বিয়ের জন্য জোরাজুরি করছিল পরিবার। কিন্তু, বাড়ির মতের বিরুদ্ধে গিয়ে পড়তে চেয়ে বাড়ি ছেড়েছে তেরো বছরের যমুনা মুদি। গত শনিবার থেকে শিশু পড়ুয়াদের একটি আবাসিক স্কুলে আশ্রয় নিয়েছে পুঞ্চার মুদিডি গ্রামের বাসিন্দা ওই সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। সংবাদমাধ্যম খোঁজ নেওয়া শুরু করতে পুলিশ ও প্রশাসনিক মহলে ব্যস্ততা বাড়ে। পুঞ্চার বিডিও-র নির্দেশে বুধবার ওই নাবালিকার খোঁজ নিতে স্কুলে পুলিশ গিয়ে হাজির হয়।
মুদিডি গ্রামেরই শবর শিশুদের ওই আবাসিক স্কুলের কর্মী শিবনাথ মাহাতো ওরফে লেকু বলেন, ‘‘বুধবার সন্ধ্যা নাগাদ আমাদের স্কুলের সামনে পুলিশ গাড়ি দাঁড়ায়। কয়েক জন পুলিশকর্মী নেমে যমুনার সাথে কথা বলেন। কিন্তু, পুলিশ দেখে স্কুলের শিশু পড়ুয়ারা ভয় পেয়ে গিয়েছিল।’’ শবর জনজাতি নিয়ে কাজ করা মানুষজনের মতে, সমাজের মূল স্রোতে ফেরানোর জন্য সরকারি স্তরে উদ্যোগ থাকলেও ওই সম্প্রদায়ের মধ্যে এখনও পুলিশভীতি পুরোপুরি কাটেনি। পুঞ্চার লৌলাড়া রামানন্দ সেন্টিনারি কলেজের অধ্যক্ষ চণ্ডীদাস মুখোপাধ্যায় শবর জনজাতি নিয়ে কাজ করেছেন। তাঁর মতে, ‘‘খুদে পড়ুয়ারা তো পুলিশ দেখে ভয় পেতেই পারে। ওই স্কুলে পুলিশকর্মীরা সাদা পোশাকে গেলেই পারতেন।’’ আবার পশ্চিমবঙ্গ খেড়িয়া শবর কল্যাণ সমিতির প্রকল্প আধিকারিক প্রশান্ত রক্ষিতের মতে, স্কুলে না গিয়ে যমুনার বাবা-মাকে দিয়ে ডেকে পাঠিয়ে যমুনার সঙ্গে কথা বলতে পারত পুলিশ।
বৃহস্পতিবার যমুনার বাবা ভীষ্ম মুদি ও মা প্রতিমা মুদি নবদিশা স্কুলে এসে মেয়ের সঙ্গে দেখা করেন। ভীষ্মবাবু জানান, বুধবার রাতে পুলিশ তাঁদের বাড়িতেও গিয়েছিল। কেন, কী ভাবে মেয়ে ওই আবাসিক স্কুলে আশ্রয় নিয়েছে, তা পুলিশকে তিনি জানিয়েছেন। প্রতিমাদেবী বলেন, ‘‘আমার মেয়ে ভাল আছে। যতদিন ওর ইচ্ছে, ওখানে থেকে পড়া চালিয়ে যাক।’’ বিডিও সুপ্রতীক সিংহ এ দিন বলেন, ‘‘যমুনার বিষয়ে পুলিশকে আমি খোঁজ নিতে বলেছিলাম। আমি এখন বাইরে আছি। কী ধরনের সাহায্য পেলে মেয়েটি পড়া চালিয়ে যেতে পারবে, পুঞ্চায় ফিরে তা নিয়ে যমুনা আর ওর বাবা-মার সঙ্গে কথা বলব।’’