই চিনতে পারেননি বলে পুলিশকে জানিয়েছেন বলে সূত্রের খবর। এ দিকে, গ্রামে ঢোকার আগে আরও একটি রাস্তা রয়েছে, যেটি ধরে বুড়িডি, ভুঁইয়াডি হয়ে ঝাড়খণ্ডে পৌঁছনো যায়। সে রাস্তা ধরেও দুষ্কৃতীরা কুকর্ম করে ঝাড়খণ্ডে গা ঢাকা দিয়ে থাকতে পারে বলে অনুমান। পুলিশ সুপার বলেন, “যেহেতু গ্রামের ও পারে ঝাড়খণ্ড ও আততায়ীরা ঝাড়খণ্ডের দিকে পালিয়ে গিয়ে গা ঢাকা দিয়ে থাকতে পারে, তাই ঝাড়খণ্ড পুলিশের সহায়তা নেওয়া হচ্ছে।”